• ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

হবিগঞ্জে দুই লাখ টাকার লোভে বন্ধুর স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত মার্চ ২১, ২০২১
হবিগঞ্জে দুই লাখ টাকার লোভে বন্ধুর স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা

 

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হবিগঞ্জের বাহুবলে আলোচিত মা-মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। দুই লাখ টাকার জন্য সংঘবদ্ধ দলের সহযোগিতা নিয়ে বন্ধুর স্ত্রী ও সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করেছেন আমির হোসেন।

আদালতে দেওয়া আমির হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা।

শনিবার (২০ মার্চ) রাতে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়নের লামাপুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা সবজি ব্যবসায়ী সঞ্জিত দাশ। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে স্থানীয় দ্বিগম্বর বাজারের আব্দুল মোমিন তালুকদারের তিন তলা ভবনের উপরের তলায় ভাড়া থাকতেন। একই ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন ওই বাজারের সবজি শ্রমিক আমির হোসেন। একই ভবনে থাকার সুবাদে আমির হোসেন ও সঞ্জিত দাশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

সম্প্রতি সঞ্জিতের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা ধার নেন আমির হোসেন। এ সময় সঞ্জিত দাশের ঘরে দুই লাখ টাকা জমা ছিল। টাকা ধার নেওয়ার সময় বিষয়টি টের পান আমির হোসেন। সেই থেকে আমির ফন্দি আঁটেন কীভাবে ওই টাকা লুট করা যায়। এরই মধ্যে বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে ব্যবসায়িক কাজে সুনামগঞ্জে যান সঞ্জিত দাশ। এ সুযোগে ওই টাকা লুটের পরিকল্পনা করেন আমির। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজের স্ত্রী-সন্তানকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন তিনি। পরিকল্পনার সঙ্গী করেন আরও দু’জনকে।

ঘটনার দিন আমির হোসেন, সঞ্জিত দাশের স্ত্রী অঞ্জলি মালাকার ও তার শিশুকন্যা পূজা দাশ ছাড়া পুরো ভবনে আর কেউ ছিল না। বুধবার রাত সাড়ে ৩টায় ভবনের বিদ্যুতের মেইন সুইচের সংযোগ কেটে দেন আমির হোসেন ও তার সঙ্গীরা। এ সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী সঞ্জিত দাশকে ফোন করে চুরির ঘটনা সাজান আমির হোসেন। এরপর অঞ্জলিকে ফোন করে আমির হোসেন বলেন, ‘আমার বাসা চুরি হয়েছে, বউদি দরজাটি খুলুন।’ অঞ্জলি তখন দরজা খুলে দেন। এরপরই অঞ্জলি ও তার মেয়ে পূজাকে হত্যা করে ঘরে রক্ষিত ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তারা।

ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নিজের হাত নিজেই কেটে আহত সেজে পাশের জমিতে পড়ে থাকেন আমির। পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সকালে সুনামগঞ্জ থেকে ফিরে স্ত্রী-সন্তানের রক্তমাখা লাশ দেখতে পান সঞ্জিত দাশ। সঞ্জিত দাশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমির হোসেনকে আটক করে পুলিশ। এরপর সঞ্জিত দাশ বাদী হয়ে বাহুবল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় আমির হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরে আমির হোসেনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী অঞ্জলি মালাকারের ব্যবহৃত মোবাইল, রক্তমাখা ছুরি ও নগদ ৮৫০ টাকা উদ্ধারসহ অপর সহযোগী মনিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে তাদের আরেক সহযোগী এখনও পলাতক রয়েছে।

পুলিশ জানায়, আমির হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। আর মনির মিয়াকে আজ রোববার (২১ মার্চ) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে।