ছাতক প্রতিনিধি:সুনামগঞ্জের ছাতকে সরকারী জায়গা থেকে প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন করে যাচ্ছে এক পাথরখেকো। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে সে ওই সরকারী জায়গার মাটি খনন করে পাথর উত্তোলনের পর বিক্রি করে আসছে কালো বাজারে। অথচ প্রতিদিন এর পাশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা যাতায়াত করলেও তাদের নজরে পড়েনি এ পাথরখেকোর অপকর্ম। স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ করলে তাদেরকে উল্টো মামলার হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। আর বলছে পাথর ও জায়গার মালিকের কাছ থেকে অনুমোতি নিয়েই সে পাথর উত্তোলন করছে।
জানা যায়, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ-সিলেট সড়কের একটি স্থানের নাম ঝাওয়ারখাড়া ব্রিজ। ১৯৭১ সালের ৫ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ধাওয়া খেয়ে ওই ঝাওয়ারখাড়া ব্রিজ এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু তারা বেশিক্ষণ এখানে অবস্থান করতে পারে নি। পরবর্তীতে এখান থেকে তারা গোবিন্দগঞ্জ হয়ে ছাতক সীমানা দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পরের দিন
৬ডিসেম্বর ছাতক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। এ ঝাওয়ারখাড়ায় বর্ষায় পানি থাকলেও হেমন্তে চার দিকে পানি শুকিয়ে যায়। এ সুযোগে ব্রিজের নীচ এবং পাশের সরকারী জমি খনন করে সবজি চাষের নাম ধরে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করে আসছে আবদুল মালেক। তার বাড়ি ছিল কুমিল্লা জেলায়। স্বাধীনতার পর স্থানীয় মোহনপুর গ্রামে স্ব-পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। গেল পাঁচ বছর ধরে এ ঝাওয়ারখাড়া ব্রিজ এলাকায় সরকারী জমি থেকে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করে আসছে পাথর খেকো আবদুল মালেক। পাথর জমা করে কয়দিন পর পর রাতের আধাঁরে
ট্রাকভর্তি করে পাথরগুলো অন্যত্রে বিক্রি করছে। পাথর উত্তোলনের কারণে ঝাওয়ারখাড়া ব্রিজটি হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে। পাশাপাশি রায়সন্তোষপুর গ্রামের পশ্চিমের হাওর ও তাদের অর্থে করা ফসল রক্ষা বেরিবাঁধটিও এ পাথর খেকোর কারণে হুমকির মুখে পড়তে বসেছে। প্রকাশ্যে সরকারী জায়গা খনন করে লাখ লাখ টাকার পাথর উত্তোলনের পেছনে তার সাথে কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তি থাকতে পারেন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় সচেতন মহলের।
স্থানীয় রায়সন্তোষপুর গ্রামের শ্রমিকনেতা নানু মিয়া ও মটুক মিয়া এবং ব্যবসায়ী সুমন মিয়া
জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে হেমন্তে যখন ব্রিজ এর নীচ ও আশপাশ এলাকায় পানি শুকিয়ে যায় তখন ওই
ব্যক্তি মাটি খনন করার যন্ত্র কুঁদাল, শাওইল, ভেলছা হাতে নিয়ে এখানে নেমে পড়ে। পাথর উত্তোলন করায়
জমিটির বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তারা আরও জানান, এ পাথর খেকোর বিষয়টি উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কাছে ফোনে অবহিত করেছেন। পরে ওই দপ্তর থেকে পর পর দুই ব্যক্তি সরজমিন পরিদর্শন করে গেলেও পাথর খেকোর পাথর উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। উপজেলা সওজ বিভাগের অফিসের একটি সূত্রে জানা গেছে, ওই পাথর খেকো ব্যক্তিটি তাদের ঠিকাদারের পরিচিত। জনৈক ঠিকাদার ওই পাথরখেকোর মাধ্যমে সরকারী কাজের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে মাঝে মধ্যে শ্রমিক সংগ্রহ করা হয়। স্থানীয় সচেতন মহলের ধারণা, সওজ অফিসের জনৈক কর্তার ইশারায় এখান থেকে সে প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন করে তাদেরই কোন ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে যাচ্ছে। অবৈধ ভাবে পাথর বিক্রির টাকার একটি বড় অংশ কোন অসাধূ কর্মকর্তার পকেটস্থ হচ্ছে। দিনে-দুপুরে সরকারী জায়গায় পুকুর চুরির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরজমিনে দেখে গেলেও পাথর খেকোর বিরুদ্ধে কোন ধরণের আইনী প্রদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রায়সন্তোষসহ আশপাশ এলাকাবাসী অসন্তোষ। এ বিষয়ে সওজ বিভাগের ছাতক উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) মাছুম সিদ্দিকির মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেন নি। তবে এ বিভাগের কার্য-সহকারী গোলাম মাওলা জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন এবং পাথর উত্তোলনে নিষেধ করে এসেছেন।