আব্দুল কাদের তাফাদার,অতিথি প্রতিবেকঃ বরুণায় শায়েখ খালিলুর রহমানের জানাজায় লাখো শোকার্ত মানুষের ঢল নেমেছিল। শুক্রবার বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলাধীন বরুণা মাদ্রাসা মাঠে শায়েখ খলিলুর রহমানের জানাজায় সিলেটের শোকাভিভূত লাখো মানুষের ঢল নামে।
ভক্ত ও মুসল্লির অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় চির নিদ্রায় শায়িত হলেন আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমির ও বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) এর সহ সভাপতি, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের জামিয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা মাদ্রাসার মুহতামিম ও প্রখ্যাত শায়খুল হাদিস আল্লামা শায়খ খলিলুর রহমান বরুণী।
শুক্রবার বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে বরুনা মাদরাসা মাঠে এ অঞ্চলের ইসলামের এক আলোকবর্তিকা শায়েখ লুৎফুর রহমান বরুণীর বড় ছেলে শায়েখ খলিলুর রহমানের নামাজে জানাজা দ্বিতীয় ছেলে শায়েখ বদরুল আলম হামিদির ইমামতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
জানাযার নামাজের নির্ধারিত সময় বিকাল তিনটা থাকলেও বাদ ফজর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মরহুমের ভক্ত, মুরিদান ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আগমনে জুম্মার নামাজের পূর্বেই মাদ্রাসা প্রাঙ্গন পরিপূর্ণ হয়ে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এসময় রাস্তাঘাটে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এর পক্ষ থেকেও নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জানাজার নামাজ শেষে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে মরহুমের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর। তিনি ৩ ছেলে ও ৫ মেয়েসহ অসংখ্য ছাত্র, আত্মীয়-স্বজন, ভক্তবৃন্দ রেখে গেছেন।
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর আল্লামা শায়েখ খলিলুর রহমানের শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে সিলেটের নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দুই দিন আগে শায়েখ খলিলুর রহমান তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন। ফলে বৃহস্পতিবার সিলেট থেকে মৌলভীবাজার নিয়ে যাওয়া হয়। বাড়িতে আসার পর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি দীর্ঘদিন থেকে লান্সের সমস্যা, জ্বর, ডায়াবেটিস ও হাই প্রেসারসহ নানা রোগে ভূগছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সিলেটসহ সারা দেশের কওমি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
জানাজা পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মোঃ আব্দুস শহীদ এমপি, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মৌলভীবাজার পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম, থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুস ছালেক, বেফাকের মহাসচিব মুফতি মাও মাহফুজুল, বেফাকের মহা পরিচালক মাও জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী, জামেয়া গহরপুর এর মহতামিম মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, জামেয়া রেঙ্গা সিলেট এর মুহতামিম মাও. মুহিবুল ইসলাম বুরহান, জামেয়া ভার্থখলা সিলেট এর প্রিন্সিপাল মাও মজদ্দুদীন আহমদ, শেখবাড়ি মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, মৌলভীবাজার ওলামা পরিষদের সভাপতি মাও আব্দুল বারী ধর্মপুরী, বানিয়াচং ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাও আব্দাল হোসেন খান, হবিগঞ্জ ইসলামি ফাউন্ডেশনের ডিডি মাও শাহ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ন মহাসচিব মুনতাসির আলী, অধ্যাপক আব্দুস ছবুর প্রমুখ।
মরহুম খলিলুর রহমানের পিতা শায়খ লুৎফুর রহমান বর্ণভী (রহ.) ছিলেন উপমহাদেশের একজন বুজুর্গ আলেমে দ্বীন। তিনি বৃটিশ আমলে ওই এলাকায় কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর থেকে লেখাপড়ার জন্য এ মাদ্রাসার ব্যাপক সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মাদ্রাসার বহুমূখি শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গরিব ও এতিমদের বিনামূল্যে লেখা-পড়া ও ফ্রি থাকা খাওয়ার সুযোগ সুবিধা রয়েছে। মরহুম খলিলুর রহমান ছিলেন একজন নিরহংকারী, পরোপকারী ও দরসে হাদিসের একজন আলেমে দ্বীন। তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে ছিলেন একজন আলোকবর্তিকা।