• ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সাগর-রুনি হত্যা:১০ বছরে তদন্তই শেষ হয়নি,বিচার শুরু হবে কবে?

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত জুলাই ২৩, ২০২২
সাগর-রুনি হত্যা:১০ বছরে তদন্তই শেষ হয়নি,বিচার শুরু হবে কবে?

রাশিম মোল্লা:২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নৃশংসভাবে খুন হন। কিন্তু ১০ বছর পার হলেও এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত এখন আর দেশে নেই। তদন্ত কর্মকর্তা অজ্ঞাতনামা দুই পুরুষ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইউএসএ’র একটি ডিএনএ ল্যাব এর সঙ্গে কাজ করছেন। এই প্রতিষ্ঠানটির ডিএনএ থেকে অপরাধী/জড়িত ব্যক্তির ছবি প্রস্তুত করার সক্ষমতা রয়েছে। এজন্য ওই প্রতিষ্ঠানকে সার্ভিস চার্জ হিসেবে এক হাজার দুই শত ডলার ফিও ব্যাকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে বলে অগ্রগতি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৯শে আগস্ট উল্লেখিত পরীক্ষার অগ্রগতি বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য ইমেইল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। বলা চলে তদন্ত ঝুলে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকে কবে ফরেনসিক ও ডিএনএ প্রতিবেদন আসবে তা কেউ বলতে পারছেন না। এই মামলার যেহেতু এখনো কোনো চার্জশিট হয়নি তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পিপিও নিয়োগ দেয়া হয়নি। আদালতে মামলাটি দেখছেন জেনারেল রেকর্ড অফিসার (জিআরও)।

মামলার তদন্তকারী যেমন বদলি হয় তেমনি জিআরও বদলি হয় বারবার। তদন্তকারী নিয়মিত আদালতেও যান না। জিআরও সময় নিতে বলে দেন। জিআরও একটি মুখস্থ মৌখিক আবেদন করেন। বিচারকও নতুন সময় ধার্য করেন। এভাবে একের পর এক মামলার ধার্য তারিখ পড়ে। এখন এই মামলার জিআরও হলেন, সাব ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দিন। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, আমার কাছে যে মামলাগুলো আছে তার মধ্যে এই মামলাটিতেই সবচেয়ে বেশি সময় নেয়া হচ্ছে। আর কোনো মামলায় এতবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে বলে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। হয়তো মামলাটা সেনসেটিভ তাই এত সময় লাগছে।

 

যদিও আইনে ১২০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলা হয়েছে। তবে এটি নির্দেশনা মূলক, বাধ্যতামূলক নয়। এই সুযোগেই বছরের পর বছর সময় নিচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট সাইফুল ইসলাম সোহেল মানবজমিনকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারা অনুযায়ী একটি হত্যা মামলা ১২০ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা বলা হয়েছে। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। যে কারণে একটি মামলার তদন্ত শেষ করতে বছরের পর বছর সময় পান তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী মো. ফারুক হোসেন ৩৮ ডিএলআর ১৫২ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি দিয়ে মানবজমিনকে বলেন, তদন্ত শেষ করার সময়সীমা এজাহার প্রাপ্তির তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে তিনি জানান। অথচ ১০ বছরেও এ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তিনি বলেন, দায়রা জজ, অতিরিক্ত দায়রা জজ বা সহকারী দায়রা জজ বিচারের জন্য মোকদ্দমা প্রাপ্ত হওয়ার ৩৬০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। তদন্তই শেষ হয়নি বিচার শুরু হবে কবে, তা কেউ বলতে পারে না।

সূত্র জানায়, প্রথমে এ হত্যা মামলাটির তদন্ত শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ শুরু করে। এসআই মো. জহুরুল ইসলাম মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। বাদী ও সাক্ষীদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। ১৩ই ফেব্রুয়ারি নিহতদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন শেরেবাংলা নগর থানায় গৃহীত হয়। তদন্তকারী অফিসারের প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ পায় যে, অজ্ঞাতনামা আসামিরা ঘটনায় বর্ণিত সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনিকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যায়। চারদিন পর ১৫ই ফেব্রুয়ারি মামলাটি ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য (উত্তর) বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। ১৬ই ফেব্রুয়ারি ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে পরিদর্শক মো. রবিউল আলম মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। তদন্তকালে তিনি পুনরায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন, বাদী ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ পূর্বক সাক্ষীদের জবানবন্দি কাঃবিঃ ১৬১ ধারা মতে রেকর্ডসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এছাড়া ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য জোর তৎপরতাসহ গুপ্তচর নিয়োগ করেন। অজ্ঞাতনামা আসামিরা ঘটনার বর্ণিত সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় নিহতদেরকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। অগ্রগতি তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। এরপর ২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল হাইকোর্ট তদন্তের ব্যর্থতায় র‌্যাবকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তখন থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র‌্যাব। এই সময়ের মধ্যে র‌্যাবের পক্ষ থেকে আদালতে মামলার ১০টি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

১ম, ২য় ও ৩য় অগ্রগতি প্রতিবেদনে যা বলা হয়: ২০১৪ সালের ২০শে মার্চ কুর্মিটোলা র‌্যাব সদর দপ্তরের ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ফরেনসিক উইংয়ের সহকারী পরিচালক ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া প্রথম অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিনি সব মিলে ৭টি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রথম অগ্রগতি প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল হাইকোর্ট এ মামলার তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং আইজিপি মহোদয়ের মৌখিক নির্দেশে র‌্যাব কর্তৃপক্ষ মামলার তদন্তভার র‌্যাব সদর দপ্তরের ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ফরেনসিক উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাফর উল্লাহর ওপর অর্পণ করা হয়। আর মামলার তদন্ত তদারকি করতে ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ফরেনসিক উইংয়ের পরিচালক ও ট্রেনিং অ্যান্ড ওরিয়েন্টেশন উইং পরিচালকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত তদারকি কমিটি গঠন করেন। পরে ওই বছরের ১৯শে এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তদারকি কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঘটনাস্থল থেকে কোনো প্রকার ফুট প্রিন্ট, ফিঙ্গার প্রিন্ট সিআইডি সংগ্রহ করতে পেরেছিল কিনা তা জানার জন্য যোগাযোগ করেন। জব্দকৃত সংরক্ষিত আলামতের মধ্যে হতে ছুরি, ছুরির বাঁট, বাঁটে ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায় কিনা তার জন্য আলামত যুক্তরাষ্ট্রের ফরেনসিক ল্যাবে প্রেরণ করেন। তাছাড়া সাগর-রুনির পরনের কাপড় এবং নিহত সাগরের হাত ও পা বাঁধার কাপড়, গ্রিল, ঘটনাস্থলে পাওয়া চুল, ভাঙা গ্রিলের পাশে পাওয়া মোজা, দরজার লক, দরজার চেইন, ছিটকানি রাসায়নিক ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে প্রেরণ করেন। এছাড়া ধৃত ৮ জন আসামি ও নিহত ভিকটিমদ্বয়ের নিকটাত্মীয়সহ সন্দিগ্ধ ২১ জনের বুকাল সোয়াব (নঁপপধষ ংধিন) সংগ্রহ পূর্বক ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে প্রেরণ করেন। প্রেরিত আলামত ও ২১ জনের বুকাল সোয়াবের ডিএনএ পরীক্ষার আংশিক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তবে বিস্তারিত প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশেপাশের লোকজন, নিহতদের আত্মীয়স্বজন, নিহতদের অফিসের সহকর্মী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ সর্বমোট ১৪৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ ও পর্যালোচনা করা হয়।

অগ্রগতি প্রতিবেদনের শেষ প্যারায় বলা হয়, পূর্ববর্তী তদন্তকারী অফিসার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গমন করায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২০১৪ সালের ২০শে মার্চ আমি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করি। মামলার ডকেট পর্যালোচনা ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। পূর্ববর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে খসড়া মানচিত্র, সূচিপত্রের বিষয়ে একমত পোষণ করি। সাক্ষী খোঁজ করি। আলামত জব্দের চেষ্টা করি। বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ করে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে ডিএন পরীক্ষার রিপোর্টসহ বিস্তারিত অপরাধ চিত্রের প্রতিবেদন পাওয়ার পর তদন্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে যথাসম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাটির তদন্ত সম্পন্ন হবে।

কুর্মিটোলা র‌্যাব সদর দপ্তরের ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ফরেনসিক উইংয়ের সহকারী পরিচালক ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া দায়িত্ব নেয়ার পাঁচ মাস পর ওই বছরেরই ১১ই আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দ্বিতীয় অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন। ১৮ই সেপ্টেম্বর তৃতীয় অগ্রগতি প্রতিবেদন একই আদালতে দাখিল করেন। মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশেপাশের লোকজন, নিহতদের আত্মীয়স্বজন, নিহতদের অফিসের সহকর্মী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ আগের ১৪৯ জনের সঙ্গে একজন যুক্ত করে ১৫০ জনের সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ ও পর্যালোচনা করা হয়। দু’টি প্রতিবেদনই হুবুহু একই তথ্য সংযুক্ত করে নতুন কাগজে প্রিন্ট করে আদালতে দাখিল করেন তিনি।

৪র্থ অগ্রগতি প্রতিবেদনে যা বলা হয়: ২০১৪ সালের ৩০শে ডিসেম্বর তিন পৃষ্ঠার চতুর্থ অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন সহকারী পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া। এ প্রতিবেদনের প্রথম পৃষ্ঠার আগের প্রতিবেদনের তথ্য সংযুক্ত করা হয়। তবে প্রতিবেদনের ২য় পৃষ্ঠায় তদন্ত কার্যক্রমের কিছু নতুন তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশেপাশের লোকজন, নিহতদের আত্মীয়স্বজন, নিহতদের অফিসের সহকর্মী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ আগের ১৪৯ জনের সঙ্গে নতুন করে ৯ জন যুক্ত করে ১৫৮ জনের সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ ও পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ডিএনএ রিপোর্ট ও অপরাধ চিত্রের প্রতিবেদন বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আদালত থেকে কিছু নির্দেশনাবলী পাওয়া গিয়েছে।

সে আলোকে আসামি পলাশ রুদ্র পাল এবং আসামি এনামুল হক @ হুমায়ুনদেরকে ২ দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ভিকটিমদ্বয়ের একমাত্র পুত্র মাহির ছরোয়ার মেঘকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাকেসহ আরও সাক্ষীনূরুন্নাহার মীর্জা এবং নওয়াজীশ আলম বিমন দেবকে আদালতে হাজির করে তাদের জবানবন্দি সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারা মোতাবেক লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। আসামি পলাশ রুদ্র পালের মোবাইল সেট উদ্ধারের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘটনার পরপরই যেসব পুলিশ অফিসার এবং ফোর্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিন্তু কেউই পলাশ রুদ্র পালের মোবাইল সম্পর্কে তথ্য দিতে পারেনি।

আসামি এনামুল হক @ হুমায়ুনের মোবাইল কললিস্ট পর্যালোচনা করে তার সঙ্গে ঘটনার পূর্বে আলাপ করা ব্যক্তিদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং আরও জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। আসামি পলাশ রুদ্র পাল বা আসামি এনামুল হক @ হুমায়ুনদের মোবাইলের কললিস্ট পাওয়ার জন্য নতুন করে পরিচালক ইনটেলিজেন্স উইং মহোদয়ের মাধ্যমে মোবাইল কোম্পানিতে বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে, যা অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি। কললিস্ট পাওয়া গেলে এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ঘটনাস্থল থেকে চুরি যাওয়া ল্যাপটপের ব্যাপারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর পত্র দেয়া হয়। এ বিষয়ে বিটিআরসি আমাদেরকে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পত্র দিতে অনুরোধ করেন। ওই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে পত্র দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলার ভিকটিমদ্বয় মিডিয়াকর্মী হওয়ায় তদন্তকালে ২৭ জন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তদন্ত করা হচ্ছে।

৫ম অগ্রগতি প্রতিবেদনে যা বলা হয়: ঘটনাস্থল থেকে চুরি যাওয়া ল্যাপটপের ব্যাপারে মোবাইল কোম্পানিগুলো থেকে স্বল্প সংখ্যক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। যা পর্যালোচনা করে তদন্ত কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। মামলাটি তদন্তকালে যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাব দু’টি থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে অজ্ঞাত দুই পুরুষ ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। ওই দু’জনকে চিহ্নিত করতে ব্যাপক তদন্ত করা হচ্ছে।

৬ষ্ঠ অগ্রগতি প্রতিবেদনে যা বলা হয়: আসামি পলাশ রুদ্র পাল এবং আসামি এনামুল হকের মোবাইলের কললিস্ট পাওয়ার জন্য নতুন করে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আসামি পলাশ রুদ্র পালের ঘটনার সময় ব্যবহৃত একটি সিমকার্ডের নম্বর পাওয়া গেছে। ওই সিমকার্ডের সিডিআর প্রাপ্তির পর পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং ওই সিডিআর গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা পূর্বক তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ঘটনাস্থল থেকে চুরি যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের বিষয়ে জানানো হয়, বর্তমানে ওই ল্যাপটপটির ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় তা খুঁজে বের করা সম্ভব নয়।
৭ম অগ্রগতি প্রতিবেদনে যা বলা হয়: এ মামলার ঘটনার সঙ্গে মিল আছে এবং যাদের অপরাধ সংঘটনের প্রক্রিয়া একইরূপ সেরকম বেশ কিছু সন্দিগ্ধ আসামির একটি তালিকা প্রস্তুত করে তাদের নাম ও ঠিকানা যাচাই এবং পূর্ব ইতিহাস জানার জন্য নিজ নিজ থানায় অনুসন্ধান লিপি পাঠানো হয়। প্রেরিত অনুসন্ধান লিপিগুলো ফেরত পাওয়া গেছে। উল্লিখিত আসামিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আসামির গতিবিধি, চালচলন ও পূর্ব ইতিহাস গভীর ও নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করে তাদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

৮ম অগ্রগতি প্রতিবেদনে যা বলা হয়: ২০১৬ সালের ৩রা অক্টোবর কুর্মিটোলা র‌্যাব সদর দপ্তরের ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ফরেনসিক উইংয়ের সহকারী পরিচালক ও সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মদ ৮ম অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রীতবেদনে তিন বলেন, তদন্তকারী অফিসার সিনিয়র এএসপি মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া র‌্যাব থেকে অন্যত্র বদলি হওয়ায় ২০১৫ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর আমি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করি।
৯ম অগ্রগতি প্রতিবেদনে যা বলা হয়: ১ম থেকে ৮ম অগ্রগতি প্রতিবেদনে যেসব অগ্রগতির কথা বলা হয়, সেসব প্রতিবেদনের সারাংশ নিয়ে ৯ম অগ্রগতি প্রতিবেদন করা হয়।

১০ম অগ্রগতি প্রতিবেদনে যা বলা হয়: ২০২০ সালের ৫ই অক্টোবর কুর্মিটোলা র‌্যাব সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলম ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১০ম অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ৭ই জুলাই থেকে আমি এ মামলার তদন্ত করে আসছি। মামলাটি তদন্তকালে পূর্ববর্তী তদন্তকারী অফিসার তদন্তের আনুষাঙ্গিক কাজ করাসহ মোট ৮ জন আসামি গ্রেপ্তার করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের ৬ জন বর্তমানে জেল হাজতে আছে এবং ২ জন আসামি জামিনে আছে। তদন্তকালে অজ্ঞাতনামা পুরুষ ব্যক্তিদ্বয়কে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইউএসএ’র অপর একটি ডিএনএ ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটির ডিএনএ থেকে অপরাধী/জড়িত ব্যক্তির ছবি প্রস্তুত করার সক্ষমতা রয়েছে। এ জন্য ওই প্রতিষ্ঠানকে সার্ভিস চার্জ হিসেবে এক হাজার দুইশ’ ডলার ফি ব্যাকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৯শে আগস্ট উল্লিখিত পরীক্ষার অগ্রগতি বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য ই-মেইল প্রেরণ করেছি। কিন্তু তারা এখনো এ বিষয়ে কোনো মতামত প্রদান করেননি।(দৈনিক মানবজমিন )