• ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সুনামগঞ্জে মহা প্লাবন,উদ্ধার ও ত্রাণের জন্য হাহাকার 

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত জুন ১৭, ২০২২
সুনামগঞ্জে মহা প্লাবন,উদ্ধার ও ত্রাণের জন্য হাহাকার 
নিজস্ব প্রতিবেদক: সুনামগঞ্জে  মহা প্লাবন দেখা দিয়েছে। টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সুনামগঞ্জ জেলার ৫ টি উপজেলার অন্তত  লাখ লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সামসুদ্দোহা জানান ভারতের মেঘালয়ের চেরা পুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে এবং সুনামগঞ্জে ও নদ নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬৭৪ মিলিমিটার সুনামগঞ্জে ১৮৫  মিলিমিটার।  সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার  ৫৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে  প্রবাহিত হচ্ছে।  সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার সব কটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার সাথে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জেলার সাথেও দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা, খাসিয়ামারা, সোনালী চেলা, চিলাই নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচচে। ফলে বাড়ি ঘরে,স্কুল মসজিদে পানি প্রবেশ করেছে। উপ‌জেলার কাঁচা ঘর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। সুরমা ইউনিয়নের ভূজনা,কালিকাপুর,শরিফ পুর, কদমতলী,নুর পুর সোনাপুর  ইসলাম পুর,রাজ নগর, কাউয়া গর,শিমুলতলা এবং সদর ইউনিয়নের মাছিমপুর, মাঝের গাও,নৈগাও,তেগংগা,বরই কান্দি, ঘাঘরা,সুনদরপই বড়বন গ্রামের অবস্থা বেশি খারাপ।  ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ও বিচ্ছিন্ন।  এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশিদ জানান উপজেলার অনেক বাড়িঘর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।  নৌকা ছাড়া চলাচল করা যাচ্ছেনা।  কাজ কর্ম না থাকায় মানুষ খুব কষ্টে আছেন।  দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্ম কর্তা ফারজানা প্রিয়াংকা জানান উপজেলার ১৪   টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমি বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতদের প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ করেছি।
ছাতক উপজেলার উত্তর খুরমা,দক্ষিণ খুরমা, নোয়ারাই, ইসলাম পুর,সহ ১৩টি ইউনিয়ন ছাতক সদর ও পৌর এলাকার সড়ক ও ঘর প্লাবিত হয়েছে।  ছাতক সিলেট সড়কের ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনের সড়কে  ও অন্যান্য স্হানে পানি থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।  ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্ম কর্তা মামুনুর রহমান জানান  আমার অফিস ও বাসায় সহ সব খানেই পানি উঠেছে। পুরো শহর  জুড়েই পানি । ইতিমধ্যেই ৬ টি আশ্রয় কেন্দ্রে অন্তত,২০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের চাল ও শুকনো খাবার সহ অন্যান্য জিনিস দিচ্ছি। সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ২১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বসত বাড়িগুলোও নিমজ্জিত পানিতে।
বিশ্বমভর পুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়ন  দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের ৪৩ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে দুই শ পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা  নির্বাহী অফিসার সাদিউর রহিম জাদীদ জানান তাদের চাল,ডাল, শুকনা খাবার সহ সাড়ে ১৬   কেজি ওজনের প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্য সামগ্রি    দিয়েছি।
তাহিরপুর উপজেলার এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ১শ মিটার ডুবন্ত সড়ক পানির নিচে থাকায় সুনামগঞ্জের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।  নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় নেই।  তাহিরপুর এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান তাহিরপুর সদর,বালিজুরি,বাদাঘাট  উত্তর বড়দল দক্ষিণ বড়দল উত্তর শ্রীপুর দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বালিজুরি ইউনিয়নের আনোয়ার পুর সড়ক ও প্লাবিত হওয়ার ফলে মানুষ নৌকা যোগে পারাপার করছেন।  তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্ম কর্তা রায়হান কবির জানান সীমান্ত নদী জাদুকাটা, বৌলাই,রক্তি নদীর পানি প্রবেশ করে পানি বেড়ে চলেছে। আমরা সতর্ক রয়েছি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত জানান সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার তেঘরিয়া, বড়পাড়া,উত্তর আরপিননগর, সব্জি বাজার, জেল রোড, উকিল পাড়া,কাজির পয়েন্ট  ষোলঘর, নবী নগর,সুলতান পুর,ওয়েজখালী সহ    পৌর এলাকার ৮০   ভাগ  প্লাবিত হয়েছে।  শহরের যেসব সড়কে যানবাহন চলাচল করত এখন  নৌকা চলে ।আমি সকাল থেকেই প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। অনেক ঘর বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। তাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করে রেখেছি।  কিছু মানুষ  ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষতা প্রতিষ্ঠানের আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে  পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের   ত্রাণ সহ অন্যান্য জিনিস দিচ্ছি।
সুনামগঞ্জ কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, ১২ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবারের বন্যায় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন।  জেলা মৎস্য কর্ম কর্তা সুনীল মন্ডল জানান গত বন্যায় মৎস্য খাতে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এবার ও দুই হাজার পুকুরের মাছ ও এক কোটি পিছ পোনা ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১০ কোটি টাকা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান জানান, আমার অফিসে পানি অনেক উপজেলার অফিসে পানি প্রবেশ করেছে। অনেক বিদ্যালয়ে পানি আবার অনেক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে আবার কোন জায়গায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাই পাঠদান বন্ধ  রয়েছে ।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বিভিন্ন বন্যা উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সকল ইউএনও দের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।  এ পর্যন্ত ২৪৫ মেট্রিকটন চাল, শুকনো খাবার,খাবার স্যালাইন, মোমবাতি দিয়াশলাই সহ অন্যান্য জিনিস বরাদ্দ প্রদান করেছেন। এছাড়াও নগদ ৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছেন।
বন্যা আক্রান্ত এলাকায় অনেক টিউবওয়েল পানির নিচে থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
ফলে ডায়রিয়াসহ নানা পানি বাহিত রোগের আশঙ্ক
 করছেন। হাওর অঞ্চলে প্রচন্ড ঢেউয়ের ফলে বাড়িঘর ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মানুষ তাদের ঘর বাড়ি রক্ষার জন্য হাওরের বন বাদার দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছেন।  অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বিশেষ করে দিনমজুর গণ খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। অধিকাংশ বসতঘর পানিতে নিমজ্জিত থাকায় চুলা ও ডুবে গেছে ।ফলে খেয়ে না খেয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বানভাসি মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা অপ্রতুল।