• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

ছাতকে গেইট নির্মাণ করেই একজনের নাম লিখে নিলেন স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা: এলাকায় উত্তেজনা

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত অক্টোবর ৮, ২০২১
ছাতকে গেইট নির্মাণ করেই একজনের নাম লিখে নিলেন স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা: এলাকায় উত্তেজনা
নিজস্ব প্রতিবেদক: সুনামগঞ্জের ছাতকে প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুল এন্ড কলেজে প্রতিষ্ঠাতার নামকরণ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গ্রামবাসীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হলেও গেইট নির্মাণ করে একজন প্রবাসীর নাম বসিয়ে দেয়ায় এ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এতে যে কোন সময় এলাকায় দু’টি পক্ষের মধ্যে ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষসহ অনাকাঙ্খিত ঘটনা। মানুষের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি দ্রুত নিস্পত্তি করে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।
জানা যায়, ১৯৯৫ সালে উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বুরাইয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় বুরাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়। বুরাইয়া গ্রামের সাধারণ জনগন, প্রবাসী এবং আশপাশ গ্রামের মানুষের আর্থিক অনুদানে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। প্রায় পনেরো বছর পর ২০১০ সালে বিদ্যালয়টি স্কুল এন্ড কলেজে রুপান্তরিত হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এমপিওভূক্তি পর্যন্ত শিক্ষক বেতন ও প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় ব্যয় গ্রামবাসী ও প্রবাসীরা বহন করে। পরবর্তীতে কলেজে রুপান্তরিত হলেও শিক্ষকের বেতনসহ ওই গ্রামবাসী, প্রবাসীসহ আশপাশের মানুষ বহন করে আসছে। বিদ্যালয়টি প্রথমে ৩০ শতক জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে স্কুল এন্ড কলেজের আয়তন প্রায় চার একর। এসব জমি গ্রামবাসী, প্রবাসী ও আশপাশ গ্রামের মানুষরা দান করেন। প্রতিষ্ঠানের পাশে যেসব প্রবাসীদের জমি ছিলনা তারা সাড়ে ৭শতক জায়গার সমমূল্য স্কুলে প্রদান করেন। সকলের আর্থিক অনুদানেই প্রতিষ্ঠিত হয় বুরাইয়া স্কুল এন্ড কলেজ।
২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর বুরাইয়া স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা নামকরণ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর অনুলিপি সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, ছাতক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও দোলারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া হয়। বুরাইয়া পূর্ব পাড়া গ্রামের পঞ্চায়েত পক্ষের শেখ আবু সুফিয়ান, জুবায়ের আহমদ, ছরওয়ার হোসেন, মন্তাজ আলী, খছরু মিয়া ও আবদুল মনিরসহ ৩৭জনের স্বাক্ষরিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মানিক মিয়া বুরাইয়া স্কুল এন্ড কলেজের সীমানা প্রাচীর ও গেইট প্রদান করেন। গেইট ও সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ হওয়ার পর অধ্যক্ষ, পরিচালনা কমিটি বা জেনারেল কমিটির মতামত না নিয়েই কয়েকজন ব্যক্তির মাধ্যমে গেইটে বুরাইয়া স্কুল এন্ড কলেজ নামের সাথে প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মানিক মিয়া এবং সৌজন্য বসুন্ধরা সমাজ কল্যাণ সংস্থা লিখা হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা একজন ব্যক্তির নামে নাম করণ হওয়ায় গ্রামবাসী, প্রবাসী ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষের আর্থিক অনুদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানানো হয়।
এর প্রেক্ষিতে ছাতক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পুলিন চন্দ্র রায় পরিদর্শন শেষে গত ২৯ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করেছেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সিলেট শিক্ষা বোর্ড এর ১৬.০৬.২০০৯ইং তারিখের প্রবিধানমালার ২(ছ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মানিক মিয়া এককভাবে প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার সুযোগ নেই। তবে তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং প্রতিষ্ঠাকালিন থেকে পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, মানিক মিয়ার নাম গেইটে ব্যবহার করার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেই। এলাকাবাসীসহ প্রবাসী বিভিন্ন জনের ভূমি প্রদান ও আর্থিক সহায়তায় বুরাইয়া স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গেইটে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মানিক মিয়ার নাম ব্যবহারে এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিও বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই দ্রুত মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠান নামকরণের বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারভূক্ত নয়। তার পরও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।