• ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১লা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত অক্টোবর ২৮, ২০২০
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী

মো. আবু তালহা তারীফঃ১২ রবিউল আউয়াল ধরার বুক আলোকিত করেন রহমাতুল্লিল আলামিন। ধু-ধু মরুর সূর্য তখনো জাগেনি। ঘুম ভাঙেনি কারও। ভোরের বাতাসে, আঁধার ঝোপে, রূপের নুরানি চেহারায় সুবহে সাদিকের সময় উপস্থিত হলেন মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে। অধিকাংশ ইসলামী স্কলারের মতে, ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়ালে মা আমিনার ঘর আলোকিত করে শুভাগমন করেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নুরানি হয়ে আগমন করায় পুরো জাহান ধন্য। তাঁর আগমনে শয়তান ছাড়া সবাই খুশি। মুমিন মুসলিমদের খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই খুশি হয়ে সারা বিশ্বের মুসলিম পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন করে। ঈদ শব্দের অর্থ খুশি হওয়া, ফিরে আসা, আনন্দ উদ্যাপন ইত্যাদি। মিলাদুন্নবী হলো নবীর আগমন। সুতরাং পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী বলতে নবীর আগমনে খুশি উদ্যাপন করাকে বোঝায়। আমরা সাধারণত কোনো উপহার পেলে আনন্দে মেতে উঠি। খাবারের ধুমধাম। ভালো চাকরি, ব্যবসায় ভালো লাভ, পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলে দেখা যায় আনন্দের বন্যা। কিন্তু আমরা না চাইতেই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ রসুলের উম্মত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। শ্রেষ্ঠ নিয়ামত ও আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ এক রহমত পেয়েছি। নিয়ামত ও রহমত পেয়ে কি আমরা আনন্দ ও শুকরিয়া আদায় করব না? এমনটি হতে পারে না। তিনি সারা জাহানের জন্য রহমত। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আমি আপনাকে রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি।’ সুরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৭।

রহমতের নবীর আগমনে আকাশ ও বাতাসে ধ্বনিত হলো আহলান সাহলান, মারহাবান। সর্বপ্রথম নবীজির পা পৃথিবীর জমিন স্পর্শ করায় পুরো জমিন পবিত্র হয়ে মসজিদে রূপ নিল। যার ফলে আজ মসজিদে, ঘরে, যানবাহনে, পথে সবখানেই নামাজ আদায় করতে পারছি। নবীজির মা হজরত আমিনা বলেন, ‘তার আগমনের পরমুহূর্তে একটা নুর প্রকাশিত হলো। সে আলোয় পুব ও পশ্চিম প্রান্তের সবকিছু আলোকিত হয়ে যায় এবং এ আলোয় সিরিয়ার শাহি মহল আমি দেখতে পাই।’ বায়হাকি, দালায়েলুন নবুয়ত। ‘তাঁর আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবা মাকামে ইবরাহিমের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। এ দৃশ্য দাদা আবদুল মুত্তালিব দেখতে পেয়েছিলেন।’ মাদারেজুন নবুয়ত। নবীজি খুব সম্মানিত হওয়ায় খতনা অবস্থায় আগমন করেছেন। হজরত আনাস (রা.) তিনি বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি আমার রবের কাছ থেকে সম্মানিত যে, আমি খতনা অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছি। আমার লজ্জাস্থান কেউ দেখেনি।’ তাবারানি আওসাত। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের আগে তাঁর বাবা আবদুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। মা আমিনা, দাদা আবদুল মুত্তালিব নানা আবদুল ওহাব। জন্মের পর আবদুল মুত্তালিব নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণ শিশুদের মতো ছিলেন না। এক অপরূপ নুরের অধিকারী ছিলেন। তাঁর দেহ সাধারণ কোনো ব্যক্তির মতো ছিল না। আমরা তাঁর দেহ সম্পর্কে বুখারি, মুসলিম, তিরমিজিসহ বেশ কিছু হাদিস গ্রন্থ থেকে জানতে পারি। তার চেহারা খুবই লাবণ্যময় ও নুরানি ছিল। পূর্ণিমার চাঁদের মতো ঝকঝকে। দুধে আলতা মিশ্রণ করলে যে রং হয় তেমন ছিল। খুব লম্বাও ছিলেন না খুব বেঁটেও না, মধ্যমাকৃতির। তাঁর আগে ও পরে কখনো তাঁর মতো সুপুরুষ দুনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেনি, করবেও না। মাথার চুল ছিল কানের লতি পর্যন্ত কিছুটা কোঁকড়ানো, ঢেউ খেলানো বাবরি। বাবরি কখনো ঘাড় পর্যন্ত আবার কানের লতি পর্যন্ত থাকত। চোখের মণি দুটি খুব কালো ছিল। চোখের পাতা ছিল খুব বড় এবং সব সময় সুরমা লাগানোর মতো দেখাত। নাক ছিল অতীব সুন্দর ও উঁচু। অতীব সুন্দর রজতশুভ্র দাঁত ছিল তাঁর। যা পরস্পর একেবারে মিলিত ছিল না, বরং সামান্য ফাঁকা ফাঁকা ছিল। হাসির সময় তাঁর দাঁত মুক্তার মতো চমকাত। ঘাড় ছিল দীর্ঘ, মনোরম মাংস, কাঁধের হাড় আকারে বড়। দুই কাঁধের মধ্যস্থলে কবুতরের ডিমসদৃশ একটু উঁচু মাংসখ-। এটাই মোহরে নবুয়ত। এতে লেখা ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’। মোহরের ওপর তিলক ও পশম ছিল এবং রং ছিল ঈষৎ লাল। দাঁড়ি ছিল লম্বা, ঘন, যা প্রায় বুক পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। হাত ও আঙ্গুলগুলো লম্বা ছিল, হাতের কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত পশম ছিল। হাতের তালু ছিল ভরাট ও প্রশস্ত। বুক ছিল কিছুটা উঁচু ও বীর বাহাদুরের মতো প্রশস্ত। বক্ষস্থল থেকে নাভি পর্যন্ত চুলের সরু একটা রেখা ছিল। পেট মোটা কিংবা ভুঁড়ি ছিল না। সুন্দর সমান ছিল। সুগঠিত ছিল ঊরু ও পা। দুই পায়ের গোড়ালি পাতলা ছিল। পায়ের তালুর মধ্যভাগে কিছুটা খালি ছিল। চলার সময় সামান্য ঝুঁকে মাটির দিকে দৃষ্টিপাত করে হাঁটতেন। শরীরের চামড়া রেশম থেকেও অধিক মসৃণ ও নরম ছিল। শরীরে ঘাম হলে ঘামের বিন্দুগুলো মতির মতো চমকাত। তাঁর ঘাম ছিল অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত। তথ্য : সিরাতে ইবনে হিশাম। নুরের আলো নিয়ে অন্যকে ক্ষমা, মেহমানদারি, ত্যাগ, আন্তরিকতা ও সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়বিচার ও ওয়াদা পালন, ধার্মিকতা, ন্যায়পরায়ণতা ও সংযম, নম্রতা, বিনয়, দয়া, সহমর্মিতার মধ্যমে সব ধরনের অপরাধ নির্মূল, কুসংস্কার, গোঁড়ামি, অন্যায়, অবিচার ও দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে জাহিলিয়া দূর করাই তাঁর আগমনের মূল কারণ। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সত্যসহ, সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১২৯।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।
সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন