• ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

দিরাই শাল্লা সড়কের নির্মানাধীন দুটি সেতু ফসল রক্ষা বাঁধের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
দিরাই শাল্লা সড়কের নির্মানাধীন দুটি সেতু ফসল রক্ষা বাঁধের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে
লতিফুর রহমান রাজু.সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই ও শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওর ও দাড়াইন নদীর পাশেই গত দুই মাস আগ থেকেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুটি সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে।  এদিকে গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ৭৩৩টি পিআইসির মাধ্যমে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বোরো ফসল রক্ষার জন্য বাধঁ নির্মাণ কাজ ও চলছে।  আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সকল হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার কথা।  কিন্ত সেতু দুটি নির্মাণ করতে গিয়ে গর্ত করার ফলে নীচু হয়ে গেছে। এতে ছায়ার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ গুলো হুমকির সম্মুখীন হয়েছে এমন আশংকা করছেন এলাকার মানুষ ।

শাল্লা উপজেলার সুখলাইন গ্রামের পাশে ২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের নির্মানাধীন সেতুর ঠিক পাশেই দাড়াইন নদী। একই সড়কের নোয়াগাও গ্রামের পাশেই আরেক টি সেতুর কাজ চলছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ দুটি সেতুর কাজ এমন সময় করা হচ্ছে যখন ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ চলমান। সেতুর দুটোর এক পাশে হাওর অন্য পাশে নদী।  এছাড়াও সেতুর কাজ চলমান থাকায় বিকল্প সড়ক বা ডাইভারশন যেটি করা হয়েছে সেটি ফসল রক্ষা বাঁধের লেভেল থেকে অন্তত দুই ফুট নীচু।  হাওরের বাঁধের লেভেল ছয় ফুট আর ডাইভারশন চার ফুট। ফলে এই নীচু এলাকা দিয়ে অনায়াসেই পানি প্রবেশ করবে।  এতে বিশাল ছায়ার হাওরের ফসল হুমকির মুখে থাকবে।

শাল্লা উপজেলার সুখলাইন গ্রামের কৃষক অপু চন্দ্র দাস ও বিধান চৌধুরী বলেন, তাদের গ্রামের পাশ দিয়ে ফসলরক্ষা বাঁধের যে রাস্তাটি গেছে তার একপাশে দাঁড়াইন নদী আর অপরপাশে ছায়ার হাওর।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চার জেলা নিয়ে বিস্তৃত ছায়ার হাওরে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর সুনামগঞ্জের শাল্লায় ও দেড় হাজার হেক্টর দিরাইয়ে, ৯০০ হেক্টর নেত্রকোণার খালিয়াজুড়িতে, দেড়শ হেক্টর কিশোরগঞ্জের ইটনা ও মিঠামইনে এবং কিছু হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জে রয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই হাওরটির ফসলরক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬৪টি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠন করে কাজ শুরু করেছে। তবে সেতু নির্মাণের স্থানে তিন মাস ধরে কাজ হলেও সেখানে কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দিরাই উপজেলার শাল্লা সেতু থেকে ১৯ কিলোমিটার দিরাই-শাল্লা পুরনো আঞ্চলিক কাজ শুরু হয়েছে। ৬২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক সড়কে কাজ চলছে।

শাল্লা উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে  জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে উপজেলায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ১৩১টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ৮৪ দশমিক ২৮৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, সংস্কারে ব্যয় হবে প্রায় ২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ছায়ার হাওরেই ৬৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু বলেন, এবার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের উচ্চতা (ওয়াটার লেভেল) ছয় ফুট ধরা হয়েছে। সড়ক বিভাগ দুটি স্থানে সড়ক কেটে যে সেতু বানাচ্ছে সেখানে ডাইভারশন দিয়েছে চার ফুট। যা ওয়াটার লেভেলের দুই ফুট নিচে।

“কাটা অংশ সম্পূর্ণ অরক্ষিত। এখানে কোনো প্রকল্প না নেওয়ায় পানি ডুকে হাওর তলিয়ে যাবে। কেউ বিষয়টি নজরে আনল না। অবিলম্বে এখানে প্রকল্প দিয়ে চার জেলার কৃষকের ফসলরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

শাল্লা উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত সেন বলেন, “সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বাঁধ মেরামতে। আবার আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে কাটা হলো পুরনো সড়ক। যেটি হাওরের বাঁধ হিসেবে ফসল সুরক্ষা দিত। এখন সেতু নির্মাণের জন্য মাটি কেটে ফেলায় হাওর অরক্ষিত থাকছে। এখানে ফসলরক্ষার জন্য ছায়া-বাঁধ জরুরি। না হলে কৃষকের সর্বনাশ হয়ে যাবে।”

শাল্লা উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার রিপন আলী বলেন, “সেতুর কাজ করার ফলে দেড় দুই ফুট ডাউন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্ম কর্তা ও সড়ক বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্ম কর্তা গণ সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন এবং রিভাইজ করে মাটি ভরাট করে ডিজাইন লেভেল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আশা করি খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মঞ্জুর আহসান জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা হয়েছে এখানে দ্রুত মাটি ভরাট করা হবে।

সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের এস ও মুস্তাফিজুর রহমান জানান আমরা গত দুই মাস আগেই কাজ শুরু করি। আমাদের কেউ কিছু বলেন নি। আমাদের সড়ক বিভাগের ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং ডিডি এলজি সহ পরিদর্শন করেছেন এবং আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসক কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রিভাইজ করে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে দ্রুত কাজ করার।

সুনামগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক ও হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক বিভাগের সাথে কথা হয়েছে। এখানে একটি প্রজেক্ট নিয়ে খুব শীঘ্রই কাজ করা হবে।