• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ব্যক্তি জীবনে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও আমাদের করনীয়:আলী মুহাম্মদ সমুজ

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০
ব্যক্তি জীবনে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও আমাদের করনীয়:আলী মুহাম্মদ সমুজ

 

মানুষ সামাজিক জীব এই উক্তির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। মানুষ একা চলতে পারে না, তার নিজের প্রয়োজনেই সমাজের সাথে তাকে মিশতে হয়। সমাজ মানুষ তৈরী করছে, না মানুষ সমাজ তৈরী করছে এটি হাজার টাকার প্রশ্ন?

সত্যি কথা বলতে কি? মানুষই সমাজ তৈরী করছে, কিংবা করে। মানুষ ছাড়া সমাজ তৈরী হয় না। যেখানে মানুষ নেই সেখানে সমাজ নেই। মোদ্দা কথা মানুষই সমাজ তৈরী করে।
আমরা যে সমাজে বসবাস করছি এটি আমাদের তৈরী করা সমাজ। আমরা যদি ভালো হই তাহলে আমাদের সমাজ ভালো আর মন্দ হলে মন্দ।

একটি উন্নত মানের ফুল যেভাবে তার আশপাশে সুঘ্রাণ ছড়ায় ঠিক সেভাবেই একজন ভাল চরিত্রের লোকের ধারা তার সমাজে সুখ্যাতি ছড়ায় এবং মানুষ উপকৃত হয়। সব ফুল যেভাবে ফুটে না ঠিক তেমন নি সব মানুষ ও ভালো গুন অর্জন করতে পারে না। তাই ভালো গুন, ভালো চরিত্রের লোকের বড়ই প্রয়োজন।
আপনার সমাজ কে আপনি ভালো করতে চান? সুন্দর, সুশৃঙ্খল করতে চান? তাহলে আপনার কাজ অনেক, দায়িত্ব অনেক। প্রথমে নিজেকে গঠন করতে হবে। আপনার লেনদেন, আমানত দারী, কথাবার্তা, চলাফেরা, সবযেন হয় উন্নত মানের অর্থাৎ আকর্ষণীয়। যে কেউ যেন আপনার উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারে। আপনার ক্রোধ, যুলুম, নির্যাতন, থেকে পাড়া মহল্লার লোকজন যেন নিরাপদ থাকে। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখি?
কোন রকমে যদি কেউ কোন রাজনৈতিক দল কিংবা সামাজিক সংগঠনের নেতা হতে পারে তাহলে তিনি রাজা হয়ে যান, সবাই কে প্রজা ভাবেন? কিন্তু তা কি ঠিক? অবশ্যই না। এহেন আচরন কাম্য নয়, সঠিক নয়।

শত শত রাজনৈতিক দল এবং হাজারো সামাজিক সংগঠনে ভরপুর আমাদের ছোট্ট এই দেশ। সবার উদ্দেশ্য সমাজ ও সমাজের মানুষের সেবা করা, তাদের কল্যাণে কাজ করা, কিন্তু কাজ কতটুকু হয় ? কি পরিমান হয়, তা আমরা সবাই জানি।
জনগন কে কথা দিলে কিংবা তাদের দায়িত্ব কাঁধে নিলে তা সঠিকভাবে আঞ্জাম দিতে হয় যদিও অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে।
কাজ যতটুকু করতে পারবেন ঠিক ততটুকু হাতে নেন। নিজের সামর্থ্য ও সীমাবদ্ধতার দিকে খেয়াল রেখে কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে সামনের দিকে আগান, দেখবেন সফলতা পাবেন।

একা কোন কিছু করা যায় না, করতে পারবেন না। শত চেষ্টা করে ও আপনি ব্যর্থ হতে বাদ্য। তাই সবার সম্মিলিত উদ্যোগ অনস্বীকার্য। অল্প অল্প করে সবাই যদি জনকল্যাণমুখী কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করে তাহলে ভালো কাজের পরিমান বেড়ে যায় এবং এর সুফল ভোগ করে জনগন।

আমাদের সবার উপর কিছু না কিছু দায়িত্ব আছে। এ দায়িত্ব কেউ এড়াতে পারি না, যেমন পিতা -মাতার দেখা শুনার দায়িত্ব, পরিবার, পাড়াপ্রতিবেশী, এলাকা, জনগন মোট কথা সামাজিক দায়বদ্ধতা। শুধু নিজে আরাম আয়েশে থাকার নাম সুখ নয়, প্রকৃত সুখ হলো সবার সুখ দুঃখের অংশীদার হয়ে চলা।

তবে আমাদের সমাজ ভালো মানুষের পাশাপাশি মন্দ মানুষের কিন্তু অভাব নাই। ওরা মনের মধ্যে হিংসা, কৃপণতা লালন করে। যেখানেই ভালো কিছু দেখবে সেখানেই লাফ দিয়ে পড়বে। তালগোল পাকিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করবে। এরা খুব চতুর প্রকৃতির লোক এবং গ্রাম্য রাজনীতিতে পাকা। তাদের কাজ হলো সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ করে এই বাড়ি থেকে সেই বাড়ি, এই গ্রাম থেকে সেই গ্রামের মানুষের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে, সন্ধ্যাবেলা শহর কিংবা গ্রাম্য হোটেলে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করে। এদের কারনেই যোগ্য ও দক্ষ লোক সমাজের নেতৃত্বে আসতে পারে না।

আমাদের সমাজে এখন ও প্রচুর ভালো লোক আছে। তাদের কে সামনে আসা চাই। আমরা যদি নিজেদেরকে জবাবদিহিতার আওতায়
আনতে পারি তাহলে দেখবেন সমাজের অনিয়ম, দুর্নীতি অনেকটাই কন্ট্রোলে চলে আসছে। সুন্দর ও আলোকিত সমাজ গঠনে দলমত সকলের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার বিকল্প নেই।

লেখকঃ আলী মুহামমদ সমুজ, কলামিস্ট ও গনমাধ্যম কর্মী। গ্রেটার ম্যানচেষ্টার, লন্ডন।