• ২৮শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন ও মাদক দমনে “আতঙ্কের নাম ইউএনও তরিকুল:

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত আগস্ট ৩১, ২০২৫
অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন ও মাদক দমনে “আতঙ্কের নাম ইউএনও তরিকুল:

আতিকুর রহমান, ছাতক প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জের ছাতকে ইজারা বহির্ভূত সুরমা নদীর শাখা চেলা ও পিয়াইন নদীসহ সংরক্ষিত বনভূমি ও বিভিন্ন জলাধার থেকে অবৈধ ভাবে বালু-পাথর উত্তোলন, নৌ পথে চাঁদাবাজি ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো: তরিকুল ইসলামের অভিযান নিয়মিত চলছে।

 

জানা যায়, ছাতকের নদীপাড়, চেলা-পিয়াইন নদী ও আশপাশের অঞ্চলগুলোতে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন ছিল যেন ‘ওপেন সিক্রেট’। প্রতিনিয়ত ড্রেজার, বাল্কহেড, স্টিলবডি নৌকার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিল জনজীবন। এসব অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করতেন না। কেউ মুখ খুললেও চাপে পড়ে চুপ হয়ে যেতেন। কারণ, এসব অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত ছিল একটি প্রভাবশালী অসাধু চক্র, যারা ছিল ভয়ংকর। অভিযোগ জানালেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হতো না। ফলে সাধারণ মানুষ এক প্রকার অসহায়ত্ব নিয়ে এই অনিয়ম মেনে নিতে বাধ্য হতেন।

 

তবে ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। তার কার্যকর ও দৃঢ় পদক্ষেপের ফলে এখন অবৈধ বালু ও পাথর ব্যবসায়ীরা নিজেরাই আতঙ্কে আছে। তারা আগের মতো অবাধে নদীতে প্রবেশ করতে পারছে না। যে জায়গাগুলো এক সময় দিনের পর দিন ড্রেজিংয়ে ব্যবহৃত হতো, সেগুলো এখন অনেকটাই শান্ত। ইউএনও’র সক্রিয় উপস্থিতি ও নিয়মিত অভিযানের কারণে তারা এক ধরনের নিরাপত্তাবোধ করছেন। সাধারণ মানুষের কণ্ঠে এখন ভরসা, তাদের চোখে আশার আলো। তারা মনে করেন, এই ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত থাকলে ছাতক আবার প্রকৃতির সৌন্দর্যে ও নিরাপদ পরিবেশে পরিণত হবে। ইউএনও’র মতো একজন সাহসী প্রশাসক তাদের দীর্ঘদিনের দাবির বাস্তব রূপ দিয়েছেন। ফলে আজ ছাতকের সর্বত্রই একটি কথা ঘুরে বেড়ায় আতঙ্ক শুধু দুষ্টের জন্য, আর আশার আলো সাধারণের জন্য নাম তার ইউএনও তরিকুল ইসলাম।

 

২০২৫শের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৩২টি মামলা করেছেন ছাতকের ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম। এর মধ্যে শুধুমাত্র বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর অধীনে ১৫টি মামলায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায়সহ ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। একইসাথে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু-পাথর পরিবহনে ব্যবহৃত কয়েক কোটি টাকার লোড ড্রেজার, বাল্কহেড ও স্টিল বডির নৌকা জব্দ করে রাষ্ট্রীয় অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। শুধু পরিবেশ রক্ষায় নয়, মাদক নিয়ন্ত্রণেও ইউএনও তরিকুল ইসলাম রেখেছেন বলিষ্ঠ পদচিহ্ন। ২০২৫ সালের এ পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর অধীনে ৬৪টি মামলায় ৬৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। ফলে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের মধ্যেও তার নাম এখন এক আতঙ্কের প্রতীক।

 

এছাড়া বাজার মনিটরিং, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এবং সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। স্থানীয় জনসাধারণ মনে করেন, ইউএনও তরিকুল ইসলাম একদিকে যেমন পরিবেশ ও জনস্বার্থ রক্ষায় অনড়, অন্যদিকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে ছাতকের প্রশাসনে এনেছেন কার্যকর পরিবর্তন।

 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, অ-অনুমোদিত ড্রেজার দিয়ে অ-ইজারাকৃত স্থান থেকে বালু কর্তন ও পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করতে দেওয়া হবে না। পরিবেশ রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে। জনস্বার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালত অব্যাহত থাকবে।