• ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

রাজনীতি ও উন্নয়ন চলুক সমান্তরাল: সুজাত মনসুর

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
রাজনীতি ও উন্নয়ন চলুক সমান্তরাল: সুজাত মনসুর

 

যখন কলামটি লিখছি তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির নবনির্বাচিত সদস্য, প্রয়াত জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদ-এর বড়ছেলে আজিজুস সামাদ আজাদ ডন সিলেট শাহজালাল(রঃ), শাহপরাণ(রঃ)-এর মাজার ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সিলেটে সফর করেছেন। তাঁর সিলেট আগমণ উপলক্ষে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ হাজারো নেতাকর্মী ওসমানী বিমানবন্দরে সমবেত হয়ে উষ্ণ সংবর্ধনা জানিয়েছেন। বিষয়টি সিলেটের আওয়ামী রাজনীতি, বিশেষ করে সুনামগঞ্জের আওযামী রাজনীতির ক্ষেত্রে বর্তমান প্রেক্ষাপটে অবশ্যই গুরুত্ববহ। আজিজুস সামাদ আজাদ ডন অতীতেও বহুবার শাহজালাল(রঃ) ও শাহপরাণ(রঃ)-এর মাজার জিয়ারত করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। কিন্তু এবার তিনি এসেছেন অপ্রত্যাশিতভাবে একটা মহা প্রাপ্তির জন্য শুকরিয়া আদায় করতে। অপ্রত্যাশিত এ মহা প্রাপ্তি হল হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আজিজুস সামাদ আজাদ ডনকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরি কমিটির সদস্য করে নেওয়া। বিষয়টি আমরা যারা আব্দুস সামাদ আজাদের ভক্ত-অনুরাগী তাদের নিকট অপ্রত্যাশিত এই কারনে যে, আমরা ধরেই নিয়েছিলাম রাজনীতিতে সকল জাতীয় নেতার উত্তরাধিকার বিভিন্নভাবে পুনর্বাসিত হলেও সামাদ আজাদের উত্তরাধিকার বোধহয় কোন রহস্যময় কারণে উপেক্ষিতই থেকে যাবে। কেননা, সামাদ আজাদ পুত্র ডন বিগত এক যুগেরও অধিক সময় থেকে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন রাজনীতিতে বাবার শুন্যস্থান পুরণ করতে, কিন্তু কিছুতেই সুবিধা করতে পারছিলেন না। তাই অনেকটাই নিশ্চুপ হয়ে ছিলেন গত বছর দু‘য়েক যাবত। আমরাও হাল ছেড়ে দিযেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধু কন্যার আরেকটি চমক আমাদের নিবু নিবু প্রদীপটিকে প্রজ্জলিত করে দিল। আমরা সামাদ আজাদ ভক্তরা আবারো টানেলের শেষ প্রান্তে আলোর ঝলকানি অনুভব করলাম, এই মুহুর্তে সুনামগঞ্জ আওয়ামী রাজনীতির জন্য য়া অত্যাবশ্যকীয় ছিল। শুধু সামাদ আজাদ ভক্তরাই নয়, সুনামগঞ্জের রাজনীতি সচেতন মানুষ যারা সত্যিকার অর্থেই রাজনীতিকে উন্নয়নের আড়ালে এক ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতার যাতাকলে পিষ্ট হতে দিতে নারাজ, তারা সবাই খুশি হয়েছেন আজিজুস সামাদ আজাদ ডনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্তিতে।

গত এক দশক জুড়ে মূলতঃ উন্নয়নের আড়ালে একজন ব্যক্তির একচ্ছত্র আধিপত্যের কারনে সুনামগঞ্জের আবহমানকালের রাজনৈতিক পরিবেশ বহুলাংশেই ¤øান হতে চলেছিল। রাজনীতির বদলে আমলাতান্ত্রিকতা জেকে বসছিল সর্বত্র। অবস্থাটা এমন পর্যায়ে ্উপনীত হযেছিল যে, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ও সাংসদরা দিন দিন গুরুত্ব হারাচ্ছিলেন। একজন ব্যক্তির ইচ্ছে-অনিচ্ছার বাইরে গিয়ে যে কিছু করা সম্ভব তাও যেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভ‚লতে বসেছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁদের সামনে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয় সুনামগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও সাংসদরা বহুকাল পর এই প্রথমবারের মত একজোট হলেন উন্নয়নেরে আড়ালে আমলাতান্ত্রিকতার কবল থেকে নিজেদের বাঁচাতে, রাজনীতিকে বাঁচাতে। তাঁরা সফল হলেন। রাজনীতির কাছে আমলাতন্ত্র পরাজিত হল। সুনামগঞ্জের গণ মানুষের আকাংখার প্রতিফলন ঘটলো জনপ্রতিনিদের উত্থাপিত সংশোধনীসহ সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদে পাশ হওয়ার মধ্যদিয়ে। সুনামগঞ্জের আপামর মানুষ রাজনীতির এই বিজয়ে গণ মিছিল করে তাদের উচ্ছ¡াস প্রকাশ করলো। তারপর সপ্তাহখানেক যেতে না যেতেই সুনামগঞ্জের রাজনীতির জন্য চমক আজিজুস সামাদ আজাদ ডন।

সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন প্রতিটি মানুষই উন্নয়ন চায়, আমরাও চাই। এই উন্নয়ন অবশ্যই রাজনীতি ও রাজনৈতিক শক্তিকে অস্বীকার করে নয়। রাজনীতিকে উপেক্ষা করে উন্নয়ন তারাই করে, যারা জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে নয়, বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখল করে নেয়। আইয়ুব, জিয়া, এরশাদ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকারের উন্নয়ন পরিচালিত হবে রাজনীতিকে অধিকতর টেকসই ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য। উন্নয়ন হবে রাজনৈতিক প্রতিশ্রæতির আলোকে। উন্নয়ন যত হবে, ততই মানুষ রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলের ওপর আস্থাশীল হবে। উন্নয়ন কখনোই রাজনীতির প্রতিপক্ষ হবে না। কিন্তু আমাদের সুনামগঞ্জে দেখলাম তার উল্টো। একজন ব্যক্তি সামরিক একনায়কদের মত ইচ্ছেমত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, বাস্তবায়ন করছেন। ভুলে যাচ্ছেন তিনি একজন রাজনৈতিক দলের এমপি হিসেবে মন্ত্রী হয়েছেন। সেই দলের একটা গঠনতন্ত্র আছে। জেলা কমিটি আছে। জেলায় আরো ৫ জন সাংসদ আছেন, যারা সমগ্র জেলার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। দল ও দলের সাংসদদের সাথে পরামর্শ করে উন্নয়নসহ সামগ্রিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নই যে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি তা আমলেই নিচ্ছিলেন না। এমতাবস্থায় জেলা আওয়ামী লীগ ও সাংসদদের রাজনীতির পক্ষে অবস্থান এবং আজিজুস সামাদ আজাদ ডন-এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি সুনামগঞ্জের রাজনীতির জন্য অবশ্যই সুসংবাদ। শুধু সুসংবাদই নয়, নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের সূচনা। যার সুফল আমরা অদূর ভবিষ্যতে দেখতে পাব।

আজিজুস সামাদ আজাদ ডন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার পরপরই সৌজন্য সাক্ষাত করতে গিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমন, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনসহ অন্যান্যদের সাথে। এই যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার দেখালেন, তাতেই প্রমাণিত হয় তিনি সবাইকে নিয়ে রাজনীতিটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে আজিজুস সামাদ আজাদ ডন-এর অন্তর্ভুক্তিকে বৃহত্তর সিলেটের, বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জের আওয়ামী পরিবারের অধিকাংশই স্বাগত জানিয়েছে। কেননা মানুষ রাজনীতি ও উন্নয়ন সমান্তরাল চলুক তাই প্রত্যাশা করে। সেই প্রত্যাশাই প্রতিফলন দেখতে পাই যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি, লেখক মোহাম্মদ হরমুজ আলীর পোস্টে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সপ্তাহখানেক আগে প্রকাশিত পোষ্টটিতে জনাব হরমুজ আলী মূলতঃ সুনামগঞ্জের রাজনীতি ও উন্নয়নে মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছেন। তাঁর প্রত্যাশা হলো, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জেলার উন্নয়নটি দেখভাল করুন আর আজিজুস সামাদ আজাদ ডন ও এনামুল কবির ইমন এবং অন্যান্যরা জেলার আওয়ামী রাজনীতিটা দেখভাল করুন। মোদ্ধাকথা হলো, উন্নয়ন ও রাজনীতি প্রতিপক্ষ না হয়ে পরিপুরক হউক। মন্ত্রী ও দলের মধ্যে দ্বন্ধ নয়, সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হউক। তাহলেই একদিকে যেমন দল ও রাজনীতি উপকৃত হবে, তেমনি উন্নয়নও হবে সুষশ বন্টনের ভিত্তিতে। মোহাম্মদ হরমুজ আলী সত্যিকার অর্থেই সাধারণ মানুষের বিশেষ করে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনের কথাই ব্যক্ত করেছেন। পাঠকরাও সহমত পোষণ করেছেন। যদিও এই দুইয়ের সমন্বয় সাধন অত্যন্ত কঠিন কিছু সংখ্যক মৌসুমী ও সুবিধাভোগি রাজনীতিবিদদের কারনে। যারা ইতোমধ্যেই বিবেদরেখাটিকে বেশ প্রলম্বিত করে ফেলেছে। জেলা আওয়ামী লীগ ও সাংসদদের সাথে মন্ত্রী মহোদয়ের দূরত্ রেখাটাকে বাড়িয়ে দিয়েছে তথাকথিত গণ সংবর্ধনার নামে। আমি এরই মধ্যে ছোট্ট একটা পোষ্টে তা উল্লেখ করেছি। এই বিবেদ রেখাটি জন আকাংখার বিপরীত। এতে করে মন্ত্রী মহোদয় নয়, তারাই লাভবান হবে যারা ক্ষমতাকে ব্যবহার করে সকল সময় নিজেদের আখের গোছাতেই অভ্যস্ত। বরং ক্ষতিগ্রস্থ হবেন মন্ত্রী এম এ মান্নান।

তারপরও আশার আলো জ্বালিয়ে রাখতে চাই। প্রজ্ঞাবান, দুরদর্শী, কর্মীবান্ধব রাজনীতিবিদ প্রয়াত জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদের সুযোগ্য উত্তরসুরি হিসেবে আজিজুস সামাদ আজাদ ডন নিজস্ব মেধা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষনতা দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও সাংসদের সাথে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানে যে, সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজ করছে তা নিরসন করে একটা সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। তবে এক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ও সাংসদদেরও দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা একটাই প্রকৃত ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ। আর রাজনীতি ও উন্নয়ন চলবে সমান্তরাল।

লেখক:সাংবাদিক, কলামিস্ট।

যুক্তরাজ্য।

২১শে ডিসেম্বর, ২০২০