শেখ শামীম নেত্রকোণা থেকেঃ পরিবারের ব্যাপক আর্থিক সংকট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ফেইসবুকে পোষ্ট দেয়া এক ছাত্রলীগ কর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আজ রোববার (২৫ অক্টোবর) ভোরে কোন এক সময় নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের বিশাউতি গ্রামে নিজ ঘরের বর্গার সাথে ঝুলে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় শেোকের মাতম বইছে। নিহত আল মামুনের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা বাকরুদ্ধ।
মৃত আল মামুন ওই গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। মৃতের বাবা- মা ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে এবং পরিবারে দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে বড়। মৃত আল মামুন কলমাকান্দা সরকারি ডিগ্রী কলেজের এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায় মৃত আল মামুন এর মা ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন দু’দিন আগে। ঘটনার দিন রাতে মা সাথে বসে খাওয়ার জন্য তাকে ডাক দেয়। এখন খাবো না। পরে খাবো। খাবার নিয়ে আল মামুন তার ঘরে চলে যায়। সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে তার ঘরের সামনে গিয়ে ডাকতে থাকে তার মা। ওই সময় রুম থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে চিৎকার শুরু করলে আশ পাশের লোকজন ছুটে আসে এবং দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে দেখতে পান বর্গার সাথে দঁড়ি দিয়ে ঝুলে আছে আল মামুনের মরদেহ।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজ ঘরের বর্গার সাথে দঁড়ি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে এবং ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে ৫২ বাংলা টিভিকে জানান বিশরপাশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মো. আবু সায়েম।
মৃত্যুর আগে আল মামুন তার ফেইসবুকে লিখে গেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপা। সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, আমি আপনার রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কলমাকান্দা উপজেলা শাখার একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে- অন্যায়ের প্রতিবাদ, সৎ সাহস ও বুকে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের আদর্শ ধারণ করে দেশ ও সমাজকল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি সবসময়। কখনো নিজের ভবিষ্যৎ ও পরিবারের কথা চিন্তা করিনি।
এমতাবস্থায় ব্যাপক আর্থিক সংকট ও পরিবারের বড় ছেলে হিসাবে সংসারের দায়িত্ব নেওয়া – পাহাড় সমতুল্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যদি দয়া করে আমার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করতেন ? তাহলে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে আমার পরিবারের এত কষ্টে দিন কাটতো না, কিছুটা হলেও সুখের সন্ধান পেত।’
এর আগে গত বছর সংশ্লিষ্ট রংছাতি ইউপি চেয়ারম্যান তাহেরা খাতুন তৎসময়ে ছেলেটির বাবা চা বিক্রেতা, বোন গার্মেন্টস কর্মী হওয়া সত্ত্বে সে (আল মামুন) নিজের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ও টিউশনী করে যে টাকা সঞ্চয় করে তা দিয়ে দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ তার এলাকায় বিশাউতি, রায়পুর ও গজারিকান্দা সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। ছেলেটির নিজের বলতে কিছু নেই। ছেলেটি দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ এসব উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল হতে আর্থিক সহায়তা পেলে অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের সেবা করার জন্য আরো উৎসাহিত হবে এ মর্মে আবেদন করেছিলেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান তাহেরা খাতুন ।
এ ব্যাপারে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল করিম সত্যতা নিশ্চিত করে ৫২ বাংলা টিভিকে জানান নিহত আল মামুনের মরদেহ উদ্ধার করে দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে কলমাকান্দা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।