নিজস্ব প্রতিবেদক:পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ উঠেছিল, আমি নাকি জেলার সব উন্নয়ন শান্তিগঞ্জে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কিছু নেতৃবৃন্দ নেত্রীর কাছে অভিযোগ করেছিলেন। শেখ হাসিনা আমাদের নেতা। তিনি সকলের কথা শুনেন, তাদেরও কথাও শুনেছেন। নেত্রীর কাছে গিয়েছিলাম, তিনি আমাকে তিরস্কার করেছেন। তিনি বলেছেন, মান্নান সাহেব আপনি সকলের মন্ত্রী, আপনি কেন অন্যদেরকে ঠকাচ্ছেন। আমি জুড় হাতে মাফ চেয়েছি। জানা মতে, কোন এলাকার সম্পদ আমি নেই নাই। আমি দুর্নীতি করি না, করবো না। কিছু লোক ভুল বুঝিয়ে মানুষকে বলে সব কিছু নিয়ে গেলো মান্নান তার বাড়ির কাছে, দোহাই আল্লাহর আমি এসব কিছুই নেই নাই, সরকার এ উন্নয়ন করেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাতক পৌরশহরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘উইটসা এমিনেন্ট পার্সনস’ অ্যাওয়ার্ড-২০২১ পদক প্রাপ্তি ও তার পুত্র, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্ঠা সজীব ওয়াজেদ জয় এর ‘অ্যাসোসিও লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ পুরস্কার প্রাপ্তিতে উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগের উদ্যোগে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা পরিষদের সদস্য আজমল হোসেন সজলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে সুনামগঞ্জের উন্নয়ন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিয়ে এসেছি, আমাদের ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা করার জন্য। সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ নিয়ে এসেছি যা স্থাপিত হচ্ছে সুনামগঞ্জ সদরে। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে হাওরে উড়াল সেতু অনুমোদন হয়েছে। আমি আমার কোনো এলাকার সাথে বেইমানি করিনি, করবো না।
তিনি আরও বলেন, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো, আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পাস করেছি। ছাতকে সুরমা সেতু বিএনপি সরকার অর্ধক করে ফেলে রেখেছিল, এটাকে আমি আবার শুরু করেছি। ছাতকের সাতটি হাই স্কুলের বিশাল উন্নয়নের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। দোয়ারাবাজারে সুরমা নদীর উপর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে একটি সেতুর কাজ হাতে নিয়েছি। আরও অনেক কাজ এখানে সেখানে রয়েছে। ক্রমান্বয়ে সব উন্নয়ন কাজ করা হবে।
মন্ত্রী ছাতক সম্পর্কে বলেন, ছাতকে আমার মায়ের জন্ম হয়েছিল। আপনারা যদি মনে করেন আপনাদের ভাগিনা অবিচার করেছে, তাহলে মাফ করে দিবেন। আমি ওয়াদা করে যাচ্ছি আপনাদের কারো কোন ক্ষতি আমার দ্বারা হবে না। আমি ছাতকের উন্নয়নের ব্যাপারে আপনাদের এমপির সাথে কথা বলবো। ছাতকে গিয়েছি এলাকার মানুষের কথা শুনেছি, একথা তাকে বলবো। তবে ” যদি তর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল-রে”। কেউ সাথে না আসলে একলা চলতে হবে। যারা আমাদের পছন্দ করেন না, তাদের বলবো আসুন এক সাথে কাজ করি। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তশালী করি। সরকারের উন্নয়নে অংশ গ্রহন করি।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান আরও বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে যেমন হত্যা করা হয়েছিল, এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকেও হত্যার ষড়যন্ত্র করছে একটি গোষ্ঠী। যারা তাঁকে হত্যা করতে চায় তারা কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী, মধ্যস্বত্বভোগী, সম্পদ লুণ্ঠনকারী, কমিশন ভোগী। তারা তাকে পছন্দ করে না। তাই শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। আর ভোট আসলে আওয়ামীলীগ, শেখ হাসিনা ও নৌকার পক্ষ নিতে হবে। হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও পোড়াও প্রত্যাখান করতে হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, পশ্চিমারা এক সময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলত। কিন্তু গত ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নতি অবাক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে দেখছে। যে পাকিস্তান আমাদের শোষণ করে করাচি-ইসলামাবাদ গড়েছিল সেই পাকিস্তান অর্থনীতিতে আমাদের অর্ধেকও না। আমাদের প্রতিবেশী বিশাল ভারতের চেয়ে আমাদের মাথাপিছু আয় বেশি। এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে।
গণসমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা আ’লীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন আহমেদ শাখাওয়াত চৌধুরী সেলিম, সিংচাপইড় ইউপির চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ শাহেল, দোহালিয়া ইউপি নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান শামীমুল ইসলাম শামীম, দোয়ারাই ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আবদুল খালিক রাজা, বাংলাবাজার ইউপির নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবুল হোসেন, লক্ষীপুর ইউপি নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির, নরসিংপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন, ছাতক সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, পৌর কাউন্সিলর ইরাজ মিয়া, আ.লীগ নেতা রেজা মিয়া তালুকদার, কামাল আহমদ, ছাতক সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের রিয়াদ আহমদ চৌধুরী।
সভার শুরুকে পবিত্র কালামে পাক থেকে তেলাওয়াত করেন, সাইফুল ইসলাম ও গীতা পাঠ করেন মিদুল দাশ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রলীগের শাহ মোজাহিদ উদ্দিন। এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী দুপুরে ছাতক পৌরসভার কার্যালয় পরিদর্শন ও পৌর পরিষদ কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে এক মতবিনিময় করেন। এরপর ছাতক সরকারী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার শুভ উদ্বোধন, বঙ্গবন্ধু ম্যুারাল এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত একাডেমিক ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
গণসমাবেশে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে অসংখ্য আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আ.লীগের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে ছাতক-দোয়ারার মানচিত্র ও স্বর্ণের চাবী উপহার দেয়া হয়।