লতিফুর রহমান রাজু’,সুনামগঞ্জ: দীর্ঘদিন ধরেই সুনামগঞ্জ শহরের ৫ টি খাল অবৈধ দখলদার গণ দখলে নিয়ে নানা স্থাপনা তৈরি করে আছেন। কেউ কেউ মার্কেট, স্কুল, মাদ্রাসা ঘর বাড়ি নির্মাণ করে দিব্যি আরাম আয়েস করছেন। অপরদিকে শহরের হাজার হাজার মানুষ জলা বদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্চেন। খাল দখলের কারণে সামান্য বৃষ্টিপাত হলে সড়ক গুলো পানিতে তলিয়ে যায়। এমনকি বাড়ির আঙ্গিনা সহ ঘরে ও পানি প্রবেশ করে। দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যা চলে আসছিল কিন্ত কোন সমাধান নেই। বিভিন্ন সময় সুনামগঞ্জ শহরের মানুষ নানা ফোরামে দাবী জানান সমাধান করার কিন্ত আশ্বাস প্রদান ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে একবার অবৈধ দখলদার দের কবল থেকে খাল উদ্ধারের পর আবার দখলদাররা দখল করে। শহরের মানুষ এ নিয়ে সভা সমাবেশ, মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৫ জুলাই থেকে অবৈধ দখলকৃত খাল গুলো উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। খাল গুলো হলো সুনামগঞ্জ শহরের কামার খাল, তেঘরিয়া খাল, বড়পাড়া খাল, বলাইখালী খাল, ধোপাখালী খাল, নলুয়খালী খাল ও গাবরখালী নামক খালের মধ্যে ৫টি খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা।
১৫ জুলাই শনিবার সকাল থেকে পূর্বে লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা খালগুলোর দখল স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। জেলা তথ্য অফিসের পক্ষ থেকে এই মাইকিং করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছর ১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৭টি খাল উদ্ধারের জন্য একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের (বেলা) পক্ষ থেকে ৭টি খাল উদ্ধারে প্রয়োজনীয় প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌরসভার মেয়র, পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১৩ জনকে প্রথমে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরে ওই পরিবেশবাদী সংগঠন উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে। আদালত সম্প্রতি সুনামগঞ্জ পৌর শহর ও আশপাশের এলাকার পাঁচটি খালের দখলদারদের পূর্ণ তালিকা করে তাদের উচ্ছেদের আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে খালগুলোর সীমানা নির্ধারণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর সেই অনুযায়ী উদ্ধার অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
সুনামগঞ্জ পৌর সভার এই খাল গুলোর অস্তিত্ব নেই, অথচ এক সময় এসব খাল দিয়ে নৌকা চলছে।
এই খাল ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন। অস্তিত্ব হারানো খালগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘কামারখাল’ খাল। ৮৪ জন প্রভাবশালী খামারখাল দখল করেছেন। এবং তারাই অন্তত কয়েক শত অবৈধ স্থপনা নির্মাণ করেন। যে কারণে পৌরসভার ড্রেন কোনো কাজে লাগছে না। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। পৌরসভার প্রায় দুই লাখ মানুষকে এমন বিপজ্জনক অবস্থা থেকে বাঁচাতে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে। সুনামগঞ্জ শহরে পাঁচ খাল উদ্ধারের দাবিতে জেলা আইনজীবী সমিতিসহ একাধিক সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। সম্প্রতি অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা চূড়ান্ত করেছে স্হনীয় প্রশাসন আজ শনিবার থেকেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব বিজন কুমার সিংহ ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত সকাল থেকেই সরেজমিন দাঁড়িয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব বিজন কুমার সিংহ জানান প্রথম দিন কিছু অবৈধ দখলকৃত স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বাকী গুলোও করা অব্যাহত থাকবে। শহরের মানুষ যাতে জলা বদ্ধতার হাত থেকে রেহাই পান প্রশাসন সেই লক্ষে কাজ করছে।