• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

স্কটল্যান্ডে প্রথম মুসলিম শাসক হামজা ইউসুফ

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত মার্চ ৩০, ২০২৩
স্কটল্যান্ডে প্রথম মুসলিম শাসক হামজা ইউসুফ

 

সাঈদ চৌধুরী,অতিথি প্রতিবেদক:স্কটল্যান্ডে সরকার প্রধান তথা ‘ফার্স্ট মিনিস্টার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন প্রথম কোন মুসলিম রাজনীতিক। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি-এসএনপির সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ৩৭ বছর বয়সী হামজা ইউসুফ। ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিম ইউরোপের কোনো দেশের প্রথম মুসলিম শাসক হতে চলেছেন কৌশলী ও সাহসী সংগঠক হামজা ইউসুফ। ব্রিটেনসহ ইউরোপ জুড়ে এটা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মুসলিম কমিউনিটি এতে বেশ উৎফুল্ল। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব হামজা ইউসুফকে প্রাণখোলা অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

হামজা ইউসুফ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মঙ্গলবারে সরকারি বাসভবনে উঠেছেন। প্রথম রাতেই সেখানে নামাজ আদায় করেছেন। পরিবারের সঙ্গে এই বিশেষ মুহূর্তটি তিনি শেয়ার করেছেন টুইটার একাউন্টে। তাতে দেখা যায় তিনি নামাজে ইমামতি করছেন। আরেক ছবিতে আছেন পিতা মুজাফ্ফর ইউসুফ, মা শায়েস্তা ভুট্ট, স্ত্রী নাদিয়া এবং দুই মেয়ে। হামজা লিখেছেন, পার্লামেন্টারি ভোটের পর বিউজ হাউজে প্রথম রাত অতিবাহিত করছি আমি ও আমার পরিবার। সবাই মিলে ইফতার করে রীতি অনুযায়ী পরিবারের সদস্যরা নামাজ আদায় করলাম। এটা এক বিশেষ মুহূর্ত।

২০২১ সালের মে মাসে লন্ডনের মেয়র হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন লেবার পার্টির নেতা সাদিক খান। বর্তমান সরকার দল কনজারভেটিভ পার্টির সাউন বেইলিকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। ব্রিটিশ-পাকিস্তানি সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য সাদিক খান যখন ২০১৬ সালে প্রথম লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন, তিনি ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোন দেশের রাজধানী শহরের প্রথম মুসলমান মেয়র। তখন নতুন প্রজন্মের মুসিলম তরুণেরা মূলধারার রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহনে আশাবাদী হয়েছেন।

শুধুমাত্র মুসলিম কমিউনিটি নয়, হামজা ইউসুফের বিজয়ে ব্রিটেনের এশিয়ান রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনে সয়লাব হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এশিয়ান রাজনীতিক ঋষি সুনাক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আসছে। ঋষি সুনাকই প্রথম একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসীর সন্তান, একজন অশ্বেতাঙ্গ ব্রিটেনের রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষ পদে বসেছেন।

২০২১ সালে স্কটল্যান্ডে আরেক মুসলিম রাজনীতিক আনাস সারওয়ার স্কটিশ লেবার পার্টির প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। এশীয় বংশোদ্ভূত এবং মুসলমান প্রতিনিধি হিসেবে আনাসই প্রথম ব্যক্তি ব্রিটেনের কোনো বড় দলের নেতা নির্বাচিত হলেন। গ্লাসগো সেন্ট্রাল আসনের স্কটিশ পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এই আসনে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এমপি ছিলেন আনাস সারওয়ারের বাবা ব্রিটেনের প্রথম মুসলিম এমপি মোহাম্মদ সারওয়ার। ২০১০ সালে বাবার আসনে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন আনাস সারওয়ার।

বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত একমাত্র স্কটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ফয়ছল চৌধুরী এমবিই জানালেন, স্কটল্যান্ডে এখন ৪জন মুসিলম এমপি। সকলেই স্কটল্যান্ডের স্বার্থ এবং নিজেদের শিকড়ের সংযোগ রক্ষা করে চলেছেন। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি-এসএনপির সর্বোচ্চ নেতা এবং স্কটল্যান্ডে ‘ফার্স্ট মিনিস্টার’ নির্বাচিত হওয়ায় তিনি হামজা ইউসুফকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। একজন সাহসী, অমায়িক ও গণমুখী রাজনীতিক হিসেবে হামজা ইউসুফের সাফল্য তিনি প্রত্যাশা করেন।

