বিবিএন স্পোর্টস ডেস্ক: ইংল্যান্ডের দারুণ শক্তিশালী স্কোয়াড নিয়েও প্রত্যাশা ডানা মেলতে শুরু করে অনেক আগে থেকে। আসরের শুরুটা যদিও তেমন ভালো হয়নি তাদের; তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে দলটি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই ইতালিকে বিবেচনা করা হচ্ছিল ফেভারিটদের একটি হিসেবে। মাঠে আশানুরূপ ফুটবল উপহার দিয়ে অপরাজিত থেকেই ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে তারা।
সব বাধা পেরিয়ে এবার চূড়ায় ওঠার পালা। আর সেই মঞ্চে রোমাঞ্চকর এক লড়াইয়ের অপেক্ষায় ফুটবল অনুরাগীরা। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে রোববার ১১ই জুলাই মুখোমুখি হবে ইতালি ও ইংল্যান্ড। ধারণা করা হচ্ছে, উভয় দলই তাদের সেমি-ফাইনালের ফরমেশন ফাইনালেও ধরে রাখবে।
টুর্নামেন্ট জুড়েই রবের্তো মানচিনির ইতালি ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলেছে। তাই ফাইনালেও পছন্দের ফরমেশনেই দলকে সাজাতে চাইবেন তিনি। ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটও হয়তো নিজের ধরনের ওই একই কৌশল রাখবেন। কয়েকটি ম্যাচে তিনি ৫-৩-২ ফরমেশনেও দল সাজিয়েছিলেন, যদিও এই কৌশলে তার ফেরার তেমন কোনো কারণ নেই।
মাঝমাঠের লড়াইয়ে পরিষ্কারভাবেই এগিয়ে থাকবে ইতালি। আসরের শুরু থেকেই এই পজিশনে আলো ছড়াচ্ছেন চেলসি মিডফিল্ডার জর্জিনিয়ো। টুর্নামেন্টে আজ্জুরিদের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তিনি। তার দুই পাশে থাকবেন মার্কো ভেরাত্তি ও নিকোলো বারেল্লা। এই ত্রয়ীর সবচেয়ে আক্রমণাত্বক ২৪ বছর বয়সী ইন্টার মিলানের বারেল্লা। তিন জনই বল পায়ে স্বছন্দ এবং বল ধরে রেখে খেলতে দক্ষ। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের মিডফিল্ড কিছুটা রক্ষণাত্মক। ডেকল্যান রাইস ও ক্যালভিন ফিলিপস অনেকটা রক্ষণাত্মক মানসিকতার। তারা দুজন মূলত হোল্ডিং মিডফিল্ডারের কাজ করেন, যা জমাট ইংলিশ রক্ষণকে আরও শক্ত করে। আর আরেক মিডফিল্ডার ম্যাসন মাউন্ট সুযোগ তৈরি ও আক্রমভাগের সঙ্গে সমন্বয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
ইতালির মিডফিল্ডাররা দ্রুত বল সামনে বাড়িয়ে খেলতে পছন্দ করে। আর রাইস ও ফিলিপস সময় নেন এবং পাস দেওয়ার ব্যাপারে সাবধানী। মানচিনি তাই চাইবেন, তার দল যেন মাঝমাঠে শুরু থেকেই প্রভাব বিস্তার করে এবং রাইস ও ফিলিপসকে আরও পেছনে নেমে যেতে বাধ্য করে। ইতালির লক্ষ্য থাকবে চাপ ধরে রাখা যেন ইংল্যান্ড একদম নিচ থেকে খুব বেশি আক্রমণে উঠতে না পারে।
মাঝমাঠে ইতালির প্রাধান্য থাকলেও ইংল্যান্ডের আক্রমণের সেরা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে মাঠের দুই পাশ দিয়ে যেখানে তাদের দুই ফুলব্যাক আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। চোটে আক্রান্ত হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অসাধারণ খেলছিলেন ইতালির ডিফেন্ডার লিওনার্দো স্পিনাস্সোলা। আক্রমণে প্রতিপক্ষের সীমানায় ছিলেন বিপজ্জনক। তার বদলি এমেরসন পালমিয়েরি এখন পর্যন্ত খুব একটা খারাপ খেলেন নি, তবে আক্রমণে লরেন্সো ইনসিনিয়ের সঙ্গে মিলে তিনি অতটা ভয়ঙ্কর নয়।
অপর দিকে ইংল্যান্ডের রয়েছে মাঠের বাম পাশে লেফট ব্যাক লুক শ ও ফরোয়ার্ড রাহিম স্টার্লিংয়ের বিপজ্জনক জুটি। তাদের সামলাতে ইতালি রাইট-ব্যাক জিওভানি দি লরেন্সোকে দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। ইংলিশ দলের ডান দিকে ম্যানচেস্টার সিটি ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকারের শক্তি ও গতি সাউথগেটের দলের আক্রমণে যোগাবে বাড়তি শক্তি।
১৯ বছর বয়সী সম্ভাবনাময়ী ফরোয়ার্ড বুকায়ো সাকা কয়েকটি ম্যাচে আলো ছড়িয়েছেন। তবে ডেনমার্কের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে কয়েকবার পজিশন নেওয়ার ক্ষেত্রে এই আর্সেনাল ফরোয়ার্ডের অনভিজ্ঞতা ফুটে উঠেছে এবং দলের সমতাসূচক গোলে অবদান রাখার আগ পর্যন্ত তাকে কিছুটা নার্ভাসও লেগেছে। তারপরও ওই কিছু ঘাটতি ছাড়া প্রতিপক্ষ শিবিরে নিয়মিত ভীতি ছড়ানোর কাজটা দারুণভাবে করেছেন সাকা। ফাইনালেও হয়তো তার ওপর আস্থা রাখবেন সাউথগেট। তবে তার বিকল্প হতে পারেন ফিল ফোডেন কিংবা জ্যাডন স্যানচো।
আক্রমণে অবদান রাখার পাশাপাশি সাকা নিয়মিতভাবে নিচে নেমে দলের রক্ষণেও সাহায্য করছেন যা সাউথগেটকে তাকে ফাইনালের একাদশ রাখতে প্রভাবিত করতে পারে। কারন ম্যাচের পরিস্থতি অনুযায়ী প্রয়োজনে বদলি হিসেবে আক্রমণাত্মক কাউকে নামানোর মতো পর্যাপ্ত বিকল্প আছে তার কাছে।
জর্জো কিয়েল্লিনি ও লিওনার্দো বোনুচ্চি ইতালির ক্লাসিক রক্ষণের দুই প্রতীক। জুটি হিসেবে তারা দুর্দান্ত, তাদের মাঝে বোঝাপড়া ভালো, ম্যাচ পড়তে পারেন, মাঠে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় অবস্থান নেন এবং শারীরিকভাবেও তারা শক্তিশালী। ইংল্যান্ড ফরোয়ার্ড হ্যারি কেইন সাধারণত প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের বাইরে এবং তাকে মার্কিংয়ে থাকাদের চেয়ে দূরে থেকে আক্রমণে ওঠেন। তার উদ্দেশ থাকে ডিফেন্ডাররা যেন তাদের জায়গা ছেড়ে বের হয়ে আসে এবং তাতে স্টার্লিং, মাউন্ট ও সাকার জন্য ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়।
ইতালির আক্রমণ তখনই বেশি কার্যকর হয় যখন যখন দুই পাশের খেলোয়াড়রা চাপ বাড়ায় এবং তাতে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। ফলে ইম্মোবিল আটকে গেলেও উঠে আসা অন্যরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। ডান পাশের ফেদেরিয়ো চিয়েসা এবং বাম পাশের লরেন্সো ইনসিনিয়ে প্রায়ই মাঝ বরাবর দিয়ে আক্রমণে যান আর বারেল্লাও যখন তাদের সঙ্গে যোগ দেন তখন ইতালির আক্রমণের ধার বেড়ে যায় আরও।
ফাইনালে নিরঙ্কুশ ফেভারিট কেউই নয়। শিরোপার লড়াইয়ে দুই দলই কোনো অংশে কম নয়; তবে ইতালি যদি মাঝমাঠে আধিপত্য ধরে রাখতে পারে এবং ইংল্যান্ড যদি দুই প্রান্ত থেকে আক্রমণে উঠতে পারে, তাহলে নিরপেক্ষ দর্শকদের জন্য ম্যাচটি হবে উপভোগ্য। অন্যান্য বড় ম্যাচের মত এই ম্যাচেও লড়াইটা হবে তীব্র এবং শেষ পর্যন্ত কারো মুহূর্তের চোখধাঁধানো নৈপুণ্য গড়ে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য।
ইতালির রক্ষণের ঘাটতির জায়গা তাদের গতি যা ইংল্যান্ডে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে, তবে কিয়েল্লিনির সঙ্গে দ্বৈরথে যেতে কেইন হয়তো পিছপা হবেন না। বরং হয়তো আশায় থাকবেন, লড়াইকে শারীরিকভাবে ছোঁয়াটা একটু বেশি হয়ে গেলে ফ্রি-কিক কিংবা পেনাল্টিও পাওয়ার। আসর জুড়ে ইংল্যান্ডের ডিফেন্সিভ জুটি হ্যারি ম্যাগুইয়ার ও জন স্টোনস আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র একটি গোল হজম করা ইংলিশ রক্ষণের বিপক্ষে ইতালি ফরোয়ার্ড চিরো ইম্মোবিলকে দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা।(শীর্ষবিন্দু)