• ১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২২শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

ঈদের লম্বা ছুটিতে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত জুন ১৩, ২০২৫

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

ছয় কুড়ি বিল ,নয় কুড়ি কান্ধা টাঙ্গুয়ায় সবার জীবন বান্ধা এমন একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে সুনামগঞ্জের রামসার সাইট খ্যাত মাদার ফিসারিজ টাঙ্গুয়ার হাওর কে নিয়ে। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ধর্ম পাশা ও মধ্যনগর উপজেলা নিয়ে এটির আয়তন। তিন উপজেলার ১৮ টি মৌজার ৫১ টি হাওরের সমন্বয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান। ১২৬৬৫ হেক্টর বা ১২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন। বৃহত্তম এই হাওরের আশপাশে ৮৮ টি গ্রাম রয়েছে।এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। পার্শ্ব বর্তী দেশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের অন্তত ৩০ টি ঝরনার পানি ও টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে মিশে। এক সময় গাছ, মাছ,পাখি সহ নানা রকমের জীব বৈচিত্র্যের আঁধার ছিল। এখন আর আগের সেই অবস্থাতে নেই। যতই দিন যায় ততই তা হ্রাস পাচ্ছে। বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওরে ২০৮ প্রজাতির পাখি,দুইশ প্রজাতির মাছ, ৬ প্রজাতির স্তন্য পায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সাপ,চার প্রজাতির কচ্ছপ, ৭ প্রজাতির গিরগিটি সহ নানা প্রজাতির প্রাণী এবং নল খাগরা সহ বিভিন্ন রকমের জীব বৈচিত্র্যের আবাস ছিল। প্রতি শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে অসংখ্য জাতের পাখি আসতো। কিন্ত এখন আর আগের মত পাখি নেই। শিকারিদের উৎপাতে এবং মানুষের পদচারনা সহ নানা কারণে আগের মত পাখি আসে না। দিন দিন গাছ সহ নল, খাগরা, হিজল ,করচ সহ অন্যান্য গাছ গাছালী নেই। দিনে ও রাতে চুরি করে বন উজার করে চলেছে কিছু লোক। মাছ ও আগের মত নেই। মাছ বৃদ্ধির জন্য কাটা,বাঁশ সহ যা যা করার দরকার ছিল তা করা হয়না ফলে ক্রমেই মাছের বংশ নির্মূল হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে চুরি করে মাছ লুটের মহোৎসব ও এর জন্য দায়ী। ইজারা প্রথা থাকা অবস্থায় এসব করা হত নিজেদের ব্যবসায়ীক স্বার্থে। এখন শুধু পাহাড়াই দেয়া হয়। ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওর কে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষনা করা হয়। এতে দীর্ঘদিনের অর্থাত ৬০ বছরের ইজারা প্রথা বিলীন হয়ে যায়। ২০০৩ সাল থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরের নিয়ন্ত্রণ সরকার জেলা প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করে। ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওর কে রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০৬ সাল থেকে সুইস এজেন্সিজ ফর ডেভেলপমেন্ট এন্ড কো – অপারেশন (এসডিসি ) টাঙ্গুয়ার হাওর সমাজ ভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা এবং আইসি ইউ এন জীব বৈচিত্র রক্ষায় কাজ করছে। এরপর ও মাদার ফিসারিজ খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরের ঐতিহ্য দিনকে দিন নষ্ট হচ্ছে।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। আগে মানুষ হাতে বাওয়া নৌকা নিয়েই টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে যেতো। কয়েক বছর ধরেই হাউস বোট এর প্রচলন দেখা দিয়েছে। যতই দিন গড়াচ্চে নানা সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ইঞ্জিন চালিত হাউস বোট এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কয়েক শ হাউস বোট রয়েছে। এর মধ্যে কিছু নিবন্ধিত বাকিদের নিবন্ধন নেই। বিলাস বহুল রিসোর্ট আদলের এসব হাউস বোট গুলোর ভাড়া জন প্রতি ৪ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। রিজার্ভ নিতে হলে লক্ষাধিক টাকা। এসব হাউস বোট গুলোতে সব রকমের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের সাহেব বাড়ি ঘাট, লঞ্চ ঘাট, ওয়েজখালী ঘাট,আনোয়ার পুর বাজার ঘাট ও তাহিরপুর সদর ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। প্যাকেজ অনুযায়ী টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ ছাড়াও শহীদ সিরাজ লেক বা নিলাদ্রী, বারেকের টিলা, যাদুকাটা নদী, লাকমা ছড়া, শিমুল বাগান সহ অন্যান্য পর্যটন স্পট ঘুরানোর অফার থাকে। ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি সুনামগঞ্জ শহরের মরমী কবি হাসন রাজার মিউজিয়াম এর পাশে তেঘরিয়া সাহেব বাড়ি ঘাট কিংবা সরাসবি তাহিরপুর সদর বা আনোয়ার পুর বাজারের ঘাট থেকেও যেতে পারেন। কেউ চাইলে মোটর সাইকেল নিয়ে এসব স্পট ঘুরতে পারেন। এবার ঈদুল আযহার লম্বা ছুটিতে ঈদের পর দিন থেকেই হাজার হাজার পর্যটকদের যাতায়াত লক্ষ্য করা গেছে। পর্যটকদের ফেলা পানির বোতল, টিস্যু, প্লাস্টিক নানা বর্যৈ টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ খুবই হুমকির সম্মুখীন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালিত হলেও থেমে পরিবেশ দূষণ কার্যক্রম। সরকারের পক্ষ থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার জন‍্য এবং নিয়ম শৃংখলার ভেতর নিয়ে আসার জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাজ চলমান রয়েছে।