ফয়ছল চৌধুরী এমবিই আরো বললেন, সেখানকার পার্লামেন্ট সদস্য ও লেবার পার্টির নেতা আনাস সারোয়ার এবং মুসিলম মহিলা সদস্য কোকাব স্টুয়ার্ডও রাজনীতিতে ভাল করছেন। মুসিলম এমিপদের মধ্যে আন্তরিক বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্য রয়েছে। এছাড়া ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির সদস্য চারজন বাংলাদেশী এমিপ রয়েছেন। তারা হলেন, রুশনারা আলী, রূপা হক, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ও আফসানা বেগম৷ ভারত ও পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত এমপির সংখ্যাও কম নয়।

এদিকে হামজা ইউসুফের অতীত নিয়ে মূলধারার সংবাবাদ পত্রে নানা বিশ্লেষন শুরু হয়েছে। এক ধরণের তরুণ এই সংগঠক গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতিতে ডিগ্রি নিয়েছেন। তারপরই রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করেন। ইরাকে বুশ-ব্লেয়ারের আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলন থেকেই হামজার রাজনীতিতে পদার্পণ। অল্পদিনে সর্বকনিষ্ঠ স্কটিশ এমপি নির্বাচিত হয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন। মুসলিম এবং সংখ্যালঘু সংসদ সদস্য হিসেবেও সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

একজন মুক্তচিন্তার মানুষ হিসেবে নিজ দলে এবং স্কটিশ পার্লামেন্টে হামজা ইউসুফ অসাধারণ গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করেছেন। প্রায় সকল মহল থেকেই তার এই বিচক্ষনতার প্রশংসা হচ্ছে। ২০১২ সালে তিনি জুনিয়র মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। সেই সময়ে স্কটিশ সরকারে নিযুক্ত হওয়া সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী এবং প্রথম জাতিগত সংখ্যালঘু ছিলেন হামজা ইউসুফ। ২০১৮ সালে তিনি বিচারমন্ত্রী হিসাবে মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন এবং ২০২১ সালের মে মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন।

হামজা ইউসুফ ৫২.১ শতাংশ ভোট পেয়ে এসএনপির নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থ সচিব কেট ফোর্বস পেয়েছেন ৪৭.৯ শতাংশ ভোট। এর আগে, প্রথম গণনায় প্রাক্তন মন্ত্রী অ্যাশ রেগান ১১.১ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। হামজা ইউসুফ সাবেক ফার্স্ট মিনিস্টার স্টার্জনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তার জয় অনেকটাই প্রত্যাশিত ছিল।

গ্লাসগোতে জন্মগ্রহণকারী হামজা ইউসুফের বাবা পাকিস্তান থেকে ১৯৬০ এর দশকে স্কটল্যান্ডে যান। আর তার মা কেনিয়াতে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। হামজা ইউসুফের জয়ের খবরে মা শায়েস্তা ভুট্টো ও স্ত্রী নাদিয়া এল নকলার আনন্দাশ্রু মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। হুমজা ইউসুফ প্রথম স্কটিশ এশীয়, যিনি স্কটল্যান্ডের ‘ফার্স্ট-মিনিস্টার’ হলেন। তার বিজয় স্কটল্যান্ডের নেতৃত্বের ‘প্রজন্মগত পরিবর্তনের’ ইঙ্গিত দেয় বলেও সংবাদ পর্যালোচনায় আলোচিত হচ্ছে।

গতকাল এডিনবার্গে হামজা ইউসুফ বলেন, আমরা হচ্ছি সেই প্রজন্ম, যারা স্কটল্যান্ডকে স্বাধীন করবে। আমাদেরকে অবশ্যই দলের মধ্যে সব বিভাজন দূর করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে দল হিসেবে আমরা হব সবথেকে শক্তিশালী। আর আমাদের ঐক্যই কেবল স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা উপহার দিতে সক্ষম হবে।

 

এদিকে হামজা ইউসুফ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মঙ্গলবারে সরকারি বাসভবনে উঠেছেন। প্রথম রাতেই সেখানে নামাজ আদায় করেছেন। পরিবারের সঙ্গে এই বিশেষ মুহূর্তটি তিনি শেয়ার করেছেন টুইটার একাউন্টে। তাতে দেখা যায় তিনি নামাজ আদায় করছেন। আরেক ছবিতে আছেন পিতা মুজাফ্ফর ইউসুফ, মা শায়েস্তা ভুট্ট, স্ত্রী নাদিয়া এবং দুই মেয়ে। হামজা লিখেছেন, পার্লামেন্টারি ভোটের পর বিউজ হাউজে প্রথম রাত অতিবাহিত করছি আমি ও আমার পরিবার। সবাই মিলে ইফতার করে রীতি অনুযায়ী পরিবারের সদস্যরা নামাজ আদায় করলাম। এটা এক বিশেষ মুহূর্ত