খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের প্রথম দুই মেয়াদের এই অর্থমন্ত্রী সুস্থ আছেন। পড়াশোনা আর লেখালেখিতে খুঁজে নিচ্ছেন অবসরে ব্যস্ততা। পুত্রবধূ আর নাতনিদের সঙ্গে গল্প করেও পার করেন দিনের অনেকটা সময়।
আমলাজীবন ছেড়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত রাজনীতিতে নাম লেখান গত শতকের একেবারে শেষদিকে। সিলেট-১ (সিলেট মহানগর ও সদর) আসন থেকে তিনবার নির্বাচন করে দুবার জয়ী হন। সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঘোষণা দিয়ে রাজনীতি থেকে ইস্তফা দেন। আসনটি ছেড়ে দেন ছোট ভাই এ কে আবদুল মোমেনকে। নৌকার প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে ড. মোমেন এখন বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
অবসরের ঘোষণার সময় মুহিত বলেছিলেন, বাকি দিনগুলো বই পড়ে আর লেখালেখি করেই কাটাতে চান তিনি।
তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. বাচ্চু জানান, বনানীতে নিজ বাসাতেই ছেলে, পুত্রবধূ, নাতনিদের নিয়ে থাকেন সাবেক এই অর্থমন্ত্রী। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। ভালো আছেন। করোনাভাইরাসের টিকার দুটি ডোজই ইতিমধ্যে নিয়েছেন। সবশেষ গত ৯ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেন।
বাচ্চু বলেন, ‘করোনার টিকা নেওয়ার পর তিনি এখন বাইরে যেতে চান। সিলেটে নিজের এলাকায় যেতে চান। কিন্তু লকডাউনের কারণে পারছেন না।’
ঘুম, আহার ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর বাইরে সাবেক মন্ত্রী মুহিতের বাকিটা সময় কাটে বই পড়ে এবং লিখে। কম্পিউটারের মনিটরের সামনে বসে এখনো দিব্যি কি-বোর্ডে হাত চালাতে পারেন তিনি। বাচ্চুর ভাষায়, ‘কম্পিউটারে সকালে বসলে বিকেলেও ওঠেন না।’
এমনিতে স্বাভাবিক রুটিনে দিন কাটে মুহিতের। ঘুম থেকে ওঠেন আট থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে। তারপর নাস্তা করে খানিক বিশ্রাম নেন। শুয়ে-বসে বই পড়েন। তারপর দুপুরের আহারের পর আবার বিশ্রাম। বিকেলে নাস্তা করে ছেলের দুই মেয়ে অর্থাৎ নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটান। পুত্রবধূর সঙ্গে গল্প করেন।
রাতের খাবার খেয়ে শোয়ার ঘরে চলে যান দশটার দিকেই। কিন্তু তারপর হয়তো কম্পিউটারে বসে লেখালেখি করেন। বিছানায় যান ১২টা থেকে একটার মধ্যে।
বাচ্চু বলেন, নিয়মিত লেখালেখি করে যাচ্ছেন সাবেক এই অর্থমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে অনেকের চাহিদা অনুযায়ী বেশ কিছু লেখা লিখেছেন। মানুষকে দিয়েছেন।
চলমান রমজান মাসে রোজা রাখছেন অশীতিপর এই সাবেক অর্থমন্ত্রী। তবে বার্ধক্যজনিত কিছু সমস্যার কারণে নিয়মিত রাখতে পারছেন না।
সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হিসেবে মুহিত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে স্পষ্ট কথাবার্তার জন্য গণমাধ্যমে প্রায়ই আলোচনায় আসতেন। এ বিষয়টি তাকে মন্ত্রিসভার অন্যদের চেয়ে স্বাতন্ত্র্য পরিচয় এনে দিয়েছিল। ইংরেজি সাহিত্যের অনুরাগী মুহিত ডাক পেলে ছুটে যেতেন এ ধরনের যেকোনো অনুষ্ঠানে।
তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, রাজনীতি এবং মন্ত্রিত্ব থেকে অবসরে যাওয়ার পরও যেকোনো উৎসব-অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত হলে যোগ দিতেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে আয়োজিত নানা সভাতেও গিয়েছেন মাঝেমধ্যে। মূলত তিনি কাজে ব্যস্ত থেকে মানুষের সঙ্গে ভালো সময় কাটাতে পছন্দ করেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে এখন তা সম্ভব হচ্ছে না।
আবুল মাল আবদুল মুহিতের কর্মজীবন শুরু হয় আমলার চাকরিতে। বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ১৯৭১ সালে সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন মুহিত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। গত শতকের একেবারে শেষ দিকে নাম লেখান রাজনীতিতে।
২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করেন মুহিত। তবে প্রথমবার ভালো করতে পারেননি। হেরে যান আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপি নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের কাছে। পরেরবার ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাইফুর রহমানকেই পরাজিত করে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুহিত। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন তিনি। দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হন। আবারও দায়িত্ব নেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের। ওই মেয়াদের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে ইস্তফার ঘোষণা দেন মুহিত।