সিলেট প্রতিনিধি:ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলা সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে বলে মন্তব্য করেছেন সিলেটের গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, ‘একের পর এক সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে যে সকল মামলা হচ্ছে, তার সিংহভাগই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এটি একটি কালাকানুন। এতে করে স্বাধীন সাংবাদিকতা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এই আইন বাতিল না করলে দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা বলতে কিছুই থাকবে না।’
সোমবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেটের ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন’ নামের নাগরিক সংগঠন আয়োজিত ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিকবন্ধন’ থেকে বক্তারা এ কথা বলেছেন। সিলেটের স্থানীয় দৈনিক ‘একাত্তরের কথা’ সম্পাদক চৌধুরী মুমতাজ আহমদসহ ১৮ জন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার প্রতিবাদে সংক্ষুব্ধ নাগরিকবন্ধন হয়।
সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এক ঘন্টার নাগরিকবন্ধনে সূচনায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবাদপত্রে কোনো সংবাদ প্রকাশে কেউ অসন্তুষ্ট হতে পারে। মানহানি বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে মনে করা হলে মানহানির মামলা কিংবা প্রেস কাউন্সিলে নালিশ করা যেতে পারে। কিন্তু ওসব না করে একটি সংবাদ সামাজিক যোযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করার অভিযোগ দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা অহেতুক। এই হয়রানিমূলক মামলা দায়েরে করায় ও সেই মামলা গ্রহণ করায় আমরা বিষ্ময় প্রকাশ করছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এমন অপপ্রয়োগে আমরা সংক্ষুব্ধ।
প্রায় এক ঘন্টা নাগরিকবন্ধন চলাকালে গণমাধ্যম কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন নাগরিকেরাও একাত্ম হন। পরিবেশ কর্মী আবদুল হাই আল হাদীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’ সংগঠনের সমন্বয়ক দেবাশীষ দেবু ও নারী উদ্যোক্তা হাসিনা চৌধুরী।
সূচনা বক্তব্যে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল করিম কিম বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি কালো আইন। এই আইন করার সময় দেশের স্বাধীন সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়বে বলে দাবি ছিল বাতিল করার। তখন বলা হয়েছিল, কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করা হবে না। কিন্তু দেশজুড়ে এই আইনে যে সকল মামলা হয়েছে, তার সিংহভাগই সাংবাদিক। তাই এই আইন যে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে হুমকির মুখে ফেলছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আল আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে। আমরা সত্যকে সত্য বলছি, মিথ্যাকে মিথ্যা বলছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশের সময় বলা হয়েছিল এই আইনের অপপ্রয়োগ হবে না। তবে গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধেই এই আইনের অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের অহেতুক হয়রানি করে লাভবান হওয়া যায় না। এই আইনে সিলেটের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকসহ যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। যদি আইনের সঠিক প্রয়োগ হয় তাহলে এই মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হবে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি হয়রানিমূলক উল্লেখ করে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ বলেন, ‘যে কোনো আইন দেশের নাগরিকদের কল্যাণের কথা ভেবে করা হয়ে থাকে। এই আইন নিয়ে প্রবল আপত্তি ছিল। বিশেষ করে সংবাদকর্মীদের হয়রানি করার কারণেই এই আইনটি করা হয়েছে। যে আইনের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ হয়, রাষ্ট্রের কল্যাণ হয়, সেই আইনের পক্ষে আমরা। এই আইন বাতিল করুন, সিলেটে সিনিয়র সাংবাদিকসহ সকল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা হোক। নয়তো সিলেটের সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাবে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৯ নভেম্বর দৈনিক একাত্তরের কথা পত্রিকায় ‘ভয়ে চুপ উপশহর’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ সেলিম বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলার এজহারে অভিযোগ করা হয়েছে, প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। একাত্তরের কথা সম্পাদক চৌধুরী মুমতাজ আহমদ, প্রকাশক মো. নজরুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক সাঈদ চৌধুরী টিপু, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি মোহিদ হোসেন, প্রধান ফটোসাংবাদিক এস এম সুজন, নিজস্ব প্রতিবেদক জিকরুল ইসলামসহ ১৮ জনকে।