• ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

স্মৃতিচারণে আমার প্রথম শিক্ষক –টিএ সুলেমান

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত অক্টোবর ৫, ২০২১
স্মৃতিচারণে আমার প্রথম শিক্ষক –টিএ সুলেমান

প্রায়ই বাড়িতে গেলে আম্মা আমাকে গোসল করিয়ে দিতেন, এখনো দেন।
একদিন পিঠ ঘষতে গিয়ে কোমরের কাছে কালো বর্ণের দুইটা দাগ দেখতে পেলেন,(এখনো আছে) আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করে তিনি খুব গভীরভাবে পরখ করে দেখলেন, এরপর জিজ্ঞেস করলেন এটা কিসের দাগ? আমি উত্তর দিলাম খালা আমাকে একদিন খুব মেরেছিলেন, এই দুইটা সেই মাইরের জখম হওয়া দাগ।
আম্মা আর কিছু বলেন নি, কারণ তিনি জানেন আম্মার পর সুলেমানকে সবচেয়ে বেশি আদর-সোহাগ দিয়ে লালন-পালন করেছেন খালা।
দেড় বছর বয়স থেকে নিয়ে ১২বছর বয়স পর্যন্ত আমি খালা এবং নানির আদর যত্নেই বড় হয়েছি।

খালা সবসময়ই বলেন– “পৃথিবীতে আমাকে সবাই পর করে দিলেও সুলেমান কখনো পারবে না আমাকে পর করে দিতে। এখনো সুলেমানের মলমূত্রের ঘ্রাণ নাকে ভাসে”। কারণ মায়ের থেকেও বেশি খালা আমার মলমূত্র পরিস্কার করেছেন।

যেদিন প্রথম স্কুলে যাবো তার আগের রাতে স্কুল কমিটির সভাপতি নানার বন্ধু ছিলেন, সেক্রেটারি নানার প্রতিবেশী ছিলেন, সে হিসাবে আগের রাতে নানার দাওয়াতে উনারা আমাকে দেখতে আসেন।
তারা আমাকে তাদের নাম, বিভিন্ন জিনিসের নাম লেখান, আমি সবগুলোই ঠিকঠাক লিখি কেবল সেক্রেটারির নাম ‘ফয়জুল করিম’র জায়গায় ‘ফইজুল করিম’ লিখেছিলাম, আমার এই বয়সে এমন পারদর্শিতায় খানিকটা অবাকও হোন।

এরপরে স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হই, স্কুলটি এফআইবিডিবি’র তত্বাবধানে বিদেশি একটা সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত হতো, মাসে মাসে শিশুতোষ গল্প, ছড়া, কৌতুক, চিত্রাঙ্কণের বই আসতো।
আমার ক্লাসে আমিই সবার ছোট ছিলাম, কিন্তু রিডিংয়ের দিক থেকে সকলের চেয়ে এগিয়ে ছিলাম, এজন্য ফোর-ফাইভের বড়বোন’রা আমাকে গোলটেবিলের মাঝখানে বসিয়ে গল্পের বই ধরিয়ে আমার রিডিং শুনতো। আগে না বুঝলেও এখন বুঝি এতে তারা একধরনের বিষ্ময়কর আনন্দ পেতো।
একজন হিন্দু মেডাম ছিলেন, যাকে আমরা দিদিমণি ডাকতাম, উনি প্রায়ই ক্লাসে ঢুকে আমাকে দিয়ে বাংলা বই রিডিং পড়াতেন, পড়া শেষে মাঝেমধ্যে আমার কপালে চুমুও খেতেন।

শিক্ষাজীবনের শুরুতে এইযে এতো বাহবা, আদর, অনুপ্রেরণা পেতাম, এগুলোর সব কৃতিত্ব ছিলো আমার খালার, তিনিই ছিলেন আমার প্রথম শিক্ষক। আমার জন্য উনার রুটিন ছিলো সন্ধ্যার আগে রান্না শেষ করে মাগরিবের নামাজ আদায় করে আমাকে নিয়ে পড়তে বসতেন, রাতের বেলা বুকে জড়িয়ে ঘুমাতেন, সকালে পাকঘরে রান্না করে-করে আমাকে পড়াতেন, নিজের হাতে গোসল করাতেন।

আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে আড়াই-তিন বছরের বয়সে বাড়িতে আম্মার সাথে রাগ করে দুষ্টুমি করেছিলাম, একপর্যায়ে পা পিছলে উনুনের উপর গরম পায়েসের ডেগে পড়ে যাই, যার ফলে আমার ডানহাত কব্জি পর্যন্ত পোড়ে যায়, ঐসময় খালার কী কান্না!
তখন মলম লাগানো-সহ সমস্ত ঔষধ খালার হাতেই খেয়েছি।

আজ শিক্ষক দিবসে আমার জীবনের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষক আয়শা খালাকে স্পেশালি স্মরণ করছি, এবং সকল শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি, জীবিত সকলের সুস্থতার সাথে নেক হায়াত কামনা করছি।
যারা ইহজগৎ ছেড়ে চলে গেছেন, তাদের পরকালীন মঙ্গল কামনা করছি।

টিএ সুলেমান
অনলাইন সম্পাদক, বিলাত বাংলা নিউজ ডটকম।
০৫-১০-২১