বিবিএন নিউজ ডেস্ক: সুনামগঞ্জের ধরমপাশার স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন (৫২), তাঁর ছোট ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকন (৩২), সাংসদের বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মোবারক হোসেন ওরফে মাসুদসহ (৫৫) ৬৩ জনের বিরুদ্ধে শনিবার সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ধরমপাশার পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য শ্যামাচরণ বর্মণকে (৬৫) হত্যা, সুনই জলমহালের খলাঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় ওই লিখিত অভিযোগ দেন সমিতি লিমিটেডের সভাপতি নিহত ব্যক্তির ছেলে চন্দন বর্মণ (৩০)।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনই জলমহালটি জেলা প্রশাসনের অধীন। বার্ষিক প্রায় ২৫ লাখ টাকা করে ছয় (বাংলা ১৪২২ থেকে ১৪২৭ সাল) বছরের জন্য এটি ইজারা পায় সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির সভাপতি চন্দন ইজারা মূল্য পরিশোধ করেন ও জলমহালটির পাড়ে বসবাসসহ অন্যান্য কাজের জন্য পাঁচটি ঘর তুলে তা রক্ষণাবেক্ষণ করেন। একই সমিতির সভাপতি দাবি করে উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেলের অনুসারী সুবল বর্মণ (৩০) তিন মাস আগে ১৫-২০ জন লোক নিয়ে জলমহালটির পাড়ে দুটি ঘর তৈরি করেন এবং ১৪২৭ সালের জন্য এর ইজারা মূল্য পরিশোধ করে সেখানে বসবাস শুরু করেন। তবে জলমহালটি নিয়ে উচ্চ আদালতে সমিতির দুটি মামলা থাকায় আদালতের নির্দেশে জলমহালটিতে স্থিতাবস্থা রয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সমিতির পক্ষ থেকে ১৪২২ বঙ্গাব্দের ইজারা মূল্য পরিশোধ করলেও সাংসদ মোয়াজ্জেম, উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল ও তাঁর ভাই মোবারকের সহায়তায় তাঁদের লাঠিয়াল বাহিনী জলমহালটি থেকে মাছ ধরে নেয়। সমিতির পক্ষে ১৪২৩ বঙ্গাব্দের খাজনা পরিশোধ করলে সাংসদসহ তাঁদের তিন ভাই জলমহালে মাছ ধরতে দেবেন না বলে সমিতির সদস্যদের হুমকি দেন। এ নিয়ে সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করলেও লাভ হয়নি। চন্দন বর্মণের কাছে প্রতিবছর জলমহালটির ফিশিং বাবদ সাংসদ ১০ লাখ টাকা ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে লভ্যাংশের ৬ আনা দিতে বললে তিনি (চন্দন) রাজি হন।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল ও তাঁর আরও দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে ওই ৬৩ জন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সুনই জলমহালের খলাঘরে ঢোকেন। এ সময় মোজাম্মেলের নির্দেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সমিতির সদস্যসহ সেখানে থাকা নারী-পুরুষদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করেন। তাঁরা সমিতির একটি খলাঘরে আগুন ধরিয়ে দেন ও ১০-১৫ মণ জাল আগুনে দেন। এ সময় বাধা দিলে তাঁরা সমিতির সদস্য শ্যামাচরণকে গলা কেটে হত্যা করেন।
এ বিষয়ে চন্দন বর্মণের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সমিতির সহসভাপতি ও নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই মনীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (৫৫) বলেন, ‘আমাদের জলমহালে অবৈধভাবে প্রভাব খাটানো ও সমিতির সদস্যদের নির্যাতনসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঘটনাটি নিয়ে আমরা গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছি। আমার ভাই শ্যামাচরণকে হত্যা, জলমহালের ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৬৩ জনের বিরুদ্ধে শনিবার সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
মোজাম্মেলের মুঠোফোনে শনিবার রাতে একাধিকবার ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সাংসদ মোয়াজ্জেম বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই তাঁকে দোষী বলা যায় না। ঘটনার দিন আমি ধরমপাশায় ছিলাম না। তাই আমার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। হামলা, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে যাঁদের নামই বেরিয়ে আসবে, সে যে কেউ হোক না কেন, একজন সাংসদ হিসেবে নয়, একজন সাধারণ জনগণ হিসেবে আমারও দাবি জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হোক।’
ধরমপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগে যাঁদের নাম রয়েছে, তদন্তের স্বার্থে তাঁদের নাম আপাতত বলা সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার রাতেই সন্দেহজনক ২৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। এঁদের মধ্যে দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। তাই বাকি ২১ জনকে শুক্রবার সন্ধ্যায় ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।