• ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ছাতকে একটি ভাঙা কালভার্টের জন্য লাখো মানুষের দুর্ভোগ: ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফলতির অভিযোগ

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত মে ৩০, ২০২২
ছাতকে একটি ভাঙা কালভার্টের জন্য লাখো মানুষের দুর্ভোগ: ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফলতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুনামগঞ্জের ছাতকে একটি ভাঙা কালভার্টের জন্য লাখো মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রায় ৫ মাস পূর্বে নতুন কালভার্ট তৈরির লক্ষ্যে পুরাতন কালভার্টি ভেঙে ফেলে ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখন পর্যন্ত কালভার্টি তৈরিতে কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। কালভার্টটি তৈরি করতে আর কত সময় লাগবে এর কোন হিসেব মিলছে না। খোঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাউকে। ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের গাফলাতির ফলে লাখো মানুষের দুর্ভোগ আরো দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন ভূক্তভোগি জনসাধারণ।

জানা যায়, ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর-দোলারবাজার হয়ে লামা রসুলগঞ্জ পর্যন্ত একটি সড়ক রয়েছে। এক সময় এ সড়কটি আবুল খয়ের সড়ক নামে নামকরণ করা হয়।  এ সড়কের সাথে সংযোগ রয়েছে পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর উপজেলার। এছাড়া গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, দোলারবাজার, দক্ষিণ খুরমা, ভাতগাঁও, সিংচাপইড়সহ জগন্নাথপুরের লাখো মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। গত দুইবছর আগে জালালপুর-দোলারবাজার পর্যন্ত আরসিসিসহ প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজ পায় মেসার্স আকবর আলী কনট্রাকশন নামের দোয়ারাবাজারের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। খানাখন্দে ভরপুর সড়কটিতে যানচলাচল একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। তখন মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। দীর্ঘদিন পরে রাস্তায় সংস্কার কাজ শুরু হলে এলাকার লোকজনের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে রাস্তার সংস্কার কাজ, কার্পেটিং হলেও মানুষজন প্রতিবাদ করে কোন প্রতিকার পায়নি। প্রায় ৬ কোটি টাকার এ কাজের সঙ্গে ধরা হয় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের কাছে রত্নাদীর (বর্তমান খাল) উপর পুরাতন কালভার্ট ভেঙে নতুন কালভার্ট তৈরির।

সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পর চলতি ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে পুরাতন কালভার্ট ভাঙা শুরু হয়। যানচলাচলের বিকল্প রাস্তা তৈরি না করে নিজেদের খেয়াল খুশিতে কালভার্ট ভাঙা শুরু করলে স্থানীয় সচেতন মহল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। এতে ৩দিন কালভার্ট ভাঙা বন্ধ ছিল। তখন ওই কালভার্টের উপর বালি ভর্তি বস্তা দিয়ে মানুষজন ও ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করেছিল। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের সঙ্গে আতাত করে টাকা পয়সার বিনিময়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাতের আধাঁরে কালভার্টের উপরের অংশ ভেঙে ফেলে। যে কারণে ওই সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। দক্ষিণ ছাতকের লাখো মানুষ রত্না নদী (বর্তমান খাল) পায়ে হেটে পার হয়ে গন্তব্যে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এখন ওই খালে পানি। এ কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই।

এদিকে, দুই মাসের মধ্যে নতূন কালভার্ট তৈরি করার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কালভার্ড ভাঙতে সময় লেগেছে তিন মাস। নতুন কালভার্টের কাজ ধীরগতিতে শুরু হলে সম্প্রতি উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টির ফলে দেখা দেয় এখানে বন্যা। এসুযোগে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ বন্ধ করে চলে যায়। বর্তমানে রত্না নদী (বর্তমান খাল) এর পানি কমতে শুরু হলেও নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানের খোঁজ নেই।

নির্মাণাধীন কালভার্টের কারণে এ অঞ্চলের মানুষ উপজেলা এবং জেলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছেন ওই অঞ্চলের মানুষ। কয়েক মাস ধরে মানুষের দূর্ভোগ পুহাতে যখন কোন জনপ্রতিনিধি উদ্যোগ নেননি ঠিক তখনি স্থানীয় সিএনজি চালিত অটোরিকশা শ্রমিকরা এগিয়ে আসে। তারা নিজেদের পকেটের টাকায় বাঁশ, কাঠ, গাছ কিনে তৈরি করেছে অস্থায়ী বিকল্প ব্রিজ। সামান্য টাকার বিনিময়ে পারাপার করছে ছোট ছোট যানবাহন। সাথে পারাপার হচ্ছেন মানুষ। বিকল্প ব্রিজ স্থাপন করে ধন্যবাদ না দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অনেকেই চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলছেন। এটি অত্যন্ত দু:খজনক বলে সচেতন মহলরা মনে করেন।

জালালপুর সিএনজি চালিত অটোরিকশার উপ-শাখার সভাপতি সেবুল মিয়া বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে এমন দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। গাড়ি পারাপার করতে না পারায় কয় মাস ধরে তাদের শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। গাড়ি পারাপারতো দূরের কথা মানুষজনও পারাপার হতে পারছেন না। ২৫জন শ্রমিক মিলে নিজেদের টাকায় নিজেরাই তৈরি করেছেন অস্থায়ী বিকল্প ব্রিজ। যাতে ছোট ছোট গাড়িগুলো পারাপার হতে পারে। মানুষের দূর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়। তিনি বলেন, ২৫ জনের মধ্যে ১৫জন শ্রমিক স্বেচ্ছায় ব্রিজে কাজ করার পাশাপাশি চালকদের গাড়ি পারাপারে তারা সহযোগিতা করেন। বিনিময়ে সামান্য হারে টাকা নেয়া হচ্ছে ব্রিজ উন্নয়নের জন্য। কিন্তু এখানে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তিনি এমন মন্তব্যের তিব্র নিন্দা জানান।

পালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাবুর রহমান মোস্তাক বলেন, গোবিন্দগঞ্জ থেকে তিনি প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করেন। এ কালভার্ট ভাঙার পর থেকে অত্যন্ত কষ্ট করে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তাকে যাতায়াত করতে হচ্ছে বিদ্যালয়ে। কালভার্টটি দ্রুত নির্মাণ করে মানুষের দূর্ভোগ পুহাতে সংশ্লিদের প্রতি তিনি অনুরোধ জানান।

স্থানীয় হাইলকেয়ারী গ্রামের প্রতিবন্ধী আবদুল হামিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি কালভার্টের কারণে  দীর্ঘদিন ধরে লাখো মানুষ যে কষ্ট করছে স্থানীয় এমপিসহ কোন জনপ্রতিনিধিরা দেখেও এগিয়ে আসছেন না।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারী নুরুল আমীন বলেন, শ্রমিক সংকটে পুরাতন কালভার্ট ভাঙতে সময় লেগেছে। নতূন কালভার্টের কাজ শুরু হওয়ার পর বন্যার পানি এসে যায়। কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। পানি কমার পর দ্রুত সময়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে। বিকল্প রাস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, কালভার্টের কাজের সাথে এটি ধরা নেই। যে কারণে বিকল্প রাস্তা করা হয়নি।

উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আফসার আহমদ বলেন, বন্যার পানির কারণে এখানের কালভার্ট নির্মাণ কাজে বিলম্ব হচ্ছে। স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলের জন্য ঠিকাদারের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা হবে।