• ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১২ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

হোম অফিসের নতুন নিয়ম রিভিউ করার দাবীতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর ক্যাম্পেইন শুরু

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত জুলাই ১২, ২০২৩
হোম অফিসের নতুন নিয়ম রিভিউ করার দাবীতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর ক্যাম্পেইন শুরু

বিবিএন ডেস্ক: যুক্তরাজ্য: হোম অফিসের নতুন নিয়ম রিভিউ ও পরিবর্তনের দাবীতে যুক্তরাজ্যব্যাপী স্বাক্ষর ক্যাম্পেইন শুরু করেছে যুক্তরাজ্যে পড়তে আসা প্রাক্তন ও বর্তমান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পেইনে যুক্তরাজ্যের ৭৬টি শহরে, ৩১৮টি কাউন্সিলে একশো হাজার স্বাক্ষর নেওয়া হবে।

শুক্রবার (২৩ জুন) পূর্ব লন্ডনের লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে এ স্বাক্ষর ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রাক্তন ও বর্তমান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, ইউকে’।

সংবাদ সন্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, ইউকে’র পক্ষ থেকে উপস্থিত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হাসনাত আরিয়ান খান বলেন, “জানুয়ারি ২০২৪ সাল থেকে বিদেশি বা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা তাদের স্পাউসকে (বউ,বাচ্চা, স্বামী) যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসতে পারবেনা এই মর্মে সরকার একটি নতুন নিয়ম বা আইন করেছেন। এই নতুন নিয়মটি স্পষ্টতই আবেদনকারীর মানবাধিকারের পরিপন্থী। তাই এই নতুন নিয়ম বা আইনটি কার্যকর হওয়ার আগেই আবেদনকারীর মানবাধিকারের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিবেচনা করে হোম অফিসকে নতুন নিয়মটি পর্যালোচনা করতে এবং সবদিক বিবেচনা করে আইনটি পরিবর্তন করতে পযধহমব.ড়ৎম তে ‘টৎমবহঃষু ৎবারবি ঃযব হবি ৎঁষব ঃড় ংঃড়ঢ় ড়াবৎংবধং ংঃঁফবহঃং নৎরহমরহম ভধসরষু ঃড় টক ধহফ পযধহমব রঃ’ এই শিরোনামে আমরা একটা পিটিশন করেছি। অনুগ্রহ করে এই পিটিশনে সবাইকে স্বাক্ষর করার বিষয়ে অবগত করতেই আমরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্পাউস আনা বন্ধ করতে হোম অফিসের নতুন নিয়ম পর্যালোচনা করার জন্য পিটিশনে স্বাক্ষর অভিযান এখান থেকে শুরু করা হচ্ছে। আপনারা জানেন পিটিশনে ১০,০০০ মানুষ সাইন করলে কতৃপক্ষ এই আবেদন আমলে নিবেন এবং আলোচনার জন্য আমাদেরকে ডাকবেন। আর ১,০০০০০ মানুষ সাইন করলে কতৃপক্ষ এই আবেদন মন্জুর করবেন বা নতুন করে পার্লামেন্টে এই আবেদন নিয়ে ডিবেট করবেন। বিষয়টি খুবই জরুরি।”

তিনি বলেন,  “বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার একটা সুযোগ করে দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। আর সেজন্যই যুক্তরাজ্যে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা আসছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। সংখ্যার দিকে থেকে চীন, মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়ার শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যে আসার শীর্ষে অবস্থান করলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও প্রচুর শিক্ষার্থী উচ্চতর পড়াশোনা করতে যুক্তরাজ্যে আসছেন। বিশেষত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটান থেকেও অসংখ্য শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আসছেন। এসব বিদেশি ছাত্রছাত্রী আসায় ব্রিটিশ সরকারের হারানোর কিছু নেই। ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি দিয়েই আসেন। যতদিন তারা এখানে শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, ততদিন তারা স্বনির্ভর হয়েই অবস্থান করেন। এসব শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব রাখেন না। শিক্ষার্থীরা বরং যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখেন।”

উদাহরণস্বরুপ তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সামগ্রিকভাবে যুক্তরাজ্যের বিশাল বাজেটে ৪১ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ডের অবদান রেখেছেন, যা ২০১৮—১৯ সালে ৩১ দশমিক ৩ বিলিয়ন পাউন্ড থেকে ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাজ্যের শুধু শেফিল্ড শহরেই বিদেশি শিক্ষার্থীরা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে ২৯০ মিলিয়ন পাউন্ড অবদান রেখেছেন। এছাড়া নর্টিংহ্যাম সাউথে ২৬১ মিলিয়ন, হলবর্ণ অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাসে ২৪৩ মিলিয়ন, নিউক্যাসলে ২৪০ মিলিয়ন, ইস্টহ্যামে ২১৭ মিলিয়ন, ক্যামব্রিজে ২১৪ মিলিয়ন, কার্ডিফে ১৮১ মিলিয়ন ও গ্রাসগ্লোতে ১৭১ মিলিয়ন পাউন্ড অবদান রেখেছেন।  যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বিদেশি

শিক্ষার্থীদের এ অবদান তৃতীয় বৃহত্তম প্রভাব হিসেবে উল্লেখ করে ১৬ মে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। উপরন্তু

শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন কাজ করে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মী সংকট নিরসনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। অথচ স্টুডেন্ট ভিসাকে  সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান এমন হিসেবে উল্লেখ করছেন যেনো, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যের  জন্য বোঝা হয়ে গেছেন!”

