• ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

হেফাজতকে বদলে দেয়া কে এই উসামা মুহাম্মদ?

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
হেফাজতকে বদলে দেয়া কে এই উসামা মুহাম্মদ?
বিবিএন নিউজঃ তিন যুগের শাসন। দু’দিনের অভ্যুত্থানে পতন। কোথা থেকে কী হয়ে গেল। হিসাব মেলানো কঠিন। পর্যবেক্ষকরা একেবারেই সময় পাননি। ঘটনা ঘটেছে চোখের পলকে। আনুষ্ঠানিক শুরুটা ১৬ই সেপ্টেম্বর, বুধবার দুপুরে এর আগেই একটি লিফলেট ছড়িয়ে পড়ে হেফাজত হেডকোয়ার্টারে। ছয় দফা দাবি।আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করতে হবে। পদ ছেড়ে দিতে হবে আল্লামা শাহ্‌ আহমদ শফীকে। আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ অবশ্য দীর্ঘ দিনের। বলা হচ্ছিল, পিতাকে ব্যবহার করে দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। আল্লামা শফীকে হটানোর দাবি অবশ্য রীতিমতো বিস্ময়কর ছিল। হাটহাজারীতে এমন দাবি উঠতে পারে কেউ কখনো ভাবতে পারেননি। মাত্র ১০ বছর বয়সে ছাত্র হিসেবে এখানে এসেছিলেন তিনি। শেষ তিন যুগ ছিলেন মুহতামিম বা প্রধান। তার ডিক্রিই ছিল হাটহাজারীতে শেষ কথা। কিন্তু সময় কত কিছুই না বদলে দেয়। শুক্রবার রাতে পদত্যাগের পরই তাকে যেতে দেয়া হয় হাসপাতালে। পরদিনই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার জানাজায় স্মরণকালের বৃহত্তম জমায়েত হয়েছে।

উসামা মুহাম্মদ। রহস্যময় এক ফেসবুক আইডি। আইডির পেছনের মানুষটি কে তা এখনো জানা যায়নি। কওমি অঙ্গনের নানা দুর্নীতি আর অনিয়ম নিয়ে বরাবরই সোচ্চার। কিন্তু হাটহাজারী আন্দোলনের সময় চলে আসেন একেবারে ফ্রন্টলাইনে। আন্দোলনে দিকনির্দেশনামূলক সব স্ট্যাটাস দেয়া হতে থাকে এ আইডি থেকে। বারবার দেয়া হয় সতর্কবার্তা। যেকোনো ধরনের প্রশাসনিক অভিযানের ব্যাপারে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। এরইমধ্যে আরেকটি ঘটনাও পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি এড়ায় না। হাটহাজারীর আন্দোলনের সমর্থনে ঢাকায় এক ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরও অত্যন্ত কড়া বক্তব্য রাখেন। বলেন, ছাত্রদের গায়ে হাত তোলা হলে ঢাকা অচল করে দেয়া হবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মাদ্রাসা বন্ধের সরকারি ঘোষণাও পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে পারেনি। আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকেই হাটহাজারীর আন্দোলন, না এর পেছনে অন্য কিছু আছে সে প্রশ্নের উত্তর এখনো খোঁজা হচ্ছে।

আল্লামা আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরেই কওমি ঘরানায় অত্যন্ত প্রভাবশালী আলেম ছিলেন। কিন্তু তিনি আলোচনার শীর্ষে আসেন ২০১৩ সালে। যখন ১৩ দফা দাবিতে শাপলা চত্বরে তার ডাকে সমবেত হয় লাখ লাখ ছাত্র। ঢাকায় আসলেও ওই সমাবেশে অবশ্য তিনি নিজে যোগ দেননি। শাপলায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আল্লামা শাহ্‌ আহমদ শফীকে চট্টগ্রামে ফেরার সুযোগ দেয়া হয়। হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলা দায়ের করা হয়। সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে হেফাজতের উত্থান ঘটে। দেশি-বিদেশি শক্তির দৃষ্টি পড়ে হেফাজতের দিকে। অনেক দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তি পা রাখতে থাকেন হাটহাজারীতে।

সরকারের সঙ্গে অবশ্য হেফাজতের সম্পর্কের একধরনের মেরামত হয়। সরকারবিরোধী অবস্থান থেকে নিজেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে নেন আল্লামা আহমদ শফী। তার ছেলে আনাস মাদানী এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মামলাগুলো গতি হারায়। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেয় সরকার। আরো বেশকিছু দাবি-দাওয়াও মেনে নেয়া হয়। এই আপাত শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে অবশ্য হেফাজতের ভেতরেই একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। জুনায়েদ বাবুনগরী বিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকেন। অন্যদিকে, কাউকে কাউকে দরবারি আলেম হিসেবে উল্লেখ করে সমালোচনা করা হয়। বিশেষ করে কওমি তরুণরা ফেসবুকে সরব হতে থাকেন।

যে ছাত্রদের বিপুল সমাবেশে আল্লামা শাহ্‌ আহমদ শফীর উত্থান সে ছাত্র আন্দোলনেই পদত্যাগ করতে হয় তাকে। এখন বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হচ্ছে, হাটহাজারীর পরিবর্তন হেফাজতকেও বদলে দেবে কিনা? হেফাজতের নেতৃত্বেই বা আসবেন কারা? নাকি সংগঠনটিতে বিভক্তি দেখা দেবে? রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করা নিয়ে আল্লামা শফী ও বাবুনগরীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। আল্লামা শফীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হেফাজতের নেতৃত্বে একটা বড় শূন্যতা তৈরি হলো।

হাটহাজারীতে এরইমধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে। জুনায়েদ বাবুনগরী প্রত্যাবর্তন করেছেন। মাদ্রাসা পরিচালনায় যৌথ নেতৃত্ব বেছে নিয়েছে মজলিসে শূরা। তিন সদস্যের প্যানেলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে মাদ্রাসা পরিচালনার চেয়েও হেফাজতের নেতৃত্বের ফয়সালা যে কঠিন তা খোলাসা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করলেও সংগঠনটি ঘিরে রাজনৈতিক তৎপরতা চলছে দীর্ঘদিন থেকেই। তবে হেফাজতের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সমঝোতার আভাস পাওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে শীর্ষ দুই পদ একধরনের সমঝোতার ভিত্তিতে বণ্টন হতে পারে। আমীরের পদে আসতে পারেন বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। আর মহাসচিবের পদে আসতে পারেন মুফতি ফয়জুল্লাহ অথবা মঈনুদ্দীন রুহীর মধ্যে কেউ।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এমনিতেই বাংলাদেশে প্রচলিত রাজনীতি অনেকটা বদলে গেছে। এই অবস্থায় নেতৃত্ব বেছে নেয়া হেফাজতের জন্য অত্যন্ত কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। এ চ্যালেঞ্জ সংগঠনটির নেতারা কীভাবে মোকাবিলা করেন তার ওপর বহুলাংশে নির্ভর করছে হেফাজতের ভবিষ্যৎ।(দৈনিক মানবজমিন)