• ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সুন্দরী ডায়নার প্রেমের প্রতারণায় পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অর্ধশতাধিক প্রবাসী যুবক

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত জুলাই ২৪, ২০২১
সুন্দরী ডায়নার প্রেমের প্রতারণায় পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অর্ধশতাধিক প্রবাসী যুবক
আরিফুর রহমান মানিক,ছাতক থেকে: ডায়না আক্তার। সুন্দরী ও রূপ লাবণ্যময় এক রহস্যময়ী যুবতি। যার রূপের প্রেমে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে দেশ-বিদেশের অর্ধশতাধিক যুবক। ভয়ঙ্কর সুন্দরী ডায়নার প্রেমের ফাঁদে পড়ে সৌদি আবর, কাতার, ওমান, দুবাই, মালেশিয়া, পর্তুগাল, ইতালী, ইরাক, ইরান ও গ্রীস প্রবাসীসহ দেশে অবস্থানরত বিত্তশীল পরিবারের যুবক আজ নিঃস্ব। এদের কাছ থেকে সুকৌশলে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় দেশ-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এ আলোচিত ঘটনার রহস্যময়ী যুবতি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক শিল্পনগরীর জাউয়া বাজার ইউনিয়নের মুলতানপুর গ্রামের ফনা উল্লা ও দিলা বেগমের সর্বকনিষ্ট কন্যা ডায়না আক্তার।
জানা যায়, ফনা উল্লা ও দিলা বেগম দম্পতির ৫ মেয়ে ও ৩ ছেলে। ১৫ সদস্য একটি প্রতারক চক্র গঠন করে ডায়নার বড় বোন সৌদি প্রবাসী গৃহকর্মী রিনা বেগমের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে অনলাইনে ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ প্রবাসী ১২টি দেশের যুবকদের সাথে প্রেম করে প্রায় অর্ধশতাধিক যুবক প্রতারিত। যুবকদের প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে অর্থ-লুট, প্রতারণা-  ব্যাকমেইল, জালিয়াতি ও নিরীহ লোকদের হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের নানা অসামাজিক কার্যকলাপের ছাতকে বহুলালোচিত সৌদি প্রবাসী গৃহকর্মী রিনা বেগম তার স্বামী আলী হোসেন, আপন ভাই জয়নাল ও ইমাদ উদ্দিন, ওপর বোন রোবেনা ও ডায়না আক্তার’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
এসব ঘটনার প্রতারক চক্রের প্রধান সহযোগি সৌদি গৃহকর্মী রিনা বেগম ও তার স্বামী আলী হোসেন। গৃহকর্মী রিনা বেগম ফলা উল্লা’র ২য় মেয়ে। রিনা বেগমকে অত্র উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের মামনপুর গ্রামের আলী হোসেনের সঙ্গে বিয়ে দিলেও তার স্বামী আলী হোসেন ঘর জামাই হিসেবে ফনা উল্লা’র বাড়ীতে বসবাস করে। বিয়ের কিছুদিন পর আলী হোসেনের স্ত্রী গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে চলে যায়। স্ত্রী প্রবাসে থাকার সুযোগে আলী হোসেন তার শালিকা রোবেনা ও ডায়না বেগমের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঘরজামাই আলী হোসেন স্ত্রী প্রবাসে থাকায় স্ত্রীকে ব্যবহার করে সৌদিতে বসবাসরত টাকাওয়ালা যুবকদের সাথে দেশে থাকা রোবেনা ও ডায়নার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার ব্যবস্থা করে দেয়। গৃহকর্মী রিনা তার ভাই জয়নাল ও তার স্বামী আলী হোসেনের মূল টার্গেট সম্পদশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকুরিজীবী ও প্রবাসী যুবক। প্রথমে টার্গেট নিশ্চিত করে তারা ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতে তার বোনদের দেহের সৌন্দর্য ও কথা মালার মারপ্যাঁচে আটকে ফেলেন টার্গেটকৃত যুবকদের।
২০১৯ সাল থেকে গৃহকর্মী রিনা সৌদি যাওয়ার পর কিছু সংখ্যক প্রবাসী যুবকদের টার্গেট করে তাদের সাথে প্রথমে সে নিজে, পরে তার আপন ছোট বোন রোবেনা ও ডায়না আক্তারকে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং তাদের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ করে ডায়না আক্তার। ঘনিষ্টতা দীর্ঘয়িত হলে ভিডিও কলে ডায়না আক্তার ও রোবেনা তাদের শরীরের স্পর্ষকাতর অঙ্গ উলঙ্গ হয়ে দেখিয়ে যুবকদেরকে আকৃষ্ট করে। সুকৌশলে ভিডিও কলের কিছু অংশ স্কিন রেকর্ড ও স্কিনসট রেখে যুবকদেরকে সামাজিক ভাবে হেয় করার হুমকি দিয়ে তা অনলাইনে প্রকাশ করার কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এসব টাকা গৃহকর্মী রিনা ও তার স্বামী আলী হোসেন, রিনার বড় ভাই জয়নাল ও ইমাদ মিলে ডায়না আক্তার ও রোবেনাকে জিম্মি করে তাদের ব্ল্যাকমেইলের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়।
গত জুন মাসে প্রথম সপ্তাহে ডায়না আক্তার তার পরিবারের জিম্মিদশা থেকে সুকৌশলে বের হয়ে রাতের আধারে পিত্রালয় থেকে পালিয়ে মৌলভীবাজার জেলাধীন বড়লেখা উপজেলার আব্দুল গফুর’র ছেলে সৌদি প্রবাসী আব্দুল জলিল’র কাছে চলে যায়। এ পালিয়ে যাবার ঘটনায় তার মা দিলা বেগম বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি অপহরনের নাটক সাজিয়ে একই এলাকার খাদিজা ও সাবানা বেগম নামের দু’টি নিরীহ গৃহবধুর নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানিয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তদন্তে দেশ-বিদেশের প্রায় অর্ধশতাধিক যুবকের সাথে প্রতারনার রহস্যময় ঘটনা বেরিয়ে আসে।
এ চক্রে প্রতারিত যুবকরা হচ্ছে মৌলভী বাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সৌদি প্রবাসী আব্দুল জলিল, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার গ্রীস প্রবাসী হাছান তালুকদার, মালেশিয়া প্রবাসী আব্দুর রহিম, পর্তুগাল প্রবাসী তুফায়েল আহমদ, কাতার প্রবাসী রুকন উদ্দিন, দুবাই প্রবাসী আলী আকবর, ওমান প্রবাসী নোমান আহমদ, ইতালী প্রবাসী ছাদিকুর রহমান, ইরান প্রবাসী মকবুল আলী, ইরাক প্রবাসী মিছবাহ উদ্দিন ফকিরসহ দেশে-বিদেশের প্রায় অর্ধশতাধিক যুবক। এদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আলী হোসেন-জয়নাল চক্র।
পুলিশ জানায়, সৌদি গৃহকর্মী রিনা বেগম ও তার স্বামী আলী হোসেন, জয়নাল, ইমাদ চক্রের বেপরোয়া তৎপরতা বৃদ্ধির কারণে দেশ-বিদেশের অনেক যুবক প্রতারিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ডায়না আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে সে বেশ কিছু ভিডিও ভার্তার মাধ্যমে জানায়, জিম্মিদশা থেকে মুক্তি লাভ ও নিজের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় রাতের আধারে সে স্বইচ্ছায় নিজ গৃহ ত্যাগ করিয়াছে। সে জানায় তার বোন সৌদি প্রবাসী রিনা বেগমের স্বামী আলী হোসেন প্রায় রাতে তার রুমে অনাধিকার প্রবেশ করে বিভিন্ন টাকাওয়ালা যুবকের সাথে ভিডিও কলে কথা বলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ উলঙ্গ করে দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আনার জন্য জোরপূর্বক বাধ্য করেছে। আমি এ বিষয়ে তাকে মানা করিলে সে আমাকে এসিড নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারবে এবং তার সাথে রাতে না ঘুমালে আমাকে আমার মা-বাবার সামনে মধ্যযুগী কায়দায় নির্যাতন করত। এসব নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে আর কোন যুবকের সাথে প্রতারনা না করার উদ্দেশ্যে আমি নিজে স্ব-ইচ্ছায় ঘর-বাড়ী ছেড়ে পালিয়েছি। কেউ তাকে অপহরন করেনি বলে সে দাবি করে। ওরা ন্যাংটা করে মারপিট করে ইমু মাধ্যমে সৌদি আরবে একাধিক যুবকের কাছে ছবি দিয়ে প্রথমে প্রেম তার পর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দু’টি বিকাশের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এসব প্রতারিত কর্মকান্ডের প্রতিকার চেয়েছে ডায়না আক্তার। একটি ভিডিও রেকর্ড মাধ্যমে প্রতারনার ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করেছে ডায়না আক্তার।
এব্যাপারে জাউয়া বাজার পুলিশ ফাড়ির তদন্তকারী কর্মকর্তা এহতেশাম তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান মেয়ে নিখোঁজের একটি অভিযোগ নিয়ে সরেজমিনে তদন্তকালে জানতে পারি, মেয়েটির সঙ্গে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত একাধিক যুবকের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ক নিয়ে একটি ছেলের সাথে সে পালিয়ে গেছে। এঘটনায় সন্দেহ তীর বাদীর দিকে। এব্যাপারে ওসি শেখ নাজিম উদ্দিন জানান, নিখোজ ভিকটিমকে উদ্ধারের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। শীঘ্রই তাকে উদ্ধার করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।