• ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

পূণ্যভুমি সিলেট থেকে আমাদের নতুন যুদ্ধ শুরু হলো:মির্জা ফখরুল

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত নভেম্বর ১৯, ২০২২
পূণ্যভুমি সিলেট থেকে আমাদের নতুন যুদ্ধ শুরু হলো:মির্জা ফখরুল

বিবিএন ডেস্ক:তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না এবং হতে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অবিলম্বে সংসদ বিলুপ্ত ও শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যথায় জনগণ তাদের দাবি কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিবে।

‘মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার ও হত্যা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে মানুষ রুখে দাঁড়াবে। এটাই এখন সংকট সমাধানের পথ।’

আজ শনিবার বিকেলে সিলেটের সরকারি আলিয়া মাদরাসার মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার বলছে সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে। কিন্তু কোন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে? যেই সংবিধান নিজের মতো বানিয়েছে সেটা দিয়ে? যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করা হয়েছে সেই সংবিধান? সেটা আমরা মানিনা।’

শনিবার সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পূণ্যভুমি সিলেট থেকে আমাদের নতুন যুদ্ধ শুরু হলো। এই লড়াইকে এখন সামনে এগিয়ে নিতে হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না এবং হতে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে সংসদ বিলুপ্ত ও শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যথায় জনগণ তাদের দাবি কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নেবে।

‘মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার ও হত্যা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে মানুষ রুখে দাঁড়াবে। এটাই এখন সংকট সমাধানের পথ।’

চাল-ডাল, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে পাঁচজনকে হত্যার প্রতিবাদ এবং দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে বিভাগীয় গণসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি।তারই ধারাবাহিকতায় সিলেটে সপ্তম গণসমাবেশ করল দলটি। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন—দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খন্দকার আবদুল মোক্তাদির, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ অনেকে। অন্যান্য সমাবেশের মতোই মঞ্চে বেগম খালেদা জিয়ার সম্মানে একটা চেয়ার ফাঁকা রাখা ছিল। সকাল ১১টার দিকে সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

 

আলিয়া মাদরাসা মাঠের আশেপাশের চৌহাট্টা, দরগাহ গেট, রিকাবি বাজার, সুবিদবাজার, জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে সমাবেশ ঘিরে শহর জুড়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন মোবাইল নেট ব্যবহারকারীরা।

এ ছাড়া গোটা সিলেট শহরে বিএনপির প্রবাসী নেতাদের বড় বড় ব্যানার ও পোস্টার ছিল চোখে পড়া মতো। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিএনপির আহ্বায়ক এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমরানুল হক চাকলাদারের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল স্মরণকালের এই বিশাল গণসমাবেশে অংশ নিয়েছেন। কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজুর সৌজন্যে খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়। যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মো. কামাল উদ্দিন, তানহা চৌধুরী তালহা, আজমল হোসেন চৌধুরী জাবেদ, সৌদি আরব প্রবাসী নেতা টিপু সুলতানসহ বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রবাসী নেতারা তাদের অনুসারীদের দিয়ে ব্যাপক শোডাউন দিয়েছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেটবাসীকে সালাম জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা নতুন যুদ্ধ শুরু করেছেন। যা ভোটের ও ভাতের অধিকার ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ। সিলেটের ইতিহাস হলো যুদ্ধের ইতিহাস। হযরত শাহজালাল সিলেটের পূণ্য মাটিতে শুয়ে আছেন। তিনি আমাদেরকে সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করে আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান ডিসেম্বর মাসে সিলেটকে শত্রুমুক্ত করেছিলেন। আজকে আধুনিক সিলেটের রুপকার এম সাইফুর রহমান কিন্তু সিলেটেরই মানুষ। সিলেটের জামাই আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন; যিনি তারেক রহমান। আজকে সিলেট থেকেই আমাদের নতুন যুদ্ধ শুরু হলো।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের কীর্তিকলাপ ও চুরি ডাকাতির কথা বলে শেষ হবে না। তারা দেশের অর্থনীতি রাজনীতি সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু আমার কৃষক শ্রমিক খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ কিন্তু শান্তিতে নেই। তেল, চিনি শাক-সবজি ও ডিমের দাম আবার বেড়েছে। তারা তাদের সন্তানকে এক বেলা ডিমও খাওয়াতে পারে না। অথচ সরকার বলেছিল—১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। কিন্তু সেটা এখন ৮০ টাকা।

