নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সঃ আমাদের জন্য রোলমডেল। তিনি বিশ্বনেতা, বিশ্ববাসীর জন্য রহমত। তিনি নির্দিষ্ট কোন জাতি গোষ্ঠীর নেতা নন বরং দুনিয়ার সব জাতী গোষ্ঠীর একমাত্র অনুসরণ যোগ্য নেতা। তার মান, মর্যাদা, শান শওকত আকাশচুম্বী। তিনি মর্যাদায়, শ্রেষ্ঠত্বে, আভিজােত্য ও চারিত্রিক সৌন্দর্যে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত। সুতরাং অবিশ্বাসীরা কিছু বললেই তার মান, মর্যাদা ভুলন্টিত হয়ে যায় না।
ফ্রান্স সরকারের মদদে সে দেশের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন চার্লি হিবডোর, অক্টোবরের সংখ্যায় প্রিয় নবীজীর ব্যংঙ্গ চিত্র প্রকাশ করে। সেই ব্যঙ্গ চিত্রটি আবার সামুয়েল প্যাটি নামক একজন স্কুল শিক্ষক ক্লাসের ছাত্রদের মাঝে ব্যঙ্গ করে উপস্থাপন করে। পরিকল্পিত ভাবে বিশ্ব মুসলিমদের উস্কে দেয় এই ঘঠনা। তাদের উদ্দেশ্যে হলো নবী করীম সঃ কে নিয়ে হাসি, তামাসা, টাঠ্রা, বিদ্রূপ করা। এটি মুসলিম বিদ্ধেসী, অবিশ্বাসী কাফেরদের সুদুর প্রসারী পরিকল্পনার অংশ। কিন্তু আমরা মুসলিমরা কি তা বুঝি? তারা তাদের হীন উদ্দেশ্য নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক সামনে এগুচ্ছে। আর আমরা নিজেদের মধ্যে হানাহানি আর দলাদলি করছি।
ইতিহাস সাক্ষী, মুসলমানরা যতদিন ঐক্যবদ্ধ ছিল ততদিন তারা মুসলিম অমুসলিম সবার নেতৃত্ব দিয়েছে। বিশ্ব জুড়ে ছিল সুখ্যাতি আর সম্মান। হারিয়ে যাওয়া সেই সোনালী দিন গুলো আজ শুধুই স্মৃতি! শুধুই স্মৃতি! নিজেদের মধ্যে দলাদলি আর গ্রুপিং আজ আমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। সমাজে আজ আমরা মুল্যহীন। কেউ আমাদের কথা শুনে না, শুনতে ও চায় না। নিজেদের ঘরে নিজেরাই পরাধীন।
আমাদর এই সময়ে শুধু নবী করীম সঃ কে নিয়ে ব্যাঙ্গার্ত, ট্রাঠ্রা, বিদ্রুুপ করা হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। নবী করীম সঃ এর যুগে ও আবু লাহাবের মতো আরো কয়েকজন অবিশ্বাসী প্রিয় নবীজীকে কষ্ট দিতো। তারা থাকে নিয়ে ঠিক এভাবেই ব্যঙ্গার্থ করতো আজ যে ভাবে ফ্রান্সে করা হচ্ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো, আবু জেহেল, ওকবা ইবনে আবু মুঈত, আদী ঈবনে হামরা, উমাইয়া ইবনে খালফ এবং মহিলাদের মধ্যে ছিল, আবুলাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিল।
ওরা ছিল সে যুগের শীর্ষ সন্ত্রাসী, মুশরিক এবং জঘন্য ঘৃন্য প্রকৃতির লোক। এরা নবী করীম সঃ কে দেখলে কুটুক্তি করতো, তার নামে বদনাম রটাতো যেটা আজ ফ্রান্স সরকারের মদদে হচ্ছে। নবীজী নামাজে দাড়ালে উটের নারীভুড়ি এনে তার উপর ছুড়ে মারতো। রান্না করা খাবারে, হাড়িতে ও ছুড়ে মারতো। আহ্ কি কষ্ট! কি অপমান! তারপরে ও নবীজি কাউ কে গাল-মন্দ করেন নাই। অসীম ধৈর্য, সাহস আর উন্নত কলা কৌশলের মাধ্যমে চারিত্রিক মাধুর্যতা দিয়ে নাজুক এসব পরিস্থিতি শক্ত হাতে মোকাবেলা করেছেন।
শুধু নবীজী নয় সাহাবাদের উপর ও ওরা অমানবিক জুলুম নির্যাতন করেছে। সেই ধারাবাহিকতা আজ ও অব্যাহত আছে। শুধু সময়ের ব্যবধানে এর কলাকৌশল, ধরণ পাল্টেছে। জংগী, মৌলবাদ, টেরোরিস্ট, উগ্রবাদ,সামপ্রদায়িকতা, বিভিন্ন শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে নামে বে – নামে মুসলমানদের ঘায়েল করা হচ্ছে হর হামেশা। কিন্তু কেন? নবী সঃ তো জাহেলী যুগের মানুষ কে আলোর পথ দেখিয়ে ছিলেন। হত্যা, খুন, ধর্ষণ ছিল যে সমাজের নিত্যদিনের গঠনা সেই সমাজের মানুষের চিন্তা চেতনার আমুল পরিবর্তন করে তিনি সমাজে শান্তি প্রতিষ্টা করেন। তিনি নারী অধিকার ও শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে তা প্রতিষ্টা করে সমকালীন বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
মানবাধিকার, সুবিচার, সমাজ উন্নয়ন, সর্বক্ষেত্রে প্রিয় নবীজী ছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য রোলমডেল। আজ আমাদের মাঝে নেই নবী সঃ এর সেই প্রকৃত আদর্শ। নেই সততা, নেই আমানতদারী, নেই মজবুত ঈমান তদুপরি আমরা বহুদল, গ্রুপে বিভক্ত। আজ নিজেদের ভুলের কারনে নিজেরাই বিশ্বে অপমানিত হতে হচছে। অপমানের এই গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই নিজেদের আগে সংশোধন করে নিতে হবে।
লেখক ও কলামিষ্ট : এ এম সমুজ, মানচেষ্টার লন্ডন।