• ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

তৃণমূল বিএনপি’র নেতৃত্বে শমসের মবিন চৌধুরী চেয়ারপারসন-তৈমূর মহাসচিব নির্বাচিত

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩
তৃণমূল বিএনপি’র নেতৃত্বে শমসের মবিন চৌধুরী চেয়ারপারসন-তৈমূর মহাসচিব নির্বাচিত

 

বিবিএন ডেস্ক:আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে এর চেয়ারপারসন এবং মহাসচিব হয়েছেন বিএনপি’র সাবেক দুই নেতা শমসের
মবিন চৌধুরী ও এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলটির প্রথম কাউন্সিলে তাদের এ পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। কাউন্সিলে দলটির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কাউন্সিলের দিনই বিএনপি’র সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত তৈমূর আলম খন্দকার তৃণমূল বিএনপি’র কর্মসূচিতে প্রথম অংশ নেন। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে শমসের মবিন বিকল্প ধারায় যোগ দিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছিলেন। তৈমূর আলম খন্দকার দলের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচন করায় বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ক্ষমা চেয়ে দলে ফিরতে চাইলেও তাকে আর স্থান দেয়া হয়নি।
তৃণমূল বিএনপির এক্সিকিউটিভ চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পেয়েছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত নাজমুল হুদা’র মেয়ে ব্যারিস্টার অন্তরা হুদা।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তৃণমূল বিএনপি’র ‘জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল-২০২৩’ মঞ্চে অবস্থান নেন শমসের মবিন চৌধুরী। এর কিছুক্ষণ পর অন্তরা হুদা মঞ্চে উঠেন। নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে হলরুমে প্রবেশ করেন তৈমূর আলম খন্দকার। পরে মঞ্চে পাশাপাশি বসেন তারা। বেলা পৌনে ১২টার দিকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন শুরু হয়।

দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এডভোকেট অন্তরা হুদা তার বক্তব্যে বিএনপি’র সাবেক দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকারকে দলে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘ইদানীংকালে জনজীবন বিপন্ন এবং অনেক বিষয় সরকার ব্যর্থ হয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সাধারণ মানুষ ও নিম্ন আয়ের জনগণের প্রতি সমবেদনা ছাড়া আমাদের আর কোনো গতি নেই। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অনিয়ম-ঘুষ-দুর্নীতি এখন চরমে। সাধারণ জনগণের একটি পাসপোর্টের আবেদন করতেও ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আমরা বিশেষভাবে এই বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেয়ার জন্য আকুল অনুরোধ করছি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা তার বাবা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দিয়েছেন উল্লেখ করে অন্তরা হুদা বলেন, সব সরকারেরই ক্ষমতা ছাড়তে কষ্ট হয়। ক্ষমতায় থেকে একজন মিনিস্টার হয়েও জনগণের কাছে এরকম ফর্মুলা উপস্থাপন করে কতো বিশাল সাহস, দেশপ্রেম ও বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাই।
শমসের মবিন চৌধুরী তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমরা সহিংসতার রাজনীতি করবো না। আমরা মানুষের শান্তির জন্য রাজনীতি করবো। রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তন আনবো।

এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, এডিসি হারুন অর রশীদ যদি বিরোধী দলের কাউকে পেটাতো তাহলে তার প্রমোশন হতো। ছাত্রলীগকে পেটানোর কারণে আজ তার শাস্তি হয়েছে। যেমন বিএনপি’র সংসদ সদস্য জয়নুল আবদিনকে পেটানোর কারণে আরেক হারুনের প্রমোশন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি সংসদ সদস্য তার নিজ এলাকায় নিজস্ব বাহিনী গঠন করেছেন। সেখানে বাস, ট্রাকসহ যেকোনো কিছু পরিচালনা করতে হলে তাদের চাঁদা দিতে হয়। আজ যদি দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানো যেতো তাহলে দেশে এত হানাহানি থাকতো না। কোথাও গণতন্ত্র নেই। পুলিশ বলে, ডিসি বলে সরকারি দলকে ভোট দিতে হবে।

কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন বিএলডিপি’র চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, প্রগতিশীল ইসলামী জোটের চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য এমএ আউয়াল, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, প্রগতিশীল ন্যাপের আহ্বায়ক পরশ ভাসানী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে পরিচালনা করেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব মো. আক্কাস আলী খান।

এদিকে কাউন্সিলে তৃণমূল বিএনপি’র ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাবনা আনা হয়। সে আলোকে ২৭ সদস্যবিশিষ্ট তৃণমূল বিএনপি’র আংশিক জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। নবনির্বাচিত কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আশানুর রহমান এ কমিটি ঘোষণা করেন। দলের কো-চেয়ারপারসন করা হয়েছে কে এ জাহাঙ্গীরকে। ভাইস চেয়ারপারসন হয়েছেন মেজর (অব.) ডা. হাবিবুর রহমান, মোখলেছুর রহমান, দীপক কুমার পালিত, মেনোয়াল সরকার, ছালাম মাহমুদ। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মো. আক্কাস আলী খান, যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল করিম, মাছুদুর রহমান, ফয়েজ চৌধুরী, তালুকদার জহিরুল হক, রোকসানা আমিন সুরমা। কোষাধ্যক্ষ মো. শামীম আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, আকবর খান, কামাল মোড়ল, দপ্তর সম্পাদক এ কে সাইদুর রহমান, মোহাম্মদ রাজু মিয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল সবুজ, যুব বিষয়ক সম্পাদক শাহাব উদ্দীন ইকবাল, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আশানুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক স্থপতি নাজমুন সাকিব, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাগর ঘোষ ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক ফরহাদ হোসেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ‘তৃণমূল বিএনপি’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি দলটি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। এর তিন দিন পর ১৯শে ফেব্রুয়ারি মারা যান নাজমুল হুদা। তার মৃত্যুর পর ১৬ই মে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তার মেয়ে ব্যারিস্টার অন্তরা হুদা।(দৈনিক মানবজমিন)