লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ: জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কঠোর বিধি নিষেধ উপেক্ষা করেই সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদীর পাশে শ্রী অদ্বৈত মহা প্রভুর জন্ম ধামে গতরাত ৮ এপ্রিল থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার নারী পুরুষ সমবেত হন। এ সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিপিএম তাদের অধীনস্থ দের কঠোর ভাবে নির্দেশ দেন যাতে করোনার মধ্যে এ বছর ধর্মীয় এ অনুষ্ঠান না করা হয়। তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও শ্রী অদ্বৈত জন্ম ধাম কমিটির সভাপতি করুনাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ , অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্ম কর্তা আব্দুল লতিফ তরফদার, শাহ আরেফিন মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলম সাব্বির, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ মাইকিং করে অনুরোধ করেন। কিন্ত কে শোনে কার কথা । ভোরে নির্ধারিত সময়ে হাজার হাজার নারী পুরুষ শিশুরা পুণ্য স্নান ঠিকই করেছেন। এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন আমি গভীর রাত পর্যন্ত থেকে তাদের নিষেধ করি ,পুলিশ ও জন প্রতিনিধি গণ ও নিষেধ করেন। তারপর ও কিছু মানুষ সকালে স্নান করেন। তিনি বলেন পরে সবাই অবশ্য চলে গেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান করুনাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন আমাদের চেষ্টার কোন কমতি ছিল না কিন্ত সম্ভব হয়নি। শাহ আরেফিন মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলম সাব্বির জানান ঔরসে আসা লোকজন কে আমরা আগেই জানিয়ে দিয়েছি এ বছর বন্ধ থাকবে তাই বন্ধ আছে।
দ্বিতীয় দফায় বৈশিক মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এবারও সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী জাদুকাটা নদীর তীর ৭০০ বছরের ঐতিয্যবাহী হযরত শাহ আরেফিন(রাঃ) এর বাৎষরিক ওরস ও সনাতন হিন্দু ধর্মালম্ভীদের পণতীর্থ স্মৃতিধামে স্নানযাত্রা মহোৎসব ও বারণী মেলা বন্ধের জন্য আগেই জানান হয় ।

। জানাযায়, ৭০০ বছরের অধিক সময় ধরে একই দিনে একই সময়ে দুই ধর্মের দুই আধ্যাত্বিক মহা সাধক ৩৬০ আউলিয়া হযরত শাহজালাল(রাঃ) এর সফর সঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন(রাঃ) বাৎষরিক ওরস শরিফ
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী জাদুকাটার পূর্ব তীরে ভাতর-বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্ট লাগোয়া শাহিদাবাদ এলাকায় ও সনাতনধর্মালম্বী হিন্দুদের মহাপ্রভু লাউড় রাজ্যের নবগ্রাম রাজারগাও অদ্বৈত আচার্য্য ঠাকুরের আবির্ভাবস্থল অদ্বৈত আখড়া ধামে যাদুকাটা নদীর পণতীর্থ স্নানযাত্রা মহোৎসব ৮ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে ৯ এপ্রিল শুক্রবার পর্যন্ত শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এবার দ্বিতীয় দফা বৈশিক মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে জেলা প্রসাশকের নির্দেশক্রমে আয়োজক কর্তৃপক্ষ ওরস ও স্নানযাত্রা উৎসবসহ এর স্থলে অনুষ্ঠিত বারণী মেলা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করেদেন। সেই সাথে গত ৩১ মার্চ থেকে ২ সপ্তাহের জন্য ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক সভাসমাবেশ ও সকল বিবাহ অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসন। গেলো বছরে প্রথম দফা লকডাউন চলায় জেলা প্রসাশকের নির্দেশক্রমে আয়োজক কর্তৃপক্ষ সকল অনুষ্ঠান বাতিল করেছিলেন। । প্রতিবারের মতো এবারও চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদদশীতে ২৫ চৈত্র, ৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার শেষরাত্রি ০৫/৫৭/১০ সে. গতে ২৬ চৈত্র, ৯ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ০৬/৩৬/৮ সে. এর মধ্যে মহাবারুণী স্নানযাত্রা মহোৎসব বন্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য :বুধবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় সর্ব সম্মতিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হযরত শাহ আরেফিস (রা:) এর ওরস শরীফ ও পণতীর্থ গঙ্গাস্নানে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়। সেই প্রেক্ষিতে লাখ লাখ লোকের সমাগম হতে দিলে করোনার বিস্তার ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। তাই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলা গত ৩১ মার্চ এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে হযরত শাহ আরেফিস (রা:) এর ওরস শরীফ ও পণতীর্থ গঙ্গাস্নান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও আগামী দুই সপ্তাহ জেলায় যেকোন ধরেন সভা-সমাবেশ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবলু বলেন, আগামী কাল ৯ এপ্রিল হযরত শাহ আরেফিস (রা:) এর ওরস শরীফ ও পণতীর্থ গঙ্গাস্নান হওয়ার নির্ধারিত তারিখ ছিল। কিন্তু গতবারের ন্যায় এবারও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও সংক্রমণ ঠেকাতে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কক্ষে এক সভায় সকলের সম্মতিক্রমেই প্রশাসন হযরত শাহ আরেফিস (রা:) এর ওরস শরীফ ও পণতীর্থ গঙ্গাস্নান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সভায় হিন্দু মুসলিম দুুুুই সম্প্রদায়ের নেেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন সেক্টরের নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম কর্মী গণ উপস্থিত ছিলেন।