দরগার পবিত্রতা যারা নষ্ট করলো তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ এবং মাযারে শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ চিরতরে বন্ধ করা সময়ের দাবী..
সুলতানে সিলেট হযরত শাহজালাল ইয়েমনী (র.)’র মাযার উপমহাদেশের একটি অন্যতম আধ্যাত্মিক যিয়ারতের স্থান। আমরা যার কারণে ইসলাম পেলাম তাঁর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা বোধ না থাকলে, তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা না থাকলে আমরা অকৃতজ্ঞ!
তাঁর মাযার আমরা যিয়ারত করি। কিন্তু আফসোসের সাথে বলতে হয়, আমরা যারা সহীহ শুদ্ধভাবে যিয়ারত করতে চাই তারা মাযার কেন্দ্রিক কিছু কুসংস্কার, কিছু শরিয়ত বিরোধী কার্যকলাপ দেখে কষ্ট পাই।
ওরসের সময় এবং প্রতি বৃহস্পতিবার মাজার প্রাঙ্গণে যে গান বাজনা হয়, প্রতিদিন নারীদের পর্দা ছাড়া যে অবাদ বিচরণ হয়, তা দেখে ভীষণ কষ্ট লাগে। অনেকেই যারা মাযারে আসে তারা মাযার যিয়ারতের কিছুই জানে না শুধু মাত্র ঘুরতে আসে এবং ছবি তোলে চলে যায়, তারা মাযারকে একটি পর্যটনের স্থান হিসেবে গণ্য করে। অন্যদিকে কিছু ভক্ত নামের কলংক আছে যারা শরিয়তের ধার ধারে না। তারা তাদের যাত্রা ই শুরু করে শরিয়ত বিরোধী কাজের মাধ্যমে, বাসের মধ্যে গান বাজিয়ে বা গেয়ে আসে।
মাযারগুলোতে তাগা বাধা, ইলেক্টিক বাতি থাকা অবস্থায় মাযারে দেওয়ার নামে মোমবাতির ব্যবহার , সরাসরি ওলী আল্লাহর কাছে চাওয়া সহ অসংখ্য বেশরীয়তি কাজ হয় আর সাথে মাযারের খাদিম নামের ভন্ডদের দৌরাত্ম তো আছেই।
ভন্ড খাদিমদের একমাত্র উদ্দেশ্য টাকা উপার্জন, শরীয়ত কোথায় গেলো বা হারাম না হালাল সেটা তারা দেখেন না, তারা টাকা পেলেই হলো।
এসকল শরিয়ত বিরোধী কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ঘটে গেলো ন্যাক্কারজনক ঘটনা, মাযার প্রাঙ্গণে সিনেমার শ্যুটিং হলো, তারা এটাকে শ্যুটিং স্পট হিসেবে বেচে নিয়েছে, এর পিছনে কারণ কি? মাযারে আগে থেকে চলে আসা শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ এবং খাদিমগণ ও দরগায় যে এক বিশাল ক্বওমী মাদ্রাসা রয়েছে তাদের উদাসিনতা এসকল ন্যাক্কারজনক শরীয়ত বিরোধী কাজের পিছনের কারণ বলে মনে করি৷
সিনেমার শ্যুটিং নিয়ে কথা বলায় অনেকে আবার রেগে গেছেন। এখানে আবার দুই পার্ট:-
Π এক অংশ ভাবছেন আগে থেকেই অনেক বিষয় চলে আসছে সেগুলোর প্রতিবাদ হলো না তাহলে সিনেমা হলে দোষ কি? এখানে প্রতিবাদ হচ্ছে কেন?
Π আরেক অংশ সিনেমার পক্ষের লোক, তারা বলছেন সিনেমা হলে কি হলো? সাংবাদিক কেনো এতো খারাপভাবে এটা প্রচার করছে? (এদের বেলায় কথা নেই, এরা সিনেমা প্রেমিক)
প্রথম অংশের জবাবে বলা যায়, এসকল অনাচারের বিরুদ্ধে অনেক কথা হয়েছে, আমার ওয়ালিদ মুহতারাম বলছেন তারা সিলেট আলিয়ার ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় গঞ্জিকা দলের বিরুদ্ধে, গান-বাজনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন, কিন্তু উল্টো নাজেহাল হতে হয়েছে।
একবার এসকল কাজের প্রতিবাদ করায় ফুলতলী ছাহেব কিবলাহর বাসভবনও লালসালুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলো।
ছাড়া ছাড়াভাবে সময় সময় প্রতিবাদ হয়েছে কিন্তু কাজ হয় নি।
আসলে ঘরের ওরা মানে মাদ্রাসা যেটা মাযারের প্রাঙ্গণে রয়েছে সেটা যদি ঠিক না হয় তাহলে বাইরে থেকে প্রতিবাদ লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। অথচ তারা এব্যাপারে বড্ড নীরব!
যদি বুঝতাম তাদের সে শক্তি নেই এককথা, কিন্তু সে শক্তি তাদের আছে। মাযারের এখানে যেসকল জানাযা আসে তাদের ইমাম ছাড়া জানাযা পড়াতে দেয় না। অথচ উচিত হলো মৃতের নিকটাত্মীয় পড়ালে উত্তম না থাকলে ভিন্ন কথা, কিন্তু আলিম নিকটাত্মীয় বিদ্যমান থাকা অবস্থায় তারা খাদিমরা বললেও সেটা আমলে নেয় না এরকম প্রমাণ রয়েছে। অন্যদিকে মাযারের শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপের ব্যাপারে তারা অনেকটাই নীরব ভূমিকা পালন করেন৷
মাযারে সংক্রান্ত (যিয়ারত ও অন্যান্য) বিষয়ে বাংলাদেশে আমার চিন্তায় চারটি দল রয়েছে…
প্রথম দল-
১। যারা ওলী-আউলিয়াদের ভালোবাসেন এবং সঠিকভাবে শরীয়তসম্মত পন্থায় মাযার যিয়ারত করেন, তারা মনেপ্রাণে চান সকল মাযার যেগুলোতে শরীয়ত বিরোধী কাজ হয় সেগুলো এসকল কার্যকলাপ থেকে মুক্ত হোক, সুন্দর যিয়ারতের পরিবেশ সৃষ্টি হোক, ওলী আল্লাহদের শানমান বজায় থাকুক। আমাদের প্রিয় মুরশিদ ফুলতলী ছাহেব (র.) আমাদেরকে এমন ই শিক্ষা দিয়েছেন।
দ্বিতীয় দল-
২। তারা হলেন মাযার যিয়ারত কেন্দ্রিক কড়া দল, গান-বাজনা, মাজারে সিজদা সহ অন্যান্য মাযার কেন্দ্রিক সকল শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ তাদের থেকেই সৃষ্টি, এরাই সকল অনাচারের মুল হোতা। আল্লাহ এদের থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
তৃতীয় দল-
৩। তারা অনেকটাই সুবিধাবাদী, মাযার যিয়ারত করেন আবার করেন না, সুবিধাজনক জায়গায় মাযারের বিরোধিতা করেন এমনকি ওলি আল্লাহ বিরোধীও কথা বলেন, আবার নিজেদের আকাবীরদের ওলী আল্লাহ মানেন, তাদের মাযার যিয়ারত করেন।
মাযারগুলোর বেশিরভাগ তাদের দখলে মানে মাযার কেন্দ্রিক তাদের মাদ্রাসা আছে, তারা প্রায় জায়গায় ই মাযারের আয় দিয়ে মাদ্রাসা চালান কিন্তু সেই মাযারে শরীয়ত বিরোধী কিছু হলে কথা বলেন না।
সাহস নেই না শক্তি নেই আল্লাহ মালুম, তবে তারা সঠিকভাবে মাযার যিয়ারতকারী ও মাযার কেন্দ্রিক কড়াদের একপল্লায় তোলে মাযারপূজারী বলে থাকেন।
কিন্তু নিজের মাদ্রাসার কাছে মাযারে বেশরীয়তী কিছু হলে তারা উঠ পাখির ন্যায় আচরণ করেন।
৪। এরা মাযার বিরোধী কড়া দল, এরা মাযার কেন্দ্রিক অনাচারের প্রতিবাদ করতে(এই প্রতিবাদ আমরাও করি) গিয়ে মাযার যিয়ারতের বিরোধিতা এমনকি ওলী-আউলিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেন।
এরা খোদ মাযারে শায়িত ওলী-আউলিয়াগণের নিন্দা করে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, যাদের কারণে মুসলমান হয়েছে তাদেরকেই দোষারোপ করে…, উচিৎ ছিলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলা কিন্তু তারা লাগাম ছাড়া কথা বলে এবং ওলী-আউলিয়া, মাযার যিয়ারত সব অস্বীকার করে।
(এদের অনাচার থেকে আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন)
সমাধান –
প্রথম ও তৃতীয় দল মিলে মাযার কেন্দ্রিক বেশরীয়তী কার্যকলাপ বন্ধের আন্দোলনে প্রশাসন নিয়ে নামতে হবে, সামাজিক ভাবে সঠিক পদ্ধতির যিয়ারত মানুষদের শিক্ষা দিয়ে সচেতন করতে হবে।
এক্ষেত্রে প্রথম দল মাযার কেন্দ্রিক শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপের আন্দোলনে নামলে মাযারের বিরোধিতা বা ওলী আল্লাহর বিরোধিতা হয়ে যাবে ভাবার কারণ নেই, (এটা ভেবেই অনেকে কথা বলেন না) । ওলী আল্লাহর রূহ এক্ষেত্রে আরো আনন্দিত হবে।
আর দ্বিতীয় দল অনাচারের বিরোধিতা করতে গিয়ে মুল উপড়ে ফেলার চিন্তা থেকে সরে আসতে হবে এবং সুবিধাবাদকে না বলতে হবে।
আমার মনেহয় এরকম হলে বাংলাদেশের সকল মাযারে যিয়ারতের সঠিক পরিবেশ করা সম্ভব। আর না হয় দিন দিন মাযার কেন্দ্রিক শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ বাড়তেই থাকবে।
আর প্রশাসনে চাপ না দিলে তারা তাদের ভোটার হারানোর ভয়ে কথা বলবে না, তাদের কাছে শরীয়ত মূখ্য নয় ভোটার মূখ্য।
সুলতানে সিলেট হযরত শাহ জালাল (র.) কে ভালোবাসি, আর এ ভালোবাসা থেকেই এ লিখা।
আল্লাহ তাঁর ওলীর শান-মান সদা সর্বদা অক্ষুণ্ণ রাখুন, আমিন।
মুজতবা হাসান চৌধুরী নুমান
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক: বাংলাদেশ আঞ্জুমানে তালামীযে ইসলামিয়া।