• ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

স্বামীর ছোঁড়া গরম পানিতে ঝলসে গেছে গৃহবধূর শরীর

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১
স্বামীর ছোঁড়া গরম পানিতে ঝলসে গেছে গৃহবধূর শরীর

বিবিএন ডেস্ক: চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে কলহের জেরে স্বামীর ছোড়া গরম পানিতে ঝলসে গেছে এক গৃহবধূর শরীর। আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার শাহাবাজকান্দি গ্রামে গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

ওই গৃহবধূর নাম নাসিমা বেগম (৩৫)। তিনি মতলব উত্তর উপজেলার শাহাবাজকান্দি গ্রামের রাজমিস্ত্রি মো. সালাউদ্দিনের স্ত্রী। নাসিমার বাবার বাড়ি মতলব দক্ষিণ উপজেলার খিদিরপুর গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত জয়নাল মুন্সীর মেয়ে তিনি।

আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার শাহাবাজকান্দি গ্রামে গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে আজ দুপুরে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্বজনেরা। সেখানে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ওই গৃহবধূ।

প্রত্যক্ষদর্শী, গৃহবধূর স্বজন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে নাসিমার সঙ্গে মো. সালাউদ্দিনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে সালাউদ্দিনকে ৩৫ হাজার টাকা, দেড় ভরি সোনা ও বেশ কিছু আসবাবপত্র দেয় নাসিমার পরিবার। এ ছাড়া সালাউদ্দিনের বাড়িতে একটি বসতঘরও তৈরি করে দেন নাসিমার বাবা। এরপরও বিয়ের পর থেকে নাসিমার স্বামী বারবার তাঁর কাছে আরও যৌতুকের টাকা দাবি করেন। কয়েক বছর আগে কিছু টাকা দিয়ে সালাউদ্দিনকে ওমানে পাঠানোর ব্যবস্থা করে নাসিমার পরিবার। সেখানে কিছুদিন থাকার পর সালাউদ্দিন দেশে ফিরে রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। পরে ওই কাজ ছেড়ে বন্ধুদের সঙ্গে তাস খেলে ও আড্ডা মেরে সময় কাটাচ্ছেন। কয়েক মাস আগে নাসিমার কাছে আরও এক লাখ টাকার যৌতুক দাবি করেন তাঁর স্বামী। ওই টাকা দিতে না পারায় পিটিয়ে নাসিমার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে দেন।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে আজ দুপুরে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্বজনেরা। সেখানে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ওই গৃহবধূ।

সূত্রটি আরও জানায়, আজ সকালে নাসিমা স্বামীর বাড়িতে ভাত রান্না করছিলেন। সেখানে গিয়ে তাঁর কাছে পুনরায় ওই এক লাখ টাকা দাবি করেন সালাউদ্দিন। টাকা দিতে অপারগতার কথা জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে নাসিমার শরীরে ভাতের পাতিলের গরম পানি ছুড়ে মারেন সালাউদ্দিন। এতে তাঁর বুক, দুই পা, পিঠ, গলা ও দুই হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে সালাউদ্দিন পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি নাসিমার ভাই আলম মিয়াকে জানালে স্বজনদের নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখান থেকে উদ্ধার করে তাঁর বোনকে আজ দুপুর ১২টার দিকে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

নাসিমার ভাই আলম মিয়া বলেন, তাঁর মা–বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। তাঁদের আর্থিক অবস্থাও খুব খারাপ। যৌতুকের টাকার জন্য তাঁর বোনকে চাপ দিয়ে আসছেন সালাউদ্দিন। এ নিয়ে তাঁর বোনের সঙ্গে ভগ্নিপতির প্রায়ই ঝগড়া হতো। অনেকবার মারধরও করেছেন তাঁর বোনকে। আজ গরম পানি ঢেলে তাঁর বোনের শরীর ঝলসে দিয়েছেন। হত্যার উদ্দেশ্যেই এটি করেছেন। এখন তাঁর বোন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নাসিমার স্বামী মো. সালাউদ্দিন বলেন, রাগের মাথায় তাঁর স্ত্রীর গায়ে ওই গরম পানি ছুড়ে মারেন। তবে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে এটি করেননি।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাজীব কিশোর বণিক বলেন, হাসপাতালে ওই গৃহবধূর চিকিৎসা চলছে। তাঁর শরীরের বেশ কিছু অংশ ঝলসে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। উন্নতি না হলে তাঁকে ঢাকায় বা চাঁদপুরে পাঠানো হবে।

মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল বলেন, ঘটনাটি তিনি জানেন না। অভিযোগ পেলে বা মামলা হলে ব্যবস্থা নেবেন।