• ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

দোয়ারাবাজারে নির্বাচনী সহিংসতায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক আহত:আটক ৯,পুলিশের শতাধিক রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত জানুয়ারি ১০, ২০২৪
দোয়ারাবাজারে নির্বাচনী সহিংসতায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক আহত:আটক ৯,পুলিশের শতাধিক রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে  নির্বাচনী  বিরোধে দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নারী পুরুষসহ শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আহতদের মধ্যে ৩০ জনেরও বেশি গুলিবিদ্ধ রয়েছে।এদের বেশিরভাগই পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হয়।
পুলিশ দু’পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে ১০ রাউন্ড টিয়ারসেল ও ১০৪ রাউন্ড শর্ট গানের গুলি ছুড়েছে, সংঘর্ষে জড়িত ৯ জনকে আটক করেছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।

ছবিঃআহত সাংবাদিক আশিক মিয়া

এদিকে সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে মারপিটের শিকার হয়ে আহত হয়েছেন দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক জাতীয় দৈনিক সংগ্রাম প্রতিদিনের দোয়ারবাজার প্রতিনিধি মাসুদ রানা সোহাগ। শামীম গ্রুপের হামলায় আহত হয়েছেন দোয়ারাবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আশিক মিয়া।সংঘর্ষ থামাতে এসে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল আবেদিন আবুল।তিনি সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

ছবি:আহত আবুল চেয়ারম্যান

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ভোট গ্রহণের দিন রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সদর ইউনিয়নের সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের মূল ফটকের সামনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুহিবুর রহমান মানিক (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী (ঈগল) সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার জেরে বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে পূর্ব মাছিমপুর গ্রামের আমরু মিয়ার পুত্র ইমরান আহমদ, শামীমসহ ২৫/৩০ জন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আবুল মিয়ার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় ভাতিজাকে রক্ষা করতে গেলে দোয়ারাবাজার প্রেসক্লাব সেক্রেটারি সাংবাদিক আশিক মিয়ার উপরও আক্রমণ করে। উপর্যপরি মারপিটে ঘটনাস্থলে মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটে পড়েন, যুবলীগ নেতা আবুল মিয়া ও সাংবাদিক আশিক মিয়া। পরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং নৈনগাঁও গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে পুলিশ সংঘর্ষ প্রতিহত করতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় পুলিশের রাবার বুলেটে গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ৩০/৩৫ জন। গুরুতর আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষে আহতরা হলেন, জাবেদ মিয়া (২৫), জুয়েল মিয়া (২৮), রুস্তম আলী (৬০), আব্দুছ সাত্তার (৪৫), সেলিম (৪৫), সুজন মিয়া (২৬), আলী নুর (২০), আক্তার হোসেন (৩২), রোয়াব আলী (৩০), ছদরুল ইসলাম (৪০), জিয়াউল (২৫), গিয়াস উদ্দিন (৩৫), ধনাই মিয়া (৫০) প্রমুখ।

উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আহত আবুল মিয়া বলেন, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা সদরে আমার বাসার সামনে গেলে পূর্ব মাছিমপুর গ্রামের আমরু মিয়া দুই পুত্রসহ আগে থেকে ওতপেতে থাকা ঈগল প্রতীকের ২৫/৩০ জন সমর্থক অতর্কিতভাবে আমার উপর হামলা চালায় এবং আমরুমিয়ার পুত্র শামীম আমাকে লক্ষ্য করে তার হাতে থাকা অবৈধ পিস্তল থেকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। এসময় আমার মোবাইল, পকেটে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। আমাকে বাঁচাতে এলে আমার চাচা সাংবাদিক আশিক মিয়াকেও পেছন দিক থেকে হামলা চালিয়ে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখমি করে। পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর ১২ টায়  দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের অবস্থিত পূর্ব মাছিমপুর ও নৈনগাঁও গ্রামবাসীর মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ফের সংঘর্ষের আশংকায় ওই দুই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ সময় সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করতে গেলে দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক জাতীয় দৈনিক সংগ্রাম প্রতিদিনের দোয়ারবাজার প্রতিনিধি মাসুদ রানা সোহাগের উপর  দোয়ারাবাজার থানার পুলিশের এসআই সম্রাজ মিয়ার হাতে মারধরের শিকার হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৭  জানুয়ারি নির্বাচনে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের পাশের গ্রাম পূর্ব মাছিমপুর ও পশ্চিম মাছিমপুরবাসীর নৌকা ও ঈগল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের জেরে গত দু’দিন থেকে উপজেলা সদরে দু’পক্ষের উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

মঙ্গলবার রাতে পূর্ব মাছিমপুর গ্রামের আমরু মিয়া’র ছেলে ঈগল মার্কার সমর্থক শামীম আহমদের সঙ্গে পাশের নৈনগাঁও গ্রামের নৌকার সমর্থক আবুল মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে আবুল মিয়ার সমর্থকরা শামীম আহমদের পূর্ব মাছিম পুরের বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে হামলায় ভাঙচুর চালায়।

পুলিশ রাতেই পরিস্থিতি শান্ত করে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেয়। সকালে আবুল মিয়া দোয়ারা বাজারের বাসভবনে এলে শামীম আহমদের লোকজন হামলা করে। এই ঘটনার খবর নৈনগাঁও গ্রামে পৌছালে আবুল মিয়ার পক্ষের নৈনগাঁও গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উপজেলা সদরে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে নারী ও রয়েছেন।  আহত দের সিলেট নেয়া হয়েছে. অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা.নিয়েছেন।

দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুল হাসান জানান. দু’পক্ষের সংঘর্ষ থামতে পুলিশ ১০ রাউন্ড টিয়ারসেল, ১০৪ রাউন্ড শর্ট গানের গুলি ছুড়ে এবং সংঘর্ষে জড়িত ৯ জনকে আটক করেছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ এহসান শাহ জানান, এ ঘটনার সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ৯ জনকে আটক করা হয়েছে।