লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজের ৩৩ জন কর্মচারী তাদের বেতন বোনাস দাবীতে কলেজের ফটকে কদিন ধরে অনশন করে আসছেন। কিন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের কোন পাত্তাই দিচ্ছেন না। কর্মচারীদের পরিবার পরিজন চরম অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অতিরিক্ত কাজের জন্য ”কাজ নাই, মজুরী নাই” এমন পরিপত্রে বিভিন্ন সময়ে অস্থায়ীভাবে ৩৩ জনকে নিয়োগ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে কলেজের নৈশ গার্ড, ইলেকট্রিশিয়ান, বুয়া, ড্রাইভার ইত্যাদি পদে নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের। তবে ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতি মহামারি আকার ধারণ করায় বন্ধ হয়ে যায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ নৈশ প্রহরীর ফান্ড থেকে তাদের ২০২০ সালের অক্টোবরে তাদের ১০ মাসের বেতন দেওয়া হলেও এরপর থেকে তারা পাচ্ছেন না নিয়মিত বেতন। এসময় কর্মচারীরা নিজেই বেতনের ৭৫ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে ২৫ শতাংশ বেতন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে সামনে দুইটি ঈদ হওয়ায় এখন কর্মচারীরা দাবি করছেন পূর্ণ বেতন ও ঈদ বোনাস।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ২০ বছর ধরে ইলেকট্রিশিয়ান পদে কাজ করেন সুজন আলী, তিনি অভিযোগ করে বলেন অনিয়মিত বেতনে তার জীবন সংসারের অবস্থা বর্তমানে খারাপ। সামনে ঈদ ছেলে-মেয়েদের হাতে ৫০০ টাকা দেওয়ারও এখন ক্ষমতা নেই তারা। তিনি বলেন, আমরা এই কলেজও বর্তমানে ৭৫ শতাংশ ভর্তুকি দিয়া ২৫ শতাংশ বেতনে কাজ করিয়া আইরাম। এই অধ্যক্ষ মেডাম আইয়া আমরার বেতন ঠিক মতো দেন নাই এখন আমরারে কইসোইন আগামী মাসের জুন মাস থকি চাকরী থকি আমরারে বার করিয়া দেওয়া অইবো। আমরার ছেলে মেয়ে আছে আজকে এতো বছর ধরি কাজ করি আর আমরার পূর্ণ বেতনের দাবি করায় এখন চাকরিও নাই। আমরা অনুরোধ করছিলাম আমরা যেন দুই মাসের ঈদ করতাম বাচ্চাকাচ্চা নিয়া পুরা বেতনটা দেওয়া হয় কিন্তু তারা কেউ আমরার কথা শুনছে না। এখন যেন ছেলে মেয়েরে ৫০০ টাকা দিয়া কইতাম কিচ্ছু কিনি লা এই টাকাটাও নাই আমার কাছে।
একইভাবে অভিযোগ করেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের কম্পিউটার অপারেটর মো. ওমর ফারুক । তিনি বলেন, এই করোনার সময়ে আমরা ৭৫ শতাংশ ভর্তুকি বেতন কর্তন করে কাজ করতেছি আমরা কোন অভিযোগ দেই নি মাথায় পেতে নিছি সবকিছু, কলেজ আমাদের তাই সবকিছু মেনে নিয়েছি, আমি সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর আমার বেতন ২১০০ টাকা। আজকে উনাদের আমরা পায়ে ধরছি ছেলে মেয়েদের কাপড় কিনে দিবো এই টাকা আমাদের নাই, তারা আমাদের বলছিলেন খাতে টাকা ঢুকলে তারা আমাদের পূর্ণ বেতন দিবেন কিন্তু তারা আমাদের কোন কথাই শুনেন নাই। আমরা অনুরোধ করেছি ২টা মাস আমাদের পূর্ণ বেতন দেন দয়া করে পরে প্রয়োজনে আমরা ফ্রি কাজ করবো কিন্তু তারা আমাদের জানালো দুই মাসের মধ্যে আমাদের চাকরী ছাড়তে হবে।
কলেজের অফিস সহায়ক নাজমা আক্তার বলেন, করোনা চলতেছে কিন্তু তারা আমরার বেতন পুরাটা দেয় না, এখন ছেলে মেয়ে নিয়া ঈদ করতাম আমরা ন্যায্য দাবি চাইতেছি তারা আমরার টাকা দিতে পারতো না উল্টা কইলো আমরারে ৩০ জুনের পর থকি চাকরিরত রাখতে পারতা না। আমরা কিতা করতাম কই যাইতাম।
এদিকে তাদের বেতন বোনাস কলেজ কর্তৃপক্ষ কাজের মাধ্যমেই দেয় বলে জানান সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নীলিমা চন্দ। তিনি জানান, করোনাকালীন পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর আমরা ২০২০ সালে কলেজের নৈশ প্রহরীর ফান্ড থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা মতো দিয়েছি ১০ মাসের পূর্ণ বেতন। তবে তাদের বেতন পূর্ণ বা কম বেশি বলতে কোন কথা নেই কারণ তাদের নিয়োগই হয়েছে কাজ নাই মজুরী নাই এমন পরিপত্রে তো আগের অধ্যক্ষরা তাদের যে বেতন দিয়েছেন সেটি তারা জানেন আমিতো পরিপত্রের বাহিরে যেতে পারবো না, তবুও তাদের বেতন দিয়েছি। পরবর্তীতে আমরা বলেছি যেহেতু কলেজ বন্ধ ও ফান্ডেও টাকা সংকট আমরা তাদের টাকার পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আসবো যার কাজ বেশি তাকে একটু বেশি করে দিব তারা সেটা মেনে নিয়েছিলেন কিন্তু এখন আবার কিসের জন্য আন্দোলন সেটা বুঝতেছি না।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালে কলেজ বন্ধ আমার একাদশ শ্রেণি দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কিছু টাকা হয়েছে সেখান থেকে তাদের আমরা বলেছি দিব কিন্তু তারা পূর্ণ বেতন ও ঈদ বোনাস দাবি করতেছে যেটা আমি দিতে পারি না। তারপরেও আমরা বলেছি তোমাদের দুইমাস সময় দিচ্ছি তোমরা অন্য চাকরি খোজে নেও এবং করোনা পরিস্থিতি উন্নত না হলে আমরা তোমাদের আর রাখতে পারবো না। কিন্তু তারা আজই কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়ে কলেজের চাবি সবকিছু আমার কাছে দিয়ে গিয়েছে।