• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

দুই কমিটি দিয়ে চলছে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যক্রম

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত আগস্ট ৩, ২০২২
দুই কমিটি দিয়ে চলছে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যক্রম

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের বিবদমান দুই কমিটি দিয়েই পৃথক পৃথক ভাবে দলীয় কার্যক্রম চলছে। এর ফলে অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিভক্তি। ফলে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগে দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। উভয় পক্ষই জেলা ও কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
২০১৫  সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট স্বাক্ষরিত ৬৭ সদস্য কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে অনুমোদন হয়েছিল। দুই বছর মেয়াদী কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর দায়িত্ব পান। ইতিমধ্যেই এই কমিটির ৫ জন সদস্য মারা গেছেন।  দীর্ঘদিন ধরেই সম্মেলন করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেও ভয়াবহ বন্যার কারণে সম্মেলন করা যায়নি। আর এতেই নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বিভিন্ন সময় এ নিয়ে কথা ওঠে। এমনকি জেলা ও কেন্দ্রের কাছে নালিশ ও করেন। শেষমেশ গত দুই মাস আগে ৫ মে ২০২২ তারিখে    তলবী সভা ডেকে তৃণমূল আওয়ামীলীগের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতেই  সভাপতি আবুল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর কে   অব্যাহতি দিয়ে জেলা ও কেন্দ্রের কাছে  অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছেন।  এরই ধারাবাহিকতায় পাল্টা  কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। এতে অধ্যাপক আলী মরতূজা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কে দায়িত্ব দেয়া হয়। কমিটি গঠনের পর জেলা ও কেন্দ্রের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় বলেও জানান হয়। এর পর থেকেই দুই কমিটির মধ্য দিয়েই পৃথক পৃথক ভাবেই দলীয় কার্যক্রম চলে আসছে। আগামী ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উদযাপন করার লক্ষে দুই কমিটির পক্ষ থেকেই প্রস্তুতিমূলক সভা করে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। গত ১ আগষ্ট তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের একাংশের সভাপতি অধ্যাপক আলী মরতূজার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় জাতীয় শোক দিবস পালন করার জন্য নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর খোকন,এখলাছুর রহমান তারা, দপ্তর সম্পাদক রমেন্দ্র নারায়ণ বৈশাখ সহ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অপরদিকে ২ আগষ্ট এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সভাপতি আবুল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে ও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করার জন্য দলীয় নেতা কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন।  ফলে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রকাশ্যেই বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে যে কোন সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনার আশঙ্কা ও করছেন অনেকেই।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান জানান সম্মেলনের মধ্য দিয়েই আমাদের কমিটির অনুমোদন হয় এবং আমরা সব সময়ই জাতীয় ও স্হানীয় কর্মসূচি পালন করে আসছি। সম্মেলন করার জন্য তারিখ ও নির্ধারণ করা হয় কিন্ত দুর্যোগের কারণে নতুন কোন তারিখ হয়নি । একটি পক্ষ স্বঘোষিত ভাবেই কমিটি গঠন করেছেন তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও দলীয় শৃংখলা পরিপন্থী। আমরা জেলা ও কেন্দ্রের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।  এদিকে অপর পক্ষের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানান কমিটি গঠনের পর থেকেই দলীয় কোন কর্মকান্ড নেই। গনতন্ত্র মোতাবেক কোন কার্যক্রম হয়না। ইউনিয়ন কমিটি দুজনের ইচ্ছামত পকেট কমিটি করেছেন। গঠনতন্ত্রের   কোন ধার ধারেনাই। কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও দীর্ঘদিন টাল বাহানা করে সম্মেলন না করার জন্য। পরে দলীয় নেতা কর্মীদের চাপে সম্মেলন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।  তিনি আরও জানান তাদের এসব কর্মকান্ডে দলের অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতেই সভা আহ্বান করে গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারার ৯ উপ ধারা মতে আলী মরতূজা কে সভাপতি ও আমাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন।  কমিটি অনুমোদনের জন্য জেলা ও কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছি ।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর জানান,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ গঠনতন্ত্রের মাধ্যমেই চলে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন প্রাপ্ত সভপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট আর তাদের অনুমোদনে আমাদের কমিটি সুতরাং অন্য কোন কমিটির কোন বৈধতা নেই।  এটি গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। আমাদের কার্যক্রম ও চলমান রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন জানান তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যক্রম দীর্ঘদিন যাবত হচ্ছিল না এমন অভিযোগে তৃণমূলের অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতেই একটি কমিটি করে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছেন।  আমরা সাংগঠনিক টীম পাঠিয়ে টিমের রিপোর্ট পেশ সাপেক্ষে জেলা কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেব।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সিলেট বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা আহমদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি কিছুই জানিনা, আমাকে কেউ জানায়নি। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন সাহেবের সাথে যোগাযোগ করুন।