• ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

বিশ্ব মিডিয়ায় দিরাই উপজেলার দবিরুল চাচা,একাই দুইশত হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেছেন

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত অক্টোবর ৪, ২০২০
বিশ্ব মিডিয়ায় দিরাই উপজেলার দবিরুল চাচা,একাই দুইশত হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেছেন

এ এম সমুজ, বিবিএন নিউজঃ শত বছর বয়সে একাই দুইশত হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করে বৃটেনে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দিরাই উপজেলার কৃতি সন্তান  শতবর্ষী দবিরুল চাচা।

আমাদের গর্ব দবিরুল ইসলাম চৌধুরী যিনি ব্রিটিশ মূলধারার মিডিয়ার কল্যাণে আজ ব্রিটেনের জাতীয় চাচা!

সবাই তাকে এক নামে ডাকেন  দবির চাচা! চ্যানেল এস রামাদান ফ্যামিলি কমিটমেন্ট (আরএফসি)-এর ভিত্তিতে রোজা রেখেই পুরো গার্ডেনের একপাশ থেকে অন্য পাশে হাঁটার যাত্রা শুরু করেন ২৬ এপ্রিল। মাত্র ১ হাজার পাউন্ডের টার্গেট নিয়ে তার সূচনা হলেও আজ তিনি একাই  দুই শত হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করে বৃটেনের মুল ধারার আলোচনায়।

১৯২০ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটের দিরাই থানার কুলঞ্জ গ্রামে জন্ম নেন দবিরুল। তরুণ বয়সে সিলেটের এমসি কলেজে ভর্তি হতে নিজ গ্রাম দিরাই থেকে ঘোড়ায় চড়ে এসেছিলেন, যা সবাইকে চমকে দিয়েছিল সে সময়। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ার জন্য ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন ১৯৫৭ সালে।

কিন্তু কখনোই দেশকে ভোলেননি। নিয়মিত দেশে নানা রকম জনকল্যাণমূলক কাজে টাকা পয়সা দিতেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তহবিল জোগাড়ে অগ্রণী ছিলেন। বললেন, ‘গাড়ি চালিয়ে অন্য নেতাদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পেইনের জন্য এখানে-ওখানে ছুটে বেড়িয়েছি। এখন করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে আবারও মাঠে আছি।’

বয়স ১০০ বছর কবি দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর। বলেছিলেন রোজা রেখে হাঁটবেন ১০০ পা। শতবর্ষেও তরুণ বলা চলে ব্রিটিশ বাংলাদেশি দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে। লম্বা গড়নের মায়াবী হাসির এই প্রবীণ মানুষটি যে মনমেজাজে তরুণ। তারই প্রমাণ দিলেন এই রমজানে ইস্ট লন্ডনে বাসার বিশাল এস্টেট গার্ডেনে ১০০ পা হাঁটার কর্মসূচি ঘোষণা করে।

তবে উদ্যোগটা নিয়েছিলেন শতবর্ষী ব্রিটিশ কর্নেল টমকে দেখে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীরসেনানী তিনি। করোনার দুর্যোগকালে যিনি ২৯ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) ফান্ডে জমা দিয়েছেন। সেই টমকে নিয়ে আলোচনায় ছিল বিশ্ব মিডিয়া। সেই বিশ্বমিডিয়ায় ভাগ বসালেন আমাদের দবিরুল চাচা।

শক্ত শারীরিক গঠন। আর তাই চ্যারিটির মাধ্যমে করোনায় বিপর্যস্ত মানবতার পাশে দাঁড়াতে চান তিনি। তহবিল সংগ্রহ অভিযানের দিকে মানুষকে আগ্রহ করে তুলতেই তার এই হাঁটাহাঁটি। তিনি

বলেন, এই ফান্ড বাংলাদেশ ও ব্রিটেনে করোনা আক্রান্তদের জন্য খরচ করা হবে।  বিবিসি তাকে নিয়ে বিশেষ রিপোর্ট করেছে। গার্ডিয়ান, মেট্রোসহ ব্রিটিশ মূলধারার পত্রিকাগুলো শতবর্ষী এই কীর্তিমান বাংলাদেশির মানবিক গুণাবলি তুলে ধরছে। আগ্রহ তৈরি হয়েছে ব্রিটিশদেরও, অনেকেই দবির চাচার অনলাইন ফান্ড রেইজে ডোনেশন করছেন। বারবারাহ নামের এক ব্রিটিশ মহিলা ডোনেশন করে লিখেছেন, ‘আপনি আমাদের অনুপ্রেরণা!’ কেটি নামের আরেকজন লিখেছেন, ছোট ডোনেশন, তবুও আপনার উদ্যোগ দেখে হাত বাড়াতে মন চাইল! এমন ছোট ছোট হাজার কমেন্টে ভরপুর দবির চাচার ফান্ড রেইজিং পেজ।

চাকরি, ব্যবসা ও সমাজসেবা সবকিছুতেই অগ্রসর ছিলেন দবির চৌধুরী। সব সময়ই সাহসী ও উদ্যোমী। ষাটের দশকে চালকের আসনে বসে গাড়ি চালিয়ে লন্ডন থেকে সিলেট গিয়েছিলেন। তরুণ বয়সে সিলেটের এমসি কলেজে ভর্তি হতে নিজ গ্রাম দিরাই থেকে আসেন ঘোড়ায় চড়ে। দেখেছেন চার প্রজন্ম ব্রিটিশ-ভারত, পাকিস্তান আমল, বাংলাদেশ এবং আবারও ব্রিটিশ। বললেন, জীবনে কত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি, কিন্তু করোনার মতো অজানা বিপদ দেখেননি কখনো। তিনি আরও বলেন, আমি নিজে গাড়ি চালিয়ে অন্যান্য নেতাদের নিয়ে ’৭১ সালে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পেইনের জন্য এখানে-ওখানে ছুটে বেড়িয়েছি। আজ করোনাভাইরাসের এই যুদ্ধে আবারও মাঠে আছি, পাশে চাই আপনাদের। চ্যানেল এস-এর ফাউন্ডার মাহি ফেরদৌস জলিল বলেন, দবির চৌধুরীর উদ্যোগ বড় মনের পরিচয়। তার সাহস আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আর তাকে সম্মান জানানো, উৎসাহ দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।
আরএফসির সমন্বয়ক এবং চ্যানেল এস-এর হেড অব প্রোগ্রামস ফারহান মাসুদ খান বলেন, আমরা সমাজের নানা পর্যায়ের সফল এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের আরএফসি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে পেয়েছি, কিন্তু এক অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন আমাদের প্রবীণ মুরব্বি দবিরুল চৌধুরী।

উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে এই ফান্ড কালেকশনের টাকা বৃটেনের ন্যাশনাল হেল্থ সার্বিস এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত তহবিলে দান করা হয়েছে।