বিবিএন ডেস্ক: ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের একটি অংশকে আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডা পাঠাবে যুক্তরাজ্য৷ এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দেশটির পার্লামেন্টকে বলেছেন, অনিয়মিত উপায়ে অভিবাসন ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নতুন বৈশ্বিক মানদণ্ড হয়ে উঠবে৷
ইংলিশ চ্যানেল হয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থী, অভিবাসীদের একটি অংশকে যুক্তরাজ্যের সরকার রুয়ান্ডা পাঠিয়ে দিবে৷ তাদেরকে থাকতে হবে সেখানে আশ্রয়কেন্দ্রে৷ এজন্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রায় ১৬ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে রুয়ান্ডা৷ বৃহস্পতিবার পূর্ব আফ্রিকার দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দিয়েছে৷ পরে এই বিষয়ে পার্লামেন্টে জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও৷
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের সফরকালে এক বিবৃতিতে রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিনসেন্ট বিরুতা বলেন, ‘‘আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসীদের থাকতে দেয়ার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে এই নতুন অংশীদারিত্ব চুক্তিকে রুয়ান্ডা স্বাগত জানায়৷’’
বিবৃতি অনুযায়ী, অভিবাসী, আশ্রয়প্রার্থীদের রাখার জন্য রুয়ান্ডাকে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার দিবে যুক্তরাজ্য৷ বিরুতা বলেন, ‘‘চুক্তির আওতায় সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি অভিবাসী, আশ্রয়াপ্রার্থীদের আগ্রহ অনুযায়ী তাদের ক্ষমতায়নও করা হবে৷ প্রয়োজনে তারা রুয়ান্ডাকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যেও বেছে নিতে পারবেন৷’’
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ‘অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ ও ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে অভিবাসন ঠেকাতে সরকারের পরিকল্পনা’ সংক্রান্ত নির্ধারিত বক্তৃতার আগেই রুয়ান্ডার কাছ থেকে এই ঘোষণা আসে৷
কাদের পাঠানো হবে
গত বছর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ২৮ হাজার অভিবাসী ও শরণার্থী ব্রিটেনে পৌঁছান৷ এভাবে অনিয়মিত পথে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের একটি অংশকে রুয়ান্ডায় পাঠাতে চায় যুক্তরাজ্য সরকার৷
পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের দেয়া অর্থে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে গড়ে তুলবে রুয়ান্ডা৷ দেশটি সফরে এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের মূল পরিকল্পনা আশ্রয়প্রার্থী একা যুবকদের রুয়ান্ডায় পাঠানো৷
যুক্তরাজ্য সরকারের মতে, এই উদ্যোগের ফলে অভিবাসীরা অনিয়মিত উপায়ে যুক্তরাজ্য আসতে নিরুৎসাহিত হবেন৷ পার্লামেন্টে দেয়া বক্তৃতায় জনসন বলেছেন, ‘‘যুক্তরাজ্যের বদলে রুয়ান্ডায় আশ্রয় পেতে হবে এমন ঝুঁকি অভিবাসীদের জন্য ‘যথেষ্ট প্রতিরোধক’ হিসেবে কাজ করবে৷’’
যুক্তরাজ্যে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ঘানা ও রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে অনেকদিন ধরেই কাজ করছিল যুক্তরাজ্য৷ এ নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও রাজনীতিবিদরা সমালোচনা করেন৷ তবে জনসন তার বক্তৃতায় জানান, তিনি বিশ্বাস করেন রুয়ান্ডার সঙ্গে এই অংশীদারি অভিবাসী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি নতুন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পরিণত হবে৷
অনিয়মিত উপায়ে আগতদের শুধু রুয়ান্ডায় পাঠানো নয়, ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে অভিবাসন বন্ধেও কড়া পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন বরিস জনসন৷ অভিবাসন বন্ধে দেশটির নৌবাহিনী এখন থেকে এই জলপথে টহল দিবে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ জনসন বলেন, ‘‘আজ থেকে রয়্যাল নেভি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছ থেকে অভিযানের কমান্ড নিজেদের কাছে নিবে৷ কোনো নৌকা যাতে নজরদারির বাইরে যুক্তরাজ্যে ঢুকে না পড়ে তা নিশ্চিত করা হবে তাদের লক্ষ্য৷’’
ইংলিশ চ্যানেলে টহল বাড়ানোর জন্য নৌকা, উড়োজাহাজ ও নজরদারি যন্ত্র সংগ্রহে অতিরিক্ত তহবিলের ঘোষণাও দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা এসব নৌকা পরিচালনা করে তাদের কাছে এটা একটা পরিস্কার বার্তা৷ কেউ যদি চ্যানেলে অন্যের জীবন হুমকির মুখে ফেলে তাহলে তার নিজের জীবন জেলের ঝুঁকিতে পড়বে৷’’
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটছে৷ গত নভেম্বরে নৌকা ডুবে ২৭ অভিবাসীর মৃত্যু ঘিরে ফ্রান্স, ব্রিটিনের মধ্যে উত্তেজনাও বাড়ে৷