ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:সুনামগঞ্জের ছাতকের কালারুকা ইউনিয়নের রায়সন্তোষপুর গ্রামে দু’পক্ষের পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে বিরাজ করছে উত্তেজনা। এক পক্ষ অপর পক্ষকের বিরুদ্ধে দায়ের করেছেন থানায় পৃথক দু’টি অভিযোগ। একটি গাছ কাটার অপরটি গরু মারার। কিন্তু ভেতরে কাজ করছে জায়গা সক্রান্তের বিরোধ। তার পরও শান্ত নয় গ্রামের বিবধমান দু’টি পক্ষ। এ নিয়ে শান্তিপ্রিয় গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। দু’পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ি সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, রায়সন্তোষপুর গ্রামের সাদিক মিয়ার পুত্র মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে গ্রামের ফারুক মিয়া, ফজলুর রহমান ঠান্ডা, মাহমুদুর রহমান, মসুদ মিয়া, মুজিব, আশিক মিয়াসহ ৬জনের নাম উল্লেখ করে ছাতক থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ২১ জানুয়ারী। দায়ের করা অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে তাদের বাড়ির সামনের জমির সীমানা থেকে আনুমানিক ৪০হাজার টাকা মূল্যের একটি মেহগনি গাছ জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যায় আসামীরা। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের গাছ-পালাও কেটে ক্ষতি সাধন করেছে তারা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানা পুলিশের এসআই লিটন দাশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কর্তন করা গাছ গ্রামের ফখর উদ্দিন ও লাল মিয়ার জিম্মায় রেখে আসেন। এ ঘটনার দুইদিন পর ২৪ জানুয়ারী সন্ধ্যায় গ্রামের মৃত সমছু মিয়ার পুত্র মাহমুদুর রহমান বাদী হয়ে ছাতক থানায় গৃহপালিত একটি গাভীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগে গ্রামের সমরাজ মিয়া, হাছনাত মিয়া, আনকার মিয়া, সাদিক মিয়া, লায়েছ মিয়া ও নজরুলসহ ৬জনকে আসামী করা হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আসামীদের সাথে তাদের পূর্ব শত্রুতা রয়েছে। গৃহপালিত গাভীসহ বাচ্চাকে ঘাস খেতে জমিতে রেখে আসলে ওইদিন দুপুরে আসামীরা গাভীটিতে পিটিয়ে মেরে পেলে। এতে তার ৩৫হাজার টাকায় ক্ষতি হয়েছে। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরদিন থানার এ এসআই আবু তালেব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। থানায় পৃথক দু’টি বিষয়ে দু’পক্ষের পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের ফলে ছড়াচ্ছে উত্তেজনা। এ বিষয়ে সাদিক মিয়ার পুত্র ও গাছ কাটার অভিযোগকারী মামুনুর রশিদ জানান, আমাদের জায়গায় গাছ কাটার অভিযোগটিকে ধামাচাঁপা দিতে গরু পিটিয়ে হত্যার অভিযোগটি সাজিয়েছে মৃত সমছু মিয়ার পুত্র মাহমুদুর রহমান। পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তারা নিজেরাই মিথ্যা নাটক সাজিয়ে অহেতুক হয়রানী করছে। মামুনুর রশিদ আরও জানান, মাহমুদুর রহমানদের সাথে তাদের জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধ নিস্পত্তির জন্য গ্রাম্য পঞ্চায়েতের উদ্যোগে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সম্প্রতি পঞ্চায়েত বৈঠকে জায়গা-জমির দলীলপত্র উপস্থাপনা করায় এবং দলীলপত্র সঠিক হওয়ায় সালিশ ব্যক্তিত্বরা তার পিতা সাদিক মিয়া পক্ষের জমি বলে ঘোষণা দিলে মাহমুদুর রহমানরা বৈঠকের সিদ্ধান্তকে মেনে নেয় নি।
গ্রামের মৃত ঠাকুর মিয়ার পুত্র হাছনাত মিয়া বলেন, মৃত সমছু মিয়ার সৎ মা, মৃত কনু মিয়ার স্ত্রী খুশি বিবির কাছ থেকে রায়সন্তোষপুর মৌজার জেএল নং-২৬৬, ও দাগ নং-এসএ ২১৮৮ এর ৭১৭১৮১ইং দলীলমূলে সাড়ে ৩শতক জায়গা ক্রয় করেছিলেন সাদিক মিয়া। এর দলীলাদিও তাদের কাছে আছে। গ্রাম্য পঞ্চায়েতও তাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু ওরা অন্যায় ভাবে ফায়দা হাসিলের জন্য মুরব্বিদের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করেছে। সাদিক মিয়ার এ জায়গাটুকো আত্মসাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে আসছে মাহমুদুর। ইউপি সদস্য আকল মিয়া বলেন, সমছু মিয়া ও সাদিক মিয়া পক্ষদ্বয়ের মধ্যে জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ আছে। বিষয়টি নিস্পত্তির চেষ্টা করেছিলেন গ্রামের মুরব্বিরা কিন্তু নিস্পত্তি হয়নি। গরু মারার বিষয়ে তিনি বলেন, কে মেরেছে তারা জানা নেই। তবে মাহমুদুর রহমানের পরিবার এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে। জমির বিরোধ নিস্পত্তির সালিশ বৈঠকের সভাপতি ফরিদ মিয়া জানান, সাদিক মিয়া ও মৃত সমছু মিয়ার পক্ষের মধ্যে জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এ বিরোধ নিস্পত্তির উদ্যোগ নিয়ে গত ৮-৯মাস আগে সর্বশেষ এক বৈঠক হয়। বৈঠকে ক্রয়সূত্রে মালিক সাদিক মিয়ার দলীলপত্র ঠিক থাকায় তাকে জায়গা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত হয়, সমছু মিয়াকে নগদ ৫০হাজার টাকা দিবেন সাদিক মিয়া। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত সাদিক পক্ষ মেনে নিলেও সমছু পক্ষরা মেনে নেয়নি। কর্তন করা গাছের টুকরো তাদের জিম্মায় আছে বলে গ্রামের ফখর উদ্দিন ও লাল মিয়া জানিয়েছেন। ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাজিম উদ্দিন জানান, দু’পক্ষের পৃথক দু’টি লিখিত অভিযোগ তদন্তাধিন আছে, তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।