• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

পদ পদবীর লড়াই চলছে সর্বত্র,  চাপা পড়ে যাচ্ছে মানুষত্ব / মানবিকতা ! এর শেষ কোথায় ?

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত অক্টোবর ৭, ২০২০
পদ পদবীর লড়াই চলছে সর্বত্র,  চাপা পড়ে যাচ্ছে মানুষত্ব / মানবিকতা !   এর শেষ কোথায় ?

পল্লী গ্রামের সেই রাখাল থেকে শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন পর্যন্ত সর্বত্রই চলছে পদের লড়াই।  সবাই পদ চায়, চেয়ার চায়, পজিশন চায়, নেতৃত্ব দিতে চায়!!  যোগ্যতা থাকুক কিংবা নাই, তাতে কি আসে যায় ?  শুধু একটা পদ হলেই হলো। পদের জন্য শুধু রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা লড়াই করছে বিষয় টি এমন নয়।  এ ক্ষেত্রে আমাদের ইসলামিষ্টরা ও পিছিয়ে নেই। যাদের কাছ থেকে আমরা মানুষত্ব, মানবতা শিখি তারা ও যেন দিন দিন কেমন যেন বদলে যাচ্ছেন।

হাটহাজারী মাদ্রাসার কথা কি মনে আছে?
কি তান্ডব?  কি বিশৃঙ্খলা?  সেখানে ও পক্ষ বিপক্ষ। তুমুল আন্দোলনে ভাংচুর করা হয়েছে মাদ্রাসার বিভিন্ন রুম ও অফিস কক্ষ। পদত্যাগে বাদ্য হয়েছিলেন  বড় হুজুর খ্যাত আল্লামা শফী।

এক পক্ষের দাবী জনাব শফী পুত্র আনাসের নেতৃত্বে চলছে
অনিয়ম ও দুর্নীতি !  ইন্না-লিল্লাহ, যাই কই? মাদ্রাসায় ও দুর্নীতি!!   হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামীম পদ আকড়ে ধরা নিয়ে তৈরী হয় বিশৃঙ্খলা। শিক্ষক, ছাত্র সবাই একে অন্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়লেন, অভিযোগ /অপবাদের ঝুড়ি নিয়ে মাঠে নামলেন !  এর নাম কি ইসলাম?

শুরু হলো পাল্টা পাল্টি কর্মসুচী। এক পক্ষ আরেক পক্ষ কে দালাল, মুনাফিক, বেঈমান বলে চিৎকার, চেচামেচি।  রাতভর হৈ হুল্লোড়!  তাও আমাদের মাদ্রাসার শ্রদ্ধাভাজন হুজুরেরা।

হুজুরদের এই কর্ম কান্ডে জাতি কি শিক্ষা পেলো?  জাতিকে কি বার্তা দিয়েছেন আপনারা, কখন ও কি ভেবে দেখেছেন? সামান্য মাদ্রাসা পদ নিয়ে যদি আপনাদের মধ্যে বিভেধ,  বিশৃঙ্খলা তৈরী হয় হয় তাহলে রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে পেলে কি করবেন? ছোট হুজুর,  বড় হুজুর,  মিডিয়াম হুজুর সব দলের সব হুজুরদের প্রতি অনুরোধ  ক্ষমতার লোভ, সম্পদের লালসা, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের মোহে পড়ে নিজেদের হাসির খোরাক বানাবেন না।

এমনিতেই  সমাজে দিন দিন বাড়ছে নষ্টদের নষ্টামি। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চতুর্দিকে। সেই দুর্গন্ধ থেকে ছড়াচ্ছে নানা কিসিমের রোগ।  ধর্ষণ , খুন, এখন নিত্য দিনের ঘটনা। শুধু কি ৭১ সালে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল?  না ভাই,  এখন  ও ঘটছে।

পার্থক্য শুধু এক জায়গায়,  আগে অপরাদের মুল হোতা ছিল উর্দু ভাষাভাষি নরপিসাচ পাকিস্হানী সেনারা আর এখন  বাংলা ভাষাভাষি  দলীয় নেতা কর্মীরা। জয় বাংলা শ্লোগান দিলেই কি সব কিছু জায়েয হয়ে যায়?  যে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই একি শ্লোগান দিয়ে নারীর সম্ভ্রম,  ইজ্জত  হানি  হচ্ছে।

শাহজালালের পুণ্যভুমি সিলেট। সেই সিলেট নিয়ে দেশ বিদেশে আমাদের কতো গর্ব। গুটি কয়েক অসৎ,অসভ্য ছাত্র নামধারী গুন্ডা পান্ডার হাতে আমরা সেই  সিলেট কে ছেড়ে দিতে পারি না।  চুপিসরে কোন অপরাধ সংগঠিত হওয়া আর প্রকাশ্যে ৮/১০ জন মিলে অপরাধ সংগঠিত করা আকাশ পাতাল পার্থক্য। প্রকাশ্যে অপরাধ করার অর্থই হলো রাষ্ট্রের আইন কানুন কে চ্যালেন্জ করা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলে থাকেন, অপরাধীদের  কোন দল নেই, কোন পরিচয় নেই, তার পরিচয় একটাই সে অপরাধী। সে যে দলের হোক থাকে তার শাস্তি ভোগ করতে হবে।  দল হিসেবে নয় থাকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। আমরা এই আইনের প্রয়োগ দেখতে চাই। আইন, আদালত সবই আছে কিন্তু যদি আইনের প্রয়োগ না থাকে তাহলে এমন আইন অর্থহীন।

এম সি কলেজের পুকুর পাড়ে নির্যাতিত খাদিজার চিৎকার আজ ও কানে ভাসে। সেই চিৎকারের রেশ কাটতে না কাটতে ছাত্রাবাসে দল বেধে নববধু ধর্ষণ!  ভাগ্যিস,  সে দিনের ঘঠনা ধামাচাপা দেয়া যায় নি। মিডিয়ার বদৌলতে আমরা তা জানতে পেরেছি। দুনিয়া জুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে, হবে। তাতে কি ধর্ষকদের চরিত্র সংশোধন হবে? না, হবে না।

এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষার গুনগত পরিবর্তন। আইনের সঠিক প্রয়োগ। কিন্তু দুর্ভাগ্য আইনের সঠিক প্রয়োগ সঠিক সময় হচ্ছে না। রাজনীতির মার প্যাচে আটকে আছে সুবিধা বঞ্চিত নাগরিকদের অধিকার। কেউ বিচার পায়, কেউ পায় না। নির্যাতিত গৃহবধূ তার ন্যায় বিচার পাওয়া তার নাগরিক অধিকার।  এ দিকে রাষ্ট্র তার বিচার করে দেয়া রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। এর জন্য জনগন প্রতিবাদ করতে হবে কেন?

তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন টেলিভিশন টকশোতে একজন নারী কে অশোভনীয় উক্তি করায় তাকে জেল খাটতে হয়েছে। তখন আমরা আইনের শক্ত প্রয়োগ দেখেছি। এই আইন তো এখন ও আছে, আজ আমরা  সেই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে এই একই  আইনের শক্ত প্রয়োগ দেখতে চাই। জেগে উঠুক আমাদের মানুষত্ব, মানবিকতা।

লেখকঃ আলী মুহাম্মদ সমুজ কলামিষ্ট ও গনমাধ্যম কর্মী।