• ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আমার রাজনীতির পথপ্রদর্শক” জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান’র প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধান্জলী !

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২০, ২০২১
আমার রাজনীতির পথপ্রদর্শক” জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান’র প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধান্জলী !

   তুমি রবে লাল সবুজের পতাকায়।

এ এস এম সুজন:ছাতকের কিংবদন্তি আং হক। আজও কোন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা মিলেনি। তাঁর জন্ম ১৯৩০ সালে তৎকালীন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার ছাতক থানার ঐতিহ্যবাহী ভাতগাঁও গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।পিতা মৌলভী আব্দুল ওয়াহিদ ও মাতা মাহেবুন নেছার তিন ছেলের জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি।এই অন্চলের মানুষের হৃদয়ে আকাশ চুম্মি জনপ্রিয়তা,নন্দিত গণ-মানুষের নেতা ছিলেন।যার নামে তার মেঝো ভাই মরহুম আবুল হাসনাত আব্দুল হাই কে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ছাতক-দোয়ারাবাসী সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে তিনি তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেন।

এমএনএ আব্দুল হক ১৯৫১ সালে সুনামগঞ্জ জুবিলী হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য সুনামগঞ্জ কলেজে ভর্তি হন। সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এসময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিম উল্লাহ হলে জিএস নির্বাচিত হন। পরে হাইকোর্টে আইন পেশায়ও নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলে কয়েক বছর শিক্ষকতাও করেন।
১৯৫২ সালে সুনামগঞ্জের ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করে ভাষা আন্দোলনে আব্দুল হক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৫৫ সালে তিনি গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘ ১৩ মাস কারাভোগ করেন। রাজপথের অগ্রসৈনিক আব্দুল হক ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বৃহত্তর ছাতক (ছাতক-দোয়ারাবাজার-কোম্পানীগঞ্জ ও জগন্নাথপুর )থানা নিয়ে গঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ আসনে এমএনএ নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কালরাতে দেওয়ান ওবায়দুর রাজার বাড়িতে সুনামগঞ্জের প্রথম সারির নেতাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন আব্দুল হক। পরের দিন ২৭ মার্চ দেওয়ান ওবায়দুর রাজাকে আহবায়ক করে রাজনীতিবিদ আব্দুস সামাদ আজাদ,আব্দুল হক,বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, অ্যাড. আব্দুর রইছ, আব্দুস জহুর, সমছু মিয়া চৌধুরী, আ.লীগ নেতা হোসেন বখত, ন্যাপ নেতা আলী ইউনুছ, আব্দুল কদ্দুছ ও আলফাত উদ্দিন আহমদ সহ শ্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ৫ নম্বর সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা ও ছাতক-জগন্নাথপুর-দিরাইর প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল হক।

১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর
সিলেট সার্কিট হাউসে সংগ্রাম কমিটির সভা থেকে প্রাইভেট গাড়িযোগে সুনামগঞ্জে ফেরার পথে সিলেটের টুকেরবাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। এসময় তার সাথে ছিলেন ইদ্রিছ আলী বীরপ্রতীক সহ আরো ক’জন নেতা। সেদিন অল্পের জন্য বেঁচে যান তাঁহার সফর সঙ্গী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মো. ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক)।

এমএনএ আব্দুল হকের অকাল মৃত্যুতে তখন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ দেশের সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক মানুষ মর্মাহত হয়েছিলেন। ছাতক শহরে তাকে সমাধিস্থ করার দাবি ওঠে স্থানীয়ভাবে। ২০ ডিসেম্বর বিশাল জানাজা শেষে শহরের বাগবাড়িস্থ কবরস্থানে তাকে চিরশায়িত করা হয়। মরহুম আব্দুল হকের জানাজায় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিকনায়ক জেনারেল (অব.) আতাউল গনি ওসমানীসহ কমরেড মানিক মিয়া, মদরিছ আলী বিএ, শফিকুল হক, এমপিএ সমছু মিয়া চৌধুরী, আব্দুল ওদুদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস সালাম, আঙ্গুর মিয়া চৌধুরী, মদরিছ মিয়া চৌধুরী, তৈমুছ রাজা, মুকিত চৌধুরী, ময়না মিয়া, সমশের আলী, লুৎফুর রহমান প্রধান, আচ্ছা মিয়া, আমির আলী বাদশা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।শ্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে মরহুম এমএন এ আব্দুল হককে স্মরণীয় করে রাখতে স্হানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের উদোগ্যে ১৯৭২ সালে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করা হয় আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ। ৭২ পরবর্তি ২৫ বছর ছাতকের এ মহান নেতার নামে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে দেখা যায়নি।
দীর্ঘ ২৫ বছর ছাতকের অবিসংবাদিত নেতা আব্দুল হক তাঁর মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানকে রাখা হয় প্রচারবিমুখ। ১৯৯৬ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী সরকারের আমলে মুহিবুর রহমান মানিক এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধের ৫ নম্বর সেক্টর হেড কোয়াটার বাঁশতলায় নির্মাণ করা হয় এমএনএ আব্দুল হকের নামে হকনগর ও স্মৃতিসৌধ, ছাতক শহর থেকে তাঁর সমাধী রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্হানান্তর করা হয় হকনগরে।
হকনগর একটি অঘোষিত পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন হকনগর স্মৃতিসৌধ দেখতে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন এখানে। ঐতিহাসিক স্থানটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করতে চেস্টা করে যাচ্ছেন উন্নায়নের রুপকার ছাতক-দোয়ারার মানুষের প্রিয় নেতা মুহিবুর রহমান মানিক এমপি।

 

লেখকঃ এ এস এম সুজন, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক