• ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

“লা-তাহযান” মুমিনের অবিনশ্বর চেতনা

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১
“লা-তাহযান” মুমিনের অবিনশ্বর চেতনা

মক্কার জালিমদের ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচতে আল্লাহর হুকুমে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবুবকর (রা.) মদিনার দিকে হিজরত করেন। সাওর গুহায় গিয়ে বিশ্রাম নেন। গুহার ভিতরে কেবল তাঁরা দু’জনই। হাতে নেই কোন অস্ত্রশস্ত্র। অথচ তাঁদেরকে হত্যা করতে মক্কার ঘাতক জালিমরা এগিয়ে আসছে গুহার দিকে। জালিমরা গুহার এতোই নিকটে এলো যে, গুহা-মুখে ঘাতকদের পায়ের আঙুল দেখা গেলো। শত্রুরা যদি একবার মাত্র নিচের দিকে দৃষ্টিপাত করে, তাহলে কি হবে, সেই অবস্থা চিন্তা করে আবুবকর ভীত হয়ে পড়লেন। ভয়ে কাঁপতে শুরু করলেন। কিন্তু এ ভয়টা নিজের জন্য নয়। তিনি তাঁর কলিজার টুকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিরাপত্তা ও ইসলামি আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়েই শঙ্কিত। ভয়ে ভয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফিসফিস করে বললেন, “তারা যদি আমাদের দেখতে পায়, তাহলে কী হবে? আমরা তো মাত্র দু’জন।”

শান্ত আর হৃষ্ট কণ্ঠে জবাব এলো :

لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللَّهَ مَعَنَا

“ভয় করো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমাদের সাথেই আছেন।” [ সূরা তাওবাহ্, আয়াত ৪০]

জবাব শুনে তাঁর সকল ভয়, উৎকণ্ঠা আর পেরেশানি পালিয়ে গেলো। এক পৃথিবী সাহস, ভরসা আর প্রশান্তিতে শঙ্কিত হৃদয় ভরে উঠলো। ঈমানী শক্তি সৃষ্টি জীবের প্রতি ভয়শূন্যতা এবং স্রষ্টার প্রতি ভয়ের ক্ষেত্রে চরম পরিপূর্ণতা লাভ করলো। মক্কার ঘাতকেরা তাঁদের আর কোন ক্ষতি করতে পারলো না। আল্লাহ্ তায়ালা ঠিকই তাঁদের রক্ষা করলেন।

এটাই সেই অনন্য শক্তি, যা বদর-প্রান্তরে কালজয়ী অম্লান ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলো; দুশমনদের পর্যদুস্ত করেছিল খন্দকের যুদ্ধে; সালাউদ্দিন আইয়ুবীকে ইউরোপ মহাদেশের সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে সক্ষম করেছিল, জহীর বায়বার্সকে তাতার ও ক্রুসেডারদের পদানত করতে নবশক্তিতে বলীয়ান করেছিলো; এ শক্তিই বারবার দৃশ্যমান হয়েছে তুর্কী, বার্বার, সেলজুক, মামলুক, ভারতীয়, পারস্যবাসী ও মঙ্গলদের বিজয়সমূহে এবং আজ আমরা দেখছি বর্তমান বিশ্বের দুই পরাশক্তি আমেরিকা ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাইফেলধারী আফগান মুজাহিদীন ও প্রস্তর নিক্ষেপকারী ফিলিস্তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের লৌহকঠিন প্রতিরোধ-শক্তির মধ্যে।

এভাবেই যুগে যুগে “লা-তাহযান” শক্তি যুগিয়েছে বিশ্বাসী মুমিনের হৃদয়ে। সাহস যুগিয়েছে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে থেকে বিজয় চিনিয়ে এনে শান্তির হাসি হাসার। তাই আমরা মুমিন, আমাদের কোন হতাশা গ্রাস করতে পারে না। আল্লাহ আমাদের অবিভাবক। যেখানেই থাকি তিনি আমাদের সাথেই থাকেন। যখনই আমরা ডাকি, তখনই আমাদের ডাকে সাড়া দেন। আমাদের অনেক প্রয়োজন না চাইতেই তিনি মিটিয়ে দেন। বিনিময়ে আমাদের কাছে তিনি কিছুই চান না। শুধু দেখেন আমাদের অন্তরটা। তিনি দেখেন আমাদের জন্য এতোকিছু করার পরও আমরা তাঁকে কতোটুকু ভালোবাসি। কতোটুকু ভরসা করি। কতটুকু তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করি।

বিপদ যতো বড়ই আসুক, আল্লাহর ওলিদের কোন ভয় নেই চিন্তা ও নেই। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন–

“স্মরণ রেখো, যাঁরা আল্লাহর বন্ধু তাঁদের কোনও ভয় থাকবে না এবং তাঁরা দুঃখিত হবে না।” [ সূরা ইউনুস, আয়াত ৬২]

‘খওফ’ বলা হয় বাহ্যিক ভয়কে। আর ‘হুযন’ বলা হয় ভেতরের ভয়কে। আল্লাহর ওলিদের বাইরেও ভয় থাকবে না, ভেতরেও ভয় থাকবে না।

ওলি কারা? আল্লাহ তায়ালাই ইরশাদ করছেন–

” তাঁরা সেইসব লোক যাঁরা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে। তাঁদের দুনিয়ার জীবনেও সুসংবাদ আছে, আখেরাতেরও সুসংবাদ আছে। আল্লাহর কথায় কোন পরিবর্তন হয় না। আর এটাই মহা সাফল্য।” [ সূরা ইউনুস, আয়াত ৬৩-৬৪]

আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ তাকওয়া ও খোদাভীতি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর ওলি ও বন্ধু হওয়া।
আমরা যদি আমাদের হৃদয়ে আল্লাহকে রাখতে পারি, একমাত্র আল্লাহর ভয়ে অন্তর পরিপূর্ণ করতে পারি, তাহলেই “লা-তাহযান”-এর অবিনশ্বর চেতনায় আমরা উজ্জীবিত হতে পারবো। ধ্বংসের অতল গহ্বর থেকেও সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহন করতে পারবো। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারবো।

যে যতো বেশি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও তাকওয়া অর্জন করবো, তাঁর জন্য আল্লাহ তায়ালা সাহায্যের দরজা ততো বেশি খুলে দেবেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন–

” যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তাঁর পাপরাশি মার্জনা করবেন এবং তাঁকে দেবেন মহা পুরষ্কার।” [ সূরা তালাক, আয়াত ৫]

তিনি আরো বলেন–

“হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহর সঙ্গে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করো, তাহলে তিনি তোমাদেরকে (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) পার্থক্য করার শক্তি দেবেন।” [ সূরা আনফাল, আয়াত ২৯]

লেখক: শাহ আলম সজীব