লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ :: সুনামগঞ্জে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ চলছে ধীর গতি। সময় মতো কাজ শেষ করা নিয়ে কৃষকরা আছেন শঙ্কায়।২০১৭ এর কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরে পাউবো‘র বাঁধের ভাঙ্গন বন্ধকরণ ও মেরামত কাজ বাস্তবায়নকল্পে প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদের এক মাস পার হয়ে গেলেও এখনও কাজ শুরু হয়নি ৭৫ ভাগ প্রকল্পে। এছাড়াও ৩০টি প্রকল্পে গঠিত হয়নি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি।
জেলার ফসলরক্ষা বাঁধের এমন হালচিত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওর সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও হাওরের সাধারণ কৃষকরা। নিধারিত সময়ে বেঁড়িবাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় ফসলের সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। দ্রুততম সময়ে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোতে কাজ শুরু ও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের তাগাদা জানিয়েছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
নতুবা ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণ কাজে অনিয়ম দুর্নীতি হলে সাধারণ কৃষকদের সাথে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। উপজেলা চেয়ারম্যান গণ ও এ নিয়ে তাদের শঙ্কার কথা বিভিন্ন ফোরামে তুুুলে ধরেছেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের তথ্য অনুযায়ি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে জেলার বিভিন্ন হাওরে ৯৫১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে ৭৮৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময় ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারিতে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা থাকলেও ২৩ জানুয়ারি শনিবার দুপুর পর্যন্ত অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ১৬০টি প্রকল্পে।
শতকরা হিসেব করলে প্রায় ৭৫ ভাগ প্রকল্পে এখনও কাজই শুরু হয়নি। এছাড়াও ৩০টি স্কীমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়নি বলে জানা যায় এই তথ্যে।
জানা যায়, এবার সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ২১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ৩২টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১২টি প্রকল্পে এখনও কাজ শুরু হয়নি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৫৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ৪১টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হলেও কাজ শুরু হয়েছে ২৭টিতে। ধর্মাপাশা উপজেলায় এবার সবচেয়ে বেশি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই উপজেলায় ১৮৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে অনুমোদিত ১৬৯ প্রকল্পের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ১৪টিতে। তাহিরপুর উপজেলায় ৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ৮২ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হলেও কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ৪টিতে। জামালগঞ্জ উপজেলায় ৮৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ৪৪ প্রকল্পের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ১৬টিতে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় এবার ৪৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ৪৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত ২২ টি প্রকল্পে কাজ শুরু বাকি রয়েছে। দিরাই উপজেলায় অনুমোদিত ১২০ প্রকল্পের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ১৬টিতে। এই উপজেলায় বিভিন্ন হাওরে ৯৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কথা রয়েছে।
জেলার সবচেয়ে বেশি হাওরের উপজেলা শাল্লায় ১৪৯কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ১৫৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের ১ মাসে মাত্র ২১ টি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলায় ৩৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হলেও এখনও ১০টি প্রকল্পে পিআইসি গঠন হয়নি। কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ৪টিতে। এই উপজেলায় ৭৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করার কথা রয়েছে। জেলার সীমান্তিক উপজেলায় দোয়ারাবাজারে ৬৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ৩৯ টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পের ৮টিতে কাজ শুরু হয়েছে ৭টিতে এখনও পিআইসি গঠন হয়নি। জেলার ছাতক উপজেলায় হাওর কম থাকায় কম প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ১৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হলেও ১৩ প্রকল্পে এখনও পিআইসি গঠন হয়নি । কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ৩টিতে।
১১ উপজেলায় বাঁধ নির্মাণে কাজের অগ্রতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, একমাস পেরুলেও এখনও ৮০ ভাগ প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। কাজের অগ্রগতি বিষয়ে আজকেও আমাদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পাউবোর সংশ্লিষ্টদের সাথে দেখা করেছি। ফসলের সুরক্ষা নিয়ে আমরা শঙ্কা প্রকাশ করেছি। পাউবোরসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় ২০১৭ সালের মতো হাওর ডুবির ঘটনা ঘটলেও ছাড় দেয়া হবে না। কৃষকদের সাথে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।
উপজেলা পর্যায়ে প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ে সময় নেয়া ও হাওরে বিলম্বে পানি নিষ্কানের কারনে পিআইসি গঠনে বিলম্ব ও নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হলেও নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের কারণে ৩০টি প্রকল্পে পিআইসি গঠন করতে বিলম্ব হচ্ছে। একদুদিনের মধ্যে ২৩টি স্কীমে পিআইসি গঠন করা হবে। সম্ভাব্যতা না থাকায় ৭ টি প্রকল্প বাতিল হতে পারে বলে জানান তিনি। অনুমোদিত প্রকল্পে নানা কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে আমরা আশাবাদী।