বিবিএন নিউজ ডেস্ক: সিলেটে দিনদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। করোনা আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসার জন্য বিভাগের একমাত্র ডেডিকেটেড চিকিৎসা কেন্দ্র শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদা। তবে এই হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে তরল অক্সিজেন সরবরাহ করে স্পেকট্রা অক্সিজেন নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করে সরবরাহ করে থাকে। তবে সম্প্রতি ভারতে অক্সিজেনের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে প্রতিবেশি এই দেশে মারা যাচ্ছেন অনেকে। চারদিন ধরে ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানিও বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় স্পেকট্রার পক্ষ থেকে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আগের মতো অক্সিজেন সরবরাহ সম্ভব নয়।
একদিকে রোগী বাড়ছে, অপরদিকে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে গেলে সঙ্কট তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে বর্তমানে সিলেটে চাহিদা পরিমাণ অক্সিজেন মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত রোগীর চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করছে স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ভবিষ্যতেও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সর্বোচ্চ সরবরাহ নিশ্চিত করবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সিলেটের করোনা ডেডিকেটেড শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে প্রতিদিন তরল অক্সিজেনের চাহিদার রয়েছে প্রায় দেড় হাজার লিটারের। যার পুরোটাই সরবরাহ করে স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড। গত বছরের ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সেবা নিশ্চিত করতে সিলেটে এই হাসপাতালটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট বসায় কোম্পানিটি। যার ধারণ ক্ষমতা ১০ হাজার লিটার।
শামসুদ্দিন হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেডের পক্ষ থেকে অক্সিজেন যতটুকু সম্ভব কম ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত কুমার মহাপাত্র সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালটিতে প্রায় দেড় হাজার লিটার অক্সিজেনের প্রয়োজন রয়েছে। যা সম্পূর্ণ মাত্রায় সরবরাহ করছে স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড।’
স্পেকট্রা থেকে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশের কথা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘যদি কোনোভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয় তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তবে কোম্পানিটি আমাদের আশ্বস্ত করেছে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ যতদূর সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবে তারা।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিনে ৬৯০ টন অক্সিজেন বাংলাদেশে রপ্তানি করে ভারত। তবে ২১ এপ্রিলের পরে ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায় রপ্তানি। এই সময়ে ভারতে অক্সিজেনের সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করে।
রোববার রাত পর্যন্ত পাওয়া হিসেবে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৩ জন। এরমধ্যে ৪৭ জনের করোনা পজিটিভ ও ২৬ জনের শরীরে রয়েছে করোনার উপসর্গ।
চিকিৎসকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর করোনা সংক্রমণ অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় এবং নতুন স্ট্রেইনগুলো অতি মাত্রায় সংক্রামক হওয়ায় রোগীদের ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেরই তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে বেশি সংখ্যক রোগীকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। এছাড়া গুরুতর অসুস্থদের জীবন বাঁচাতে অক্সিজেন সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি। বেশিরভাগ রোগীই তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসছেন এবং তাদের হাই-ফ্লো নজেল ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।