সিলেট প্রতিনিধি : পুস্তক প্রকাশনা শিল্পে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে ‘‘সৃজনে ছন্দে আনন্দে’’ শ্লোগান নিয়ে ভাষার মাসের শুরুতে সিলেট মহানগরীতে আত্মপ্রকাশ করলো ‘নির্ঝর প্রকাশ’।মূলত গুণগত মানসম্পন্ন গ্রন্থ প্রকাশ করাই এ প্রকাশনা সংস্থার প্রধান লক্ষ্য। দৈনিক সিলেটের ডাক এর সিনিয়র সাব-এডিটর, বিশিষ্ট কবি ও গল্পকার আবদুস সবুর মাখন এবং বিলাতে বসবাসরত সাংবাদিক ও লেখক সিদ্দিকুর রহমান নির্ঝর এর যৌথ প্রয়াসে এ প্রকাশনা সংস্থার যাত্রা শুরু হলো। ইতোমধ্যেই আমেরিকা প্রবাসী ম.গ আদ্দীন এর গল্পগ্রন্থ ‘‘অগ্নি স্ফুলিঙ্গের রঙ’’ গল্পগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে ‘নির্ঝর প্রকাশ’ তাদের যাত্রা শুরু করেছে।‘‘নির্ঝর প্রকাশ’ এর কার্যালয় হচ্ছে সিলেটের প্রাণকেন্দ্র দরগা মহল্লায়।
প্রকাশকদ্বয়ের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বৃহত্তর সিলেটের অনেক কবি, সাহিত্যিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছেন। শুধু সিলেটের নয়, বরং সারা দেশের বিভিন্ন জেলার অনেক কবি, সাহিত্যিক নিরবে প্রবাসে বসে দীর্ঘদিন ধরে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা ইত্যাদি নানাবিধ লেখালেখি করে চলেছেন। কিন্তু বিশ্বস্ত প্রকাশনা সংস্থা না পাওয়ায় নিজের গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারছেন না-তাদের জন্যই এ প্রকাশনা সংস্থার যাত্রা শুরু।
প্রকাশক নির্ঝর বলেন, অনেক লেখক/সাহিত্যিক বাজারমূল্য থেকে বেশি টাকা-পয়সা খরচ করে গ্রন্থ ছেপেও মনমতো হয়নি গ্রন্থটি। অনেকে গ্রন্থ ছাপার পর দেখছেন গ্রন্থে প্রচুর বানান বিভ্রাট, বাক্য বিন্যাস ইত্যাদিতে প্রচুর ভুল রয়ে গেছে। এমনকি অনেক লেখক ঢাকায় নামকরা পাবলিশার্স থেকে গ্রন্থ ছাপার পরও দেখছেন প্রচুর ভুল রয়ে গেছে। একটা প্রবন্ধ দুইবারও ছাপা হয়েছে। প্রবাসী অনেক লেখক অনেক দিন ধরে লন্ডন, আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাস করার ফলে দেশের কোন প্রকাশক কেমন বা কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে পারেন না। ফলে গাঁটের পয়সা খরচ করে বই ছেপেও তা পাঠকদের হাতে তুলে দিতে লজ্জাবোধ করেন। প্রবাসী লেখকদের এসব নানা সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ‘নির্ঝর প্রকাশ’ এর আত্মপ্রকাশ।
লন্ডন প্রবাসী সিদ্দিকুর রহমান নির্ঝর নিজে দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখির সাথে জড়িত বিধায়, প্রবাসী লেখকদের এসব সমস্যা তাঁর নিজ চোখে প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে নির্ঝর জানান, তিনি নিজেও ঢাকার প্রকাশকের কাছে গ্রন্থ ছেপে ঠিক যুতসই কাজ পাননি। অনেকে অভিযোগ করেন, ঢাকার প্রকাশকরা লেখকের কাছ থেকে বই নেবার আগে এক ধরনের ব্যবহার করেন, আর ত্রুটিপূর্ণ ভাবে গ্রন্থ ছাপা হবার পর আরেক ধরনের ব্যবহার করেন। তিনি জানান, যেহেতু তিনি নিজে লেখালেখি করেন ও লন্ডনে বসবাস করছেন দুই দশক ধরে, সেহেতু তাঁর অনেক লেখকের সান্নিধ্যে যাবার সুযোগ হয়েছে। এমনকি দেশ থেকে আসা অনেক মৌসুমী প্রকাশকদের নানা প্রতিশ্রুতি শোনার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তিনি দেখেছেন অনেক প্রকাশক চমৎকার কথা বলে সুন্দর করে ছাপার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পান্ডুলিপি নিয়ে যান। কিন্তু ছাপার পর দেখা যায় আসলে কোন সম্পাদনাই করা হয়নি। লন্ডন প্রবাসী বলে অনেকে বাজারমূল্য থেকে ছাপার দাম অনেক বাড়িয়ে বলে থাকেন। বিলাত বা অন্যান্য দেশে বসবাসরত সকল কবি, সাহিত্যিকদের কাছে অঙ্গীকার করে প্রকাশক জানান, তারা লেখকের সাথে যেভাবে চুক্তি করবেন ঠিক সেভাবেই গ্রন্থ প্রকাশ করে দেবেন।
প্রকাশকদ্বয় জানান, তাঁরা নিজে লেখালেখির সাথে জড়িত বিধায় তারা কখনোই যাচ্ছেতাই ভাবে কারো গ্রন্থ ছাপাবেন না। প্রত্যেকের গ্রন্থই একটা মানে উন্নীত করে তবেই বই আকারে প্রকাশ করা হবে। সুতরাং যার যেভাবে পান্ডুলিপি আছে তার পান্ডুলিপির আরো মডিফাই রূপ দেখতে পারবেন লেখক ছাপার পর। কিন্তু কেউ যদি নিজে গ্যারান্টি দিয়ে বলেন, তাঁর বই যেভাবে আছে সেভাবেই ছেপে দিতে হবে-সেই অনুরোধও রাখার চেষ্টা করা হবে। তবে যদি দৃশ্যমান ভুলত্রুটি থেকে থাকে আর সেটা পাল্টাতে লেখক অনিচ্ছুক হন, তাহলে কখনোই ‘নির্ঝর প্রকাশ’ সেই পান্ডুলিপি প্রকাশ করবে না।
‘নির্ঝর প্রকাশ’ গ্রন্থ বের করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাণ্ডুলিপি পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও সম্পাদনার মতো বিষয়গুলো তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গতানুগতিক প্রকাশকদের মতো শুধু কিছু বানান-টানান ঠিক-করা পর্যন্ত তারা তাদের কাজকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না।। ‘নির্ঝর প্রকাশ’ লেখকদের প্রতিটি পান্ডুলিপি ভাল করে পড়ে সম্পাদনা করে গ্রন্থ প্রকাশ করতে বদ্ধপরিকর।
যেসব সম্মানিত লেখক গ্রন্থ প্রকাশ করতে আগ্রহী তাঁরা সিদ্দিকুর রহমান নির্ঝর ( London : Mob: 07944 640 390)) এবং আব্দুস সবুর মাখন (Sylhet: Mob: 0088 1671 130736) এ দুটি নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও যে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে সেটি হচ্ছে-msnirjhor786@gmail.com