মিসেস ব্র্যাভারম্যান বলেছেন: “আমরা দেখেছি যে শিক্ষার্থীদের স্পাউসের সংখ্যা অভূতপূর্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। “আমরা অভিবাসন সংখ্যা কমাতে পারি এবং নেট মাইগ্রেশন কমানোর জন্য ব্রিটিশ জনগণের কাছে সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারি তা নিশ্চিত করার জন্য এই রুটটি আরও কঠোর করার সময় এসেছে। সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানের বক্তব্য শোনে আমরা খুবই হতাশ হয়েছি। অভিবাসন নিয়ে তাঁর নতুন ঘোষণার ফলে যুক্তরাজ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসবাসের জন্য স্বামী/স্ত্রী/সঙ্গী ও সন্তানরা আবেদন করতে পারবেন না। একটা সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। কিন্তু সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান শিষ্টকে দমন করে দুষ্টকে লালন করছেন। তিনি স্ক্যামিং এর সাথে জড়িত ব্যাক্তি, অসাধু এডমিশন কনসালটেন্ট ফার্ম ও অসাধু সলিসিটরস ফার্মের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিশ্বস্ত শিক্ষা এজেন্টদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউনে না গিয়ে উল্টো ভিক্টিম ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তিনি আরও বলেন,  “হোম অফিসের নতুন এই নিয়ম আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা কঠিন করে তুলবে। অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এমন দেশ থেকে আসেন যেখানে পরিবারকে অত্যন্ত গুরুত্ব ও মূল্য দেওয়া হয়। উচ্চতর পড়াশোনা করতে এসে স্পাউসদের সাথে আনতে না পারলে তা শিক্ষার্থীদের মানসিক যন্ত্রণার কারণ হবে। এতে তাদের শিক্ষা জীবন ব্যাহত হবে। নতুন এই নিয়ম যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই, আমরা সম্মানের সাথে হোম অফিসকে এই নতুন নিয়মটি পর্যালোচনা করতে এবং আন্তর্জাতিক ছাত্রদের এবং তাদের পরিবারের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিবেচনা করে পরিবর্তন করার জন্য অনুরোধ করছি। এবং এই পরিবর্তনের জন্য আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে মাত্র ১ মিনিট সময় ব্যয় করে আমাদের অনলাইন পিটিশনটি সাইন করার অনুরোধ করছি।”

সাংবাদিক সমাজের সহযোগিতা চেয়ে তিনি আরও বলেন,  “আমরা ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যরা আজ থেকে ১২টি দলে ভাগ হয়ে এই ‘পিটিশন সাইন ক্যাম্পেইন’ পরিচালনা করছি। প্রথমে আমরা যুক্তরাজ্যে বসবাসরত আন্তর্জাতিক কমিউনিটির মানুষের কাছে যাচ্ছি। আমরা আমাদের নিজ নিজ কমিউনিটির মানুষের কাছে যাচ্ছি। বাঙালি কমিউনিটির মানুষ হিসেবে আমি তৃতীয় বাংলাখ্যাত বিলেতের বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে এ এসেছি। পর্যায়ক্রমে আমরা লোকাল কমিউনিটিসহ যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অন্যান্য কমিউনিটির মানুষের কাছে যাবো। উইকেএন্ডে আমাদের একটা টিম বাসায় বাসায় লিফলেট বিলি করবে। আপনাদের যেকোন পরামর্শ থাকলে আমাদেরকে দিবেন, আমাদেরকে আপনারা সহযোগিতা করবেন। আপনারা অতীতেও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন। এখনো আছেন। আশাকরি অতীতের মত ভবিষ্যতেও এভাবে আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন। হোম অফিসের এই নতুন নিয়মটি যে আবেদনকারীর মানবাধিকার পরিপন্থি ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং এটা যে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্যও খুবই ক্ষতিকর আপনারা তা মিডিয়ায় ভালোভাবে তুলে ধরবেন। পযধহমব.ড়ৎম সাইটে গিয়ে মাত্র এক মিনিট সময় ব্যয় করে পিটিশনটিতে সবাই স্বাক্ষর করবেন ও শেয়ার করবেন এবং অন্যদের স্বাক্ষর ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে শেয়ার করতে উদ্বুদ্ধ করবেন। সর্বোপরি পিটিশনে একশো হাজার মানুষের স্বাক্ষর পেতে পিটিশনটিকে সবাই পযধহমব.ড়ৎমতে প্রমোট করবেন এবং হোম অফিসের নতুন নিয়মটি পর্যালোচনা ও পরিবর্তন করতে আপনারা আমাদেরকে সহায়তা করবেন।”সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  “এরপর তাঁরা পিটিশন নিয়ে এমপিদের কাছে যাবেন। প্রয়োজনে তাঁরা আদালতে যাবেন। আদালতে আইনজীবীদের একটা চৌকস দল তাদের সহায়তা করবেন।” এসময় আইনজীবী দলের ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, ক্যাম্পেইন সমর্থনকারী মানবাধিকার সংগঠন ‘ইকুয়েল রাইটস ইন্টারন্যাশনাল’ এর প্রেসিডেন্ট মাহবুব আলী খানশূর, নর্থামব্রিয়া ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টস রিপ্রেজেন্টটিভ ও ক্যাম্পেইনার মোহাম্মদ হাসান শোয়াইব অনন্ত প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষর ক্যাম্পেইনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।