• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

টাঙ্গাইলে ইউএনওর বিরুদ্ধে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত এপ্রিল ৯, ২০২২
টাঙ্গাইলে ইউএনওর বিরুদ্ধে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

 

বিবিএন ডেস্ক: টাঙ্গাইলের বাসাইলের সাবেক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন এক কলেজছাত্রী। বিয়ের প্রলোভনে ওই কর্মকর্তার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মর্মে কলেজছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ ও তার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশও দিয়েছেন।

তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় বিচার না পাওয়া ও প্রাণহানির শঙ্কায় দিন পার করছেন বলে জানান ওই কলেজছাত্রী। বর্তমানে মো. মনজুর হোসেন (পরিচিতি নং-১৭৩০০) কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র ও কলেজছাত্রীর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ইউএনও থাকাবস্থায় মনজুর হোসেনের সঙ্গে সঙ্গে পরিচয় হয় ওই কলেজ ছাত্রীর। একপর্যায়ে নির্বাহী কর্মকর্তা ওই কলেজ ছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বাসাইল সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান। সেখানে বিয়ের প্রলোভনে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।

ইউএনওর বিয়ের আশ্বাসে অন্যত্র বিয়ের সব প্রস্তার নাকচ করে দেন কলেজছাত্রী ও তার পরিবার।

একপর্যায়ে ওই কলেজছাত্রী ও ইউএনও টাঙ্গাইল কুমুদিনী কলেজের সঙ্গে পাওয়ার হাউসের পেছনে একটি বাসায় একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তারা দুই মাস বসবাস করার সময় একাধিকভার ধর্ষণের অভিযোগ করেন ওই কলেজছাত্রী।

একপর্যায়ে কলেজছাত্রী বিয়ের ও সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দিতে ইউএনওকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। পরে তারা দুজনে ভারত থেকে ফিরে বিয়ে করবেন বলেন আশ্বাস দেন।

গত ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে সরকারি (এসিল্যান্ডের ব্যবহৃত) গাড়িতে তার পরিচিত জোবায়েত হোসেন, গাড়িচালক বুলবুল হোসেন ও দুই আনসারসহ বেনাপোলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। গাড়িচালক ইউএনও, ওই কলেজছাত্রী ও জোবায়েতকে বেলাপোল সীমান্তে নামিয়ে দিয়ে চলে আসেন।

পরে ১২ অক্টোবর তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এর পূর্বে ভারতে অবস্থানকালে ইউএনও একাধিকবার ওই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ইউএনও মনজুর হোসেন ওই কলেজছাত্রীকে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। পরবর্তী সময় বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে ওই কলেজছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে গাড়িচালক বুলবুল হোসেন বলেন, আমি শুধু আমার তৎকালীন বসের হুকুম পালন করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি ওই কলেজছাত্রীসহ তিনজনকে বেনাপোল সীমান্তে পৌঁছে দিয়েছি। এর আগেও ওই নারী ইউএনও স্যারের বাসভবনে এসেছেন।

এ বিষয়ে জানতে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেন আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। মনজুর হোসেন বিবাহিত হয়েও তিনি অবিবাহিত পরিচয় দিয়েছেন। আমি সরল মনে তার কথা শুনে বিশ্বাস করেছি। তিনি শুধু আমাকে ব্যবহারই করেছেন, সামাজিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। আমি আমার প্রাপ্য অধিকার চাই।

এ বিষয়ে কলেজছাত্রীর মা বলেন, ইউএনও মো. মনজুর হোসেন আমার মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমরা সামাজিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার মেয়ে কলেজে যেতে পারছে না। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এর সঠিক বিচার চাই।

অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও মনজুর হোসেন এর কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে আমি দেখতেছি বলে ফোনটি কেটে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি।

বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেন বাসাইল থেকে চলে যাওয়ার পর আমাকে একদিন ফোন করে জানান, একটি মেয়ে আমার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি আপনি একটু দেখেন। আমি ওই মেয়েটির সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমি আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুহানা নাসরিন বলেন, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বলা যাবে কে দোষী, কে নয়।(যুগান্তর)