• ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সুনামগঞ্জ সীমান্তে হত্যার মিছিল দিন দিন বাড়ছেই.সীমান্ত রক্ষীরা নীরব

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত এপ্রিল ১৬, ২০২৪
সুনামগঞ্জ সীমান্তে হত্যার মিছিল দিন দিন বাড়ছেই.সীমান্ত রক্ষীরা নীরব

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ:সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত এখন ভারতীয় কয়লা চোরাচালানের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।  তাহিরপুর সীমান্তকে চোরাচালানের নিরাপদ রোট হিসাবে ব্যবহার করে স্থানীয় বেশ কয়েকটি কয়লা চোরাকারবারি সিন্ডিকেট চক্র  সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতি রাতেই ভারত থেকে চোরাই পথে নিয়ে আসছে হাজার হাজার বস্তা ভারতীয় চোরাই কয়লা। আর ওইসব অবৈধ কয়লা চোরাকারবারিদের খপ্পরে পড়ে স্থানীয় দরিদ্র মানুষজন অবৈধ পথে ভারত থেকে চোরাই কয়লা আনতে গিয়ে প্রায়ই  মৃত্যুর শিকার  হচ্ছে  । সাম্প্রতিক কালে  বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ যেন দেখার কেউ নেই!  ওইসব অবৈধ চোরাই কয়লার চোরাচালান বন্ধে প্রশাসনের  নেই কোন কর্যকরি উদ্যোগ।  সীমান্ত  রক্ষী  বাহিনীর তৎপরতা ও খুব একটা জোরালো  না থাকার ফলে দিন দিন  মৃত্যুর মিছিল  দীর্ঘ থেকে  দীর্ঘতর  হচ্ছে। যার ফলে তাহিরপুর সীমান্ত সহ অন্যান্য সীমান্ত এলাকা এখন চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য ও ঘাঁটিতে পরিনত হয়েছে।
যারা মারা গেছেন তারা বাহক কিন্ত সিন্ডিকেটের গড ফাদার গণ বরাবরই থাকে ধরাছোয়াঁর বাইরে।
স্থানীয় এসব চোরাকারবারি সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য  কলাগাঁও গ্রামের রৌফ মিয়া. বড়ছড়ার  ইছাক মিয়া,  লালঘাটের মাদক  কালাম,  গংদের ছত্রছায়ায় তাহিরপুর উপজেলার রজনী লাইন, টেকেরঘাট, লাকমা, চারাগঁও, কলাগাও- বাশতলা, বিরেন্দ্রনগর ও বাগলী সীমান্ত এলাকা।

