• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সুনামগঞ্জে হাওরে পানি কমলেও আতংক,দুর্ভোগ কমেনি কৃষকদের

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত এপ্রিল ২৩, ২০২২
সুনামগঞ্জে হাওরে পানি কমলেও আতংক,দুর্ভোগ কমেনি কৃষকদের

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ:সুনামগঞ্জের নদ নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরা পুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত না হওয়ার ফলে পাহাড়ি ঢল নামা বন্ধ আছে। কিন্ত কৃষকদের আতংক ও দুর্ভোগ কমছেনা।  গত ১৫ / ২০ দিন যাবত পাহাড়ি ঢল নেমে নদ নদী থেকে গিয়ে হাওর গুলোতে পানি প্রবেশ করে।এতে সুনামগঞ্জ জেলার অন্তত ২০ টি ছোট বড় হাওরে পানি প্রবেশ করে ফসল তলিয়ে গেছে। যে সকল হাওর এখনও টিকে আছে সেগুলো ও চরম ঝুঁকির মধ্যেই আছে। কারণ দীর্ঘদিন বাধেঁর পাশে পানি জমে থাকায় বাধঁ গুলো নরম হয়ে আছে। যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে কৃষকের সোনার ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।  বিভিন্ন হাওরের কৃষক গণ রাতে বাধেঁর মধ্যেই দিনে ও রাতে নির্ঘুম কাটাচ্ছেন।

শুধু কৃষক নয় ইউএনও, এসিল্যান্ড, পাউবোর এসও সহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ বাধেঁ বাধেঁই  থাকছেন।  অনেক কৃষক ছেলে মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাধঁ পাহাড়া দিচ্ছেন। কখন জানি বাঁধ ভেঙ্গে যায় সেই আতংকে।  কোন সময় বাঁধ চুইয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করলে সবাই উড়া কোদাল বাশঁ নিয়ে শত শত নারী পুরুষ বাঁধ মেরামত কাজে নেমে পড়েন। বেশি সমস্যা হলে বাধেঁর পাশের গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিলে মানুষ বাঁধ নির্মাণের জন্য চলে আসে। গত ১৫/ ২০ দিন যাবত এভাবেই কাটছে হাওর পাড়ের কৃষক দের জীবন যাপন।  পবিত্র রমজানে কৃষক গণ তাদের উৎপাদিত একমাত্র বোর ফসলের মায়ায় খেয়ে না খেয়ে হহাওরের বাঁধেই কাটাচ্ছেন।  প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ ৮০ ভাগ ধান পাকা হলেই যেন কর্তন করেন এমন অনুরোধে কেউ কেউ আধা পাকা ধান কাটছেন।  কৃষক গণ জানান এরকম কম পাকা ধান কর্তন করে তেমন লাভবান হবেন না। উপযুক্ত মূল্য ও পাবেন না। তারপরও পানি আসার ও বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আতংকে ধান কর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।  সমসার হাওরের পাড়ের বাসিন্দা আব্দুল সামাদ বলেন আমার কয়েক হাল জমি চাষাবাদ করি কিছূ পানিতে তলিয়ে গেছে কিছু কর্তন করি। কিন্ত ফলন বা ধানের মান ভাল না। এগুলো ভাল দরে বিক্রি করা যাবে না। কোন কোন হাওরে ডুবড়ার পানিতে ফসলের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন এ পর্যন্ত অন্তত ২০ টি হাওর পানিতে ফসল তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ৩০ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার পরিমাণে ৩শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।  তিনি আরও বলেন এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল ৩০ ভাগ কর্তন হয়েছে তাও আবার আধা পাকা।
সুনামগঞ্জ কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাওরের ১৯ টিতে পানি প্রবেশ করেছে বাঁধ উপচিয়ে এবং পিআইসির ২টি বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করেছে।  ৫হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অন্তত ২০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।  তিনি আরও জানান এ পর্যন্ত হাওর এলাকায় ১ লাখ ৬ হাজার হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে যা শতকরা ৬৪ ভাগ। হাওরের বাইরে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর কর্তন হয়েছে যা শতকরা ১০ ভাগ।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ১ জহুরুল ইসলাম জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতার মধ্যে ৪টি বাঁধ ভেঙ্গেছে। এ গুলো হলো তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওরের গুরমার হাওরের বর্ধিত অংশ। ধর্ম পাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল দিরাই উপজেলার চাপতির হাওর ও হুরা মন্দিরা হাওর।  তিনি আরও জানান ক্ষতির পরিমাণ হাওরে ৩ হাজার হেক্টর আর হাওরের বাইরে ২ হাজার হেক্টর হতে পারে। হাওরের পানি খুবই ধীর গতিতে নামছে। দীর্ঘদিন ধরেই বাধেঁর গোড়াতে পানি জমে থাকার কারণে  চরম ঝুঁকির মধ্যেই আছে। যে কোন সময় বাঁধ ভাঙ্গার আশঙ্কা ও করছেন এই কর্ম কর্তা।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান হাওরের পানি কিছু কমছে তবে খুব ধীর গতিতে। আমরা একদিকে বাঁধ সুরক্ষিত রাখতে অন্য দিকে ধান কর্তন করতে সার্বক্ষণিক হাওরের কৃষক পাশেই আছি।