‘আজকে তিন কোটি তরুণ বেকার। তাদের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। তারা দেশকে আবারও তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। আওয়ামী লীগ তো বিনা ভোটের সরকার। তারা কুত্তা মার্কা নির্বাচন ও আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জনতার আদালতে তাদের বিচার হবে। অভিযোগ হিসেবে থাকবে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষের যে লক্ষ্য ছিল সেটা জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি দেশ শাসন করবে। গণতন্ত্র থাকবে। কিন্তু তারা সেটা ধ্বংস করেছে।

‘খালেদা জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পতাকা তুলে ধরেছেন। তিনি ৯ বছর ছাত্র জনতাকে নিয়ে ৯০ সালে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। আজকে সিলেটের গণমানুষের নেতা ইলিয়াস আলী আমাদের মাঝে নেই। জানি না বেঁচে আছে কি না? তার মেয়েটা বাবার অপেক্ষায় থাকে প্রতিক্ষণ। সহধর্মিণী লুনা ভাবি কিন্তু থেমে যাননি। এলাকার লোকজনের সঙ্গে রয়েছেন। আমাদের ৬০০ নেতাকর্মী আজ নিখোঁজ। তাদের সন্তান ও অভিভাবকরা আজও অপেক্ষায় রয়েছেন। হাসিনা সরকার আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সিলেটের গণসমাবেশ ঘিরে কামালকে হত্যা করেছে। হবিগঞ্জের লাখাইয়ে প্রস্তুতি সভায় গুলি করেছে। মারধর করেছে। তারা আবার মামলা মামলা খেলা শুরু করেছে। গায়েবি মামলা দিচ্ছে। এভাবে ১৪ বছর ধরে নির্যাতন নিপীড়ন করে আসছে।’

‘বিএনপির অবস্থা হেফাজতে ইসলামের মতো করা হবে’ সরকারের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কথা পরিষ্কার- এইবার মানুষ জেগে উঠেছে। কোনো হুমকি ধামকি দিয়ে কাজ হবেনা। মানুষ আর ঘরে ফিরবে না। আমরা অধিকার আদায় করেই ঘরে ফিরব। আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেবো। আগের মতো গুলি ও মানুষ হত্যা করে আমাদের সমাবেশ ঠেকাতে পারবে না। আরও বেশি করে মানুষ উজ্জীবিত হয়ে সমাবেশে যোগ দিতে ছুটে আসছেন। সেজন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপনাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “সরকার নিজেই বাস মালিকদের দিয়ে হরতাল ডেকেছে। কিন্তু জনগণ সমুচিত জবাব দিলো সিলেটের গণসমাবেশ সফল করার মাধ্যমে। সরকার বিএনপির জনসভা ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় টাকা খরচ করছে। ‘খেলা হবে’ আওয়ামী লীগ নেতাদের এই বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, দিনের ভোট রাতে করবেন সেই খেলা বিএনপি খেলে না। ক্ষমতা থেকে নেমে আসেন বিএনপি খেলতে প্রস্তুত। প্রশাসন থেকে দূরে থেকে খেলেন। আমরা খেলতে প্রস্তুত।তৃতীয় শ্রেণির খেলোয়াড় দিয়ে খেলতে চাই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আমাদের জাইমার (তারেক রহমানের মেয়ে) সঙ্গে শেখ হাসিনা জামানত হারাবে। ১০ ডিসেম্বরের পর জনগণকে নিয়ে খেলায় নামবো।’

আবদুল মঈন খান বলেন, ‘সারা দেশে হত্যা গুম খুন অন্যায় চলছে। সেজন্য আমরা সিলেটে সমবেত হয়েছি। বাংলাদেশে আর কোনো অন্যায় চলতে দেওয়া হবে না। আমরা আবারও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো। ভোট ডাকাত সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে জনগণের হাতে দেশের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘শত ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করে তিন দিন আগে থেকেই আমাদের সমাবেশ শুরু হয়। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমার যে দাবিতে কর্মসূচি পালন করছি ইনশাআল্লাহ তা আদায় করতে সক্ষম হবো।’ গুম হওয়া এম ইলিয়াস আলীসহ নিখোঁজ নেতাকর্মীদের স্মরণ করেন তিনি।