গত ৭ এপ্রিল ২০২৪ রবিবার ভোর রাতে চারাগাঁও সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে ভারতীয় সীমান্তের কাটা তারের বেড়া পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবৈধ পথে কয়লা আনতে গিয়ে লালঘাটের  মুছা মিয়া. বাচ্চু মিয়া ও শরিফুল সহ একদল লোক গুহার দখল নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। পরে চারাগাঁও বালুচর এসে মুছা মিয়া ও রাজা মিয়ার মধ্যে আবার সংঘর্ষ হয়।  এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। গুরুতর আহত জজ মিয়াকে সিলেট পাঠালে সে মারা যায়।
গত ৮ এপ্রিল সোমবার চাঁনপুর সীমান্তে চোরাই কয়লা আনতে গিয়ে ভারতের কালা পাথর এলাকায় গুহার পাথর চাপায় চাঁনপুর গ্রামের মৃত কালা মিয়ার পুত্র বাবুল মিয়ার মৃত্যু হয়।
১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চাঁনপুর ও টেকেরঘাট সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১২০০ সংলগ্ন এলাকার রজনী লাইনে গুহার পাথর চাপায় গুচ্ছগ্রামের সেকান্দার আলীর পুত্র হাসেন আলী (৩৮) মারা যান।
 দিয়ে চোরাই পথে সীমান্তের ওপারে ভারত থেকে চোরাই কয়লা আনতে গিয়ে বিগত (১৪ জানুয়ারি ) ট্যাকেরঘাট সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ এর গুলিতে দেলোয়ার হোসেন(২৮)  নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
গত শুক্রবার (২৯সেপ্টেম্ভর ,২০২৩) ভোরে লাউড়,,,গড় বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে পাথর ও কয়লা পাচাঁরের সময় বিএসএফের তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে শ্রমিক কাছম আলী (৬০) মারা যায়।
তার আগে গত ৩আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ভোরে একই ভাবে যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে পাথর পাচাঁরের সময় নৌকা ডুবে আব্দুল হাসিম (৩৫) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
এছাড়া গত ৫আগস্ট (শনিবার) দুপুরে বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমাছড়া এলাকা দিয়ে ভারত থেকে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে গর্তে পড়ে আক্তার হোসেন (১৬) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়।
গত (০৩ অক্টোবর ,২০২৩ ) রাতে ট্যাকেরঘাট সীমান্ত রজনী লাইন গারো বস্তি এলাকায় দিয়ে ভারতের কালা পাহাড়ে চোরাই পথে কয়লা আনতে গিয়ে বিএসএফের তাড়া খেয়ে পাথার চাপায় আফজর আলী(৩৫) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়।
বিগত ১৭ এপ্রিল ২০২৩  বালিয়াঘাট সীমান্ত ফাঁড়ির লাকমা এলাকা দিয়ে ভারতীয় চোরাই কয়লার কোয়ারী থেকে চুরি করে কয়লা আনতে গিয়ে কোয়ারীর মাটি চাপা পড়ে অনিক মিয়া (২০) নামের আরেক বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
গত (০৪ অক্টোবর) ট্যাকেরঘাট সীমান্ত  রুবেল মিয়া(২৮) নামের এক বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আমজাদ আলী(৩০) নামের অপর আরেক যুবক গুরুতর আহত হয়েছে।
গত (১৩ অক্টোবর ২০২৩ শুক্রবার) বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা সীমান্ত চোরাই পথে অবৈধভাবে ভারতের ভিতরে থেকে কয়লা আনতে গিয়ে চোরাই কয়লা কোয়ারীর(গুহার) মাটি চাপায় সুনাম মিয়া(২০) নামের এক বাংলাদেশী যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে আটক হয়েছে ৫ বাংলাদেশী । এবং ভারতীয় চোরাই কয়লার বস্তার ভাগবোটোয়ারা নিয়ে সীমান্তে বেশ কয়েকটি চোরাচালানকারী সিন্ডিকেট গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এপর্যন্ত বিজিবি সদস্যসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে- পাচাঁরকৃত অবৈধ ১বস্তা কয়লা (৪০কেজি) থেকে  বিজিবি ক্যাম্পের নাম ভাংগিয়ে , বড়ছড়া শুল্কস্টেশনে নাম ভাংগিয়ে পুলিশ ও ডিবি ও সাংবাদিকদের  নাম ভাঙগিয়ে সোর্স  গণ চাঁদা নেয় এমন  অভিযোগ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও বৈধ কয়লা ব্যবসায়ীরা। পরে এই টাকা

কোথায় যায় আল্লাহ মালুম। অভিযোগ রয়েছে সব পক্ষকে ম্যানেজ করেই এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড ঘটছে সীমান্তে। পুলিশ সুপার ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ এহসান শাহ জানান আমরা আমাদের সীমানার মধ্যে কাজ করছি. বড় বড় চালান ও পুলিশ আটক করেছে। বিজিবির অধিনায়ক কে একাধিক বার ফোন দিয়ে ও পাওয়া যায়নি।
শুধু তাই নয়! গত ২০২০ সালের ২২শে অক্টোবর রাতে চোরাই পথে ভারত থেকে কয়লা আনার সময় গত বছর উপজেলার লাউড়েরগড় সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবি সদস্যরা বাঁধ দিলে বিজিবি ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এসময় চোরাকারবারিদের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিজিবি সদস্যদের মধ্যে দাওয়া পাল্টা দাওয়া শুরু হয়। এতে বিজিবির দুই কর্মকর্তা, সৈনিক ও শিশুসহ ১০জন আহত হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি ১১ রাউন্ড এস এম জির ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে।
সীমান্তের অনেকেই জানান,
তাহিরপুর সীমান্তের ওইসব প্রভাবশালী চোরাকারবারি সিন্ডিকেট চক্রের নিয়জিত লোকজন অবৈধ অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশের ওপারে ভারতের কায়লার গুহা থেকে চুরি করে কয়লা আনতে গিয়ে গুহার মাটি চাপা পড়ে বাংলাদেশী কয়লা শ্রমিকদের মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। ভারত থেকে চোরাই কয়লা পাচার নিয়ে এতোকিছু হাওয়ার পরেও চোরাকারবারিরা দাপটের সাথেই তাদের কয়লা চোরাচালান চালিয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে নেই কারো মাথা ব্যথা। প্রশাসনও রয়েছে নিরব ভূমিকায়। সরকার হারাচ্ছ  প্রচুর রাজস্ব।