লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ:রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারি পারোয়ানা জারির এক দিনের মধ্যে জামিন পেয়েছেন সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত। বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন প্রার্থনা করেন নাদের বখত। জামিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতের বিচারক কুদরত ই এলাহি জামিন মঞ্জুর করেন।
তাঁর সঙ্গে একই মামলার আসামি অ্যাডভোকেট কাওসার আলমের জামিনও মঞ্জুর করেন আদালত।
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান সেলিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বুধবার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের (চার্জশীট) ভিত্তিতে মামলায় মেয়র নাদের বখতসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পারোয়ানা জারি করেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা পাসপোর্ট অফিসে নাম ও ও ঠিকানা পরিবর্তন করে পাসপোর্ট করতে আসেন দুই রোহিঙ্গা নাগরিক। তারা দুজনই সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার চারজন ব্যক্তির সহায়তায় সুনামগঞ্জে আসেন। ঘটনার দিন সকালে পাসপোর্ট করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে আসলেও বিকেলে ছবি তোলা ও আঙ্গুলের ছাপ দিতে পাসপোর্ট কার্যালয়ে গেলে তাদের কথাবার্তায় পার্সপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে দুই রোহিঙ্গা ও তাদের সহযোগী চার ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দেন তারা। ওইদিনই প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে জামালগঞ্জ উপজেলার তেরানগর গ্রামের মো. ফরহাদ আহমদ (৩৬), রামনগর গ্রামের মো. নূর হোসেন (২৩), সুজাতপুর গ্রামের মো. জসিম উদ্দিন (২৪) ও আমির উদ্দিনকে (২৩) আসামি করে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন, থানার উপ-পরিদর্শক জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদার।
পরবর্তীতে রোহিঙ্গা ও চারব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা সুনামগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সাবেক প্যানেল মেয়র হোসেন আহমদ রাসেলের সুপারিশে পৌরসভা থেকে জন্ম সনদ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ তদন্ত শেষে গেল ২১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এসময় এজহারভুক্ত চার আসামি ছাড়াও তদন্তে ৫ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুনাগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক একেএম জালাল উদ্দিন বলেন, ভুয়া জন্মসনদ দেওয়া মামলায় তদন্ত শেষে পাঁচজনের নাম অভিযুক্ত করি সেখানে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়রও রয়েছেন। আমরা জন্ম সনদে পৌরসভার মেয়র নাদের বখত ও ওই সময়ের প্যানেল মেয়র হোসেন আহমেদ রাসেলের স্বাক্ষর পেয়েছি এবং এঘটনায় আরও ৩ জনের জড়িত থাকার প্রমাণও আমরা পেয়েছি।
তবে ঘটনার ঘটনার দিন সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত সুনামগঞ্জে ছিলেন না জানিয়ে বলেন, আমি গ্রেফারি পারোয়ানা বিষয়টি জেনেছি। তবে এঘটনায় আমার কোনো সম্পৃক্তা নেই। জন্মসনদ দেওয়ার সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়াডের সাবেক কাউন্সিলর হোসেন আহমদ রাসেল। আমি ঢাকা থেকে এসব কথা জানতে পারি।