বিএনপি প্রতিষ্টার পর থেকে দলটি চারবার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে। কোটি কোটি কর্মী সমর্থক সৃষ্টি হয়েছে, দলের কল্যাণে অগণিতজন এমপি মন্ত্রী হয়েছেন। স্থানীয় ও জাতীয় নেতাদের অভাব নেই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারণে এই দলটি অনেক অনেক জনপ্রিয়। দূর্ভাগ্য! সবাই এমপি মন্ত্রী হতে চান কিন্তু মেধা জ্ঞান ও তথ্য ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় দলটি অনেক পিছিয়ে! কিন্তু কেন? বর্তমান বিশ্বে, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ফেইসবুক এবং ইউটুব অনেক অনেক শক্তিশালী ও জনপ্রিয়। বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে বিগত সরকার বিরোধী আন্দোলনে যারা ফেইসবুক অনলাইনে ঝড় তুলেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদর রহমান, কবি আব্দুল হাই শিকদার, পিনাকী ভট্টাচার্য, জিল্লুর রহমান, মুশফিকুল ফজল আনসারী, ইলিয়াস হোসাইন, ডক্টর কনক সারওয়ার, মনির হায়দার, শাহ নুরুল কবীর, খালেদ মহি উদ্দিন, গোলাম মওলা রনি, জুলকারনাইন সের সামী, মোস্তফা ফিরুজ, ডক্টর ফয়জুল হক সহ আরো অনেকেই। শ্রদ্ধেয় মাহমুদুর রহমান, কবি আব্দুল হাই শিকদার, গোলাম মওলা রনি, ডক্টর ফয়জুল হক এরা যেকোন ভাবেই তো বিএনপিতে ছিলেন। কিন্তু কেন তারা এতোটা বিমুখ হলেন? মুশফিকুল ফজল আনসারী হয়ে গেলেন রাষ্ট্রদুত তিনি এখন আর মুখ খোলতে পারছেন না, কবি আব্দুল হাই শিকদার দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক দলের পক্ষে কথা বলছেন না, মনির হায়দার প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী।
জুলাই আন্দোলনের আগেও তো এদের অনেকের সাথে বিএনপির সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো ছিল। আজ কেন নয়? এরা অনেকেই কেন আজ বিএনপি বিমুখ? এরা এখন অনেকেই অন্য দলের হয়ে বিএনপি বিরোধী কথা বলে তথ্য উপস্থাপন করে বিএনপিকে নাজেহাল করছেন। অন্য দল বা গোষ্ঠী কিভাবে তাদের পক্ষে নিয়েছে? হয়তো কোন সুবিধা দিয়ে, নয়তো যোগাযোগের মাধ্যমে সম্মান দেখিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করে ভালোবাসা দিয়ে। যে কোন একটা তো নিশ্চয়ই আছে?
বিএনপির মিডিয়া সেল বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কেন এই সাহসী জনপ্রিয় ব্যক্তিদের বিএনপির পক্ষে রাখতে পারলো না। বা এদের মতো দুই চারজন দীর্ঘদিনে তৈরীও করতে পারলো না। এটা কি ব্যর্থতা নয়? বিএনপির মিডিয়া সেলে শুধু মাত্র দলের জেলা উপজেলা এবং কেন্দ্রের বিভিন্ন কর্মসুচীর দৈনিক কার্যক্রমগুলো নিজেস্ব পেইজে আপলোড করছেন। শুধু এই কাজগুলো কি দলের প্রচার বা দলকে সুসংগঠিত করার জন্য যথেষ্ট? পিনাকী ভট্টাচার্য, ইলিয়াস হোসাইন, ডক্টর কনক সারওয়ার বা আরো কয়েকজন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপির বিরুদ্ধে যে তথ্য গুলো তুলে ধরেছেন তা কিভাবে কাকে দিয়ে মোকাবিলা করাবেন?
সেদিন রাস্তায় উদ্দেশ্য মুলক ভাবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারকে রহমানকে অপমান করে শ্লোগান হয়েছে, ছবি পায়ে মাড়িয়ে কারা উল্লাস করেছে? নেপথ্যে কারা! এটা তো একদম সহজ হিসাব। দলকে এই হিসাব মিলিয়ে সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে চড়া মুল্য দিতে হবে।
সব কিছু কেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেখতে হবে। এতো কেন্দ্রীয় জাতীয় নেতা, কিংবা মিডিয়া সেলে যারা আছেন তাদের কাজ কি ভাই? বলতে দ্বিধা নেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সমগ্র দেশব্যাপী মেধা জ্ঞান ও তথ্য ভিত্তিক প্রচারণায় জামায়াত শিবির, এনসিপির নেতাকর্মী যতটা এগিয়ে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী তার চাইতে অনেক অনেক পিছিয়ে।
অন্য দিকে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় ভাবে দলের অনেক নেতাকর্মী বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে দলের ভাবমূর্তি চরম ভাবে ক্ষুন্ন করছেন। যারা খুন, ধর্ষন, দখল চাঁদাবাজির সাথে জড়িত, মাঠ প্রশাসনের সহযোগিতায় এদের কটুর ভাবে দমন করতে ব্যর্থ হলে এবং শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যতে দলের পরিচয়ের জন্য শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার নাম ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বড় দল হিসেবে যতটা সমীহ সম্মান পাওয়ার কথা, বিএনপি তা কি পাচ্ছে? নিশ্চয়ই না, কিন্ত কেন! এর উত্তর খোজা উচিত নয় কি?
জানি এই লেখার কারণে বিএনপির অনেকেই আমার উপর চরম ক্ষুব্ধ হবেন, আমার হারানোর কিছু নেই। একজন কর্মী হিসেবে দলের অসঙ্গতিগুলো আমি আমার মতো করে তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। একটু ভাবুন তো, ওয়ান ইলেভেনের নির্মমতা আর রক্ত ঝরা জুলাই আগস্ট থেকে আমরা কি শিক্ষা গ্রহণ করছি?
লেখক: মোঃ নিজাম উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান উত্তর খুরমা ইউনিয়ন পরিষদ, ছাতক সুনামগঞ্জ। সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি।