ছাতক প্রতিনিধি:
ছাতক উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কেএম মাহবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম—দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও এডিপির ২২৭টি প্রকল্পের ঘুষের টাকা নিয়ে তিনি লাপাত্তা। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকায় প্রকল্পের কমিটির সদস্যরা পিআইও কার্যালয়ে কাজ করে বিলের টাকা পাচ্ছেন না। প্রকল্প কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা ইউএনও বরাবরেও অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। ইউএনও’র সাথে পিআইও’র বাকবিতন্ডার পর গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ছাতকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হিসেবে যোগ দেন কেএম মাহবুব রহমান। তিনি যোগদানের পর থেকে উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তাবায়নে লাখ লাখ টাকার ঘুষ—দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। ২০২৪—২০২৫ ইং অর্থ—বছরের টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও এডিপির ২২৭টি প্রকল্পের বিষয়ে সম্প্রতি ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে ছাতক উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) এর বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় গত ১৬ মে ইউএনও’র সাথে পিআইও’র বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পিআইও কার্যালয়ের কার্য—সহকারি নাজমুল ইসলামও। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় এবং প্রকল্পের কোনো ধরণের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ছাড় দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন ইউএনও। পরদিন শনিবার অফিস করেননি পিআইও কেএম মাহবু্ব রহমান। ওইদিন রাতে ইউএনও বরাবরে তিনদিনের ছুটি চেয়ে একটি আবেদন লিখে ইউএনওকে না দিয়েই নিজ কার্যালয়ের টেবিলে রেখে ছাতক ছেড়ে যান পিআইও কেএম মাহবু্ব রহমান।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘুষ—দুর্নীতির টাকা হজম করতেই ওই পিআইও ছাতকের ইউএনওকে অভিযুক্ত করে জেলা প্রশাসক বরাবরে কৌশলে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ছাতক থেকে বদলির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ওই পিআইও কেএম মাহবুব রহমান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ মে পর্যন্ত ট্রেনিংয়ে থাকা অবস্থায় দুই মাস ছাতক উপজেলার পিআইও’র অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) লুৎফুর রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার কার্যসহকারি নাজমুল ইসলামকে ছাতক থেকে রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় বদলি করা হয়। পিআইও’র ঘুষ—দুর্নীতি প্রকাশের ভয়ে এখান থেকে তাকে বদলির চেষ্টা চালানো হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তিরগাঁও গ্রামের ইজাজুল হক রনি বলেন, তিনি মুক্তিরগাঁও গ্রামের রাস্তার উভয় পাশে মাটি ভরাট প্রকল্প কাজের সেক্রেটারি। তার কাছ থেকে সরকারি খরচের নামে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছেন পিআইও কেএম মাহবুবুর রহমান।
একই ইউনিয়নের হাসনাবাদ—নয়া লম্বাহাটি সড়কে মাটি ভরাট প্রকল্প কাজের জন্য সেক্রেটারি বাহাউদ্দিন শাহী বলেন, আমার কাছে ১২ হাজার টাকা চেয়েছেন ওই পিআইও। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের খরচের নামে ওই পিআইও একাধিক প্রকল্প কমিটির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পিআইও অফিসের কার্য সহকারি নাজমুল ইসলাম এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইউএনও ও পিআইওর মধ্যে বাকবিতন্ডা ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার থেকে পিআইও সাহেব কার্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি শুনেছেন ওই পিআইও তাকে এখান থেকে বদলি করিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কেএম মাহবুবুর রহমান তার বিরুদ্ধে ঘুষ—দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব কিছুই ইউএনও সাহেবের ষড়যন্ত্র। তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। এ বিষয়ে গত ১৮মে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ আমাদের মহাপরিচালককে বরাবরেও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, পিআইও কার্যালয়ে কার্য—সহকারির সাথে প্রকল্প কর্মকর্তা কেএম মাহবুব রহমানের কিছু ঝামেলা হয়েছিল। এজন্য তাকে ডেকে বকাঝকা করে সর্তক করা হয়েছিলো, লাঞ্ছিত করা হয় নি। ওই প্রকল্প কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে আমার দপ্তরে। এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই জানানো হয়েছে।