বিবিএন ডেস্ক: নদীভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগে কোনোভাবেই মাটি ভরে তা ডাম্প করার সুযোগ নেই। জিও ব্যাগে বালু ভরেই ডাম্প করার নিয়ম রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে এটাই টেকসই ও স্বীকৃত ব্যবস্থা। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘটছে এমনটাই।
এই জেলার সাতটি পয়েন্টে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে পদ্মার বিধ্বংসী ভাঙন আর সেই ভাঙন রোধে যে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, তাতে নেই কোনো স্বচ্ছতার ছাপ। ভাঙন রোধ সংক্রান্ত কাজের পরতে পরতে চলছে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম।
যুগান্তরের পক্ষ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন ভাঙন পয়েন্টে বালুর পরিবর্তে ধষনা (চিকন) মাটি ভরে জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, মাটি ভর্তি এই জিও ব্যাগ দিয়ে কোনোভাবেই ভাঙন ঠেকানো যাবে না। মাটি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একশ্রেণির কর্মকর্তা মিলেমিশে দুর্নীতির মহোৎসবে মেতেছেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ঠিকাদাররা এক সিএফটি বালুর দাম পাচ্ছেন ১৮ টাকা। কিন্তু তারা সেই বালু না কিনে মরা পাগলা নদী খননের ধষনা মাটি কিনছেন পাঁচ টাকা সিএফটি দরে। এই ধষনা ভর্তি ব্যাগ ভাঙন ঠেকানোর বদলে সহজেই ভেসে যাচ্ছে পানির তোড়ে। আরও অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো স্থানে রাতের আঁধারে নদীতে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ।
এতে ব্যাগের প্রকৃত সংখ্যা কত, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। নদীভাঙন প্রতিরোধে যে মহাদুর্নীতি চলছে সেখানে, তার প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। স্থানীয়রা কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে আনা হচ্ছে চাঁদাবাজির অভিযোগ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে নদীভাঙন রোধের বিভিন্ন প্রকল্পে যে দুর্নীতি হচ্ছে, তার প্রতিকার করতে হবে। যেসব ঠিকাদার মাটি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে তারা চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, কোনো জায়গায় মাটি ভর্তি জিও ব্যাগ স্থানীয়রা উদ্ধার করলেও সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য বুধবার জেলা প্রশাসক জরুরি এক বৈঠক করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও এলাকাবাসীর প্রতিনিধিদের নিয়ে। সেখানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের ভাঙন প্রতিরোধ তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আমাদের বক্তব্য হলো, এই কমিটিকে যথাযথভাবে তদারকি চালিয়ে যেতে হবে। এই তদারকির মাধ্যমে যিনি বা যারা জিও ব্যাগের কারসাজিতে জড়িত, তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে এবং প্রকৃত দোষীদের আনতে হবে আইনের আওতায়।
এটাই সত্য যে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগাসাজশ ছাড়া ঠিকাদারদের পক্ষে এই দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। সুতরাং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদেরও চিহ্নিত করা আবশ